unnamed

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ জুন ২০১৫: সরকার দেশের প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে তাদের লুটপাট তন্ত্রে পরিণত করেছে অভিযোগ করে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ঝুঁকিমুক্ত ছিল। আর এখন প্রতিটি ব্যাংকে ডাকাত পড়েছে। চলছে সরকারের মদদে হরি লুট। শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সরকার দেশের প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে তাদের লুটপাট তন্ত্রে পরিণত করেছে। অনির্বাচিত সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য অনির্বাচিত সরকারের একটা বড়মাপের ভুমিকা রয়েছে।’’ দেশের ব্যাংকিখাতে বিশেষ করে রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকসমূহে মূলধন আমানতের সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘‘ সোনালী, জনতা ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলো এই সরকারের আমলে হরিলুটের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গত ৭ বছরের আমাদের ব্যাংকিখাত ঝাঝরা অর্থাৎ ফোকলা করে দেয়া হয়েছে।

‘‘ অর্থমন্ত্রী এসব দেখেও চোখ বুঝে সহ্য করছেন। সাংবাদিকরা যখন দৃষ্টি আকর্ষন করেন, তখন তিনি বলেন, ওরা ডাকাত। আমরা প্রশ্ন হচ্ছে- ওইসব হরিলুটকারী ডাকাতদের ধরার দায়িত্ব কার? ওদের ধরার দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীর। এজন্যই আমি বলছি, অর্থমন্ত্রী ভোকাস। একদিকে অর্থমন্ত্রী তাদের (হরিলুটকারীদের) ডাকাত বলছেন, অন্যদিকে ওদের ধরতে পারছেন না। সমস্যাটা কোথায় ? আমরা সুস্পষ্টভাবে তার কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করছি।’’রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকের মূলধন আমানতের বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নতুনভাবে পূনঃনিয়োগেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিপন।

রিপন আরো বলেন, আর্থিক খাতের এই অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো প্রকার কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং তাদেরকে অন্যান্য ব্যাংকে নতুন করে পরিচালনা পরিষদ বোর্ডের জন্য নিয়োগ দিচ্ছে। যা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কাম্য হতে পারে না।

 প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এরকম বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াত ইসলামকে ছাড়ার বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো চাপ অনুভূত হয় না , ‘‘ আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, জাতীয়তাবাদী দল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি তার দর্শন ও আর্দশের ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হয়। এটাকে জামায়াত নির্ভর দল যিনি বলেছেন, এটা তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি নিজস্ব মূল্যায়ন হতে পারে।’’

জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপ আছে- এরকম প্রশ্নের জবাবে রিপন বলেন, ‘‘ আমি এরকম কথা শুনি নাই।’’ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দলের মুখপাত্র বলেন, ‘‘ জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট হচ্ছে- গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের জন্য। আমাদের দলের রাজনীতি, জামায়াতের রাজনীতি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি(আন্দালিব রহমান পার্থ) দলসহ বিভিন্ন দলের রাজনীতি ও দর্শন ভিন্ন।  রিপন বলেন, আমাদের জোটে সাম্যবাদী দলও আছে। তার অর্থ কি আমরা সবাই সমাজতন্ত্রী হয়ে যাচ্ছি। জোটের দলগুলো তারা তাদের নিজস্ব রাজনীতি করছে। আমরা আমাদের রাজনীতি করছি। এখানে ছেড়ে দেয়া, রাখা বা ধরার বিষয় নয়।’’‘‘ সুতরাং বিএনপি একটি বৃহ জনপ্রিয় দল। আমরা শহীদ জিয়ার আর্দশে রাজনীতি করি।’’

তিনি বলেন,‘‘ এব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই পরিস্কার। বিএনপি অ্যাবসেলুইটলি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আর্দশ ও দর্শনের ওপর পরিচালিত হচ্ছে। তার রাজনীতি হচ্ছে আমাদের দলের মূলনীতি। এই মূলনীতির ওপর ভর করে বিএনপি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভুমিকা পালন করেছে, করছে ও ভবিষ্যতেও করবে।’’ রিপন আরো বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট গণতান্ত্রিক ও ভোটের। এ জোট সম্পূর্ণ কৌশলগত। প্রত্যেকেই নিজস্ব রাজনীতি করে । বিএনপি জিয়াউর রহমানের  দর্শনের রাজনীতি করে।

( শুক্রবার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী একেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুলের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসে সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি দুইটি পর্য়ায় পেরিয়ে এখন তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপটি ছিলো জিয়াউর রহমানের রাজনীতি। এরপর আসলো খালেদা জিয়ার রাজনীতি। মন্তব্য নিশ্প্রয়োজন। এখন তৃতীয় থাপে আছে, জামায়াত নির্ভর খালেদা জিয়ার রাজনীতি।  “এই ধাপটি বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না। চতুর্দিকে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ একটু বেশি। তাই চতুর্থ ধাপ আসতে বাধ্য, যখন আবার ঘুরে ফিরে জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে।” )

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে তার তত্ত্বাবধানে বিএনপির প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় দলের মহাসচিব ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে বিকালে এই সংবাদ ব্রিফিং হয়।

দলের মূখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো- বর্তমানে বিএনপিতে কী জিয়াউর রহমানের আদর্শ উপস্থিত আছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ জিয়াউর রহমানের আর্দশ হচ্ছে- পার্টির নীতি, এটাই বেইসলাইন। এ থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।’’আজকের প্রেক্ষাপট কী তা বলে ? উদারহরন দিয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘‘ কেনো বলবে না। আজকে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টিতে আমাকে ছাতা নিতেই হবে। আপনাকে যদি বলি শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগকেই দেখতে চাননি। উনি দেখতে চেয়েছিলেন বাকশাল। উনি দেখতে চেয়েছিলেন, রাষ্ট্রের মালিকানাধীন নিয়ন্ত্রিত ৪টি পত্রিকা এবং একটি টেলিভিশন- বিটিভি থাকবে। আজকে বাস্তবতার প্রয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়ার সরকার যখন ক্ষমতায় তখন পলিটিক্যাল পার্টিজ রেজ্যুরেশন প্রতিষ্ঠার আওতায় সেই পিপিআর এর অধীনেই আওয়ামী লীগ বাকশাল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করছে।’’ ‘‘ তারা যে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি করতেন, তারা যে রাষ্ট্রায়াত্ব মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের নীতিতে বিশ্বাস করতেন, এখন কী আওয়ামী লীগ সেই নীতিতে বিশ্বাস করে। এখন তারা মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বেসরকারিকরণকে আরো উৎসাহিত করে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবমুক্ত করে দিচ্ছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘ এখন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আছে, ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়া উচিত। যদিও তারা ভোটে অংশগ্রহন করেনি। এই আমলে দেখেছি- বিএনএফ‘র মতো দল কিছু রাজণৈতিক দল তারা সৃষ্টি করেছে। সুতরাং শেখ মুজিব আর্দশ ধরে থাকলেও তো আওয়ামী লীগই থাকতো না, থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন হচ্ছে- একদল, এক নেতা জাতীয়করণ। সুতরাং তারা (আওয়ামী লীগ) তো বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন থেকে সরে গেছে। এটাই বাস্তবতা।’’  বিএনপি প্রসঙ্গে রিপন বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ছিলো। বাস্তবতার প্রয়োজনে আমাদের বর্তমান পার্টি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার মানে এই নয়, যে শহীদ জিয়াউর রহমানের রাজনীতি থেকে উনি সরে যেতে চান।’’ সংবাদ ব্রিফিঙে অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, শামসুল আলম তোফা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।