দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ জুন: বিএনপির সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কট দুর্ভাগ্যজনক। এমন মন্তব্য করে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ত্র“টি তদন্ত না করা লজ্জাজনক। তিনি বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের একমাত্র পূর্বশর্ত নয়। এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও গুরুত্বপূর্ণ।গণতন্ত্র হচ্ছে, প্রতিদিনের জবাবদিহিতা।বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়েজিত ডিকাব টক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
ঢাকা দুই সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপির বয়কটকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন। গিবসন বলেন, নির্বাচনই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত নয়, এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ।বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ভিন্ন ভিন্ন— উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবেন তারা কেমন গণতন্ত্র চান।সম্প্রতি বিএনপির সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনকে দুঃখজনক— মন্তব্য করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এদেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ব্যাহত হলেও বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে। যা এদেশের জন্য ইতিবাচক।সকলের সঙ্গে বন্ধুতা, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ পররাষ্ট্রনীতিকে উত্তম উল্লেখ করে গিবসন, গণতন্ত্র শুধু ভোটে নয়, একেক দেশে একেক রকমের বিশ্লষণ রয়েছে।বাংলাদেশের জনগনকে নির্ধারণ করতে হবে, কেমন গণতন্ত্র চান তারা বলেও জানান তিনি।এসময় তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ব্লগার হত্যার বিষয়েও কথা বলেন। ব্লগার হত্যাকারীদের ছাড় না দেয়ার বিষয়ে মত দেন তিনি।একইসঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকেও এগিয়ে আসার আহবান জানান গিবসন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন বলেন, বাংলাদেশে যারা মুক্তমত প্রকাশের চর্চা করেন তাদের কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক এবং উদ্বেগের।তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথসহ অনেক বৈশ্বিক ফোরামের সদস্য বাংলাদেশ। এই ফোরামগুলোর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, ধৈর্য্য, শ্রদ্ধা এবং সহিষ্ণুতার সঙ্গে দ্বিমতকে মোকাবিলা ও জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি বৃহত্তম রাষ্ট্র। বাংলাদেশকে মানুষের অধিকারের এই মৌলিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে এবং বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে, মন্তব্য করেন তিনি।ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শতভাগ শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপরও জোর দেন তিনি।গিবসন বলেন, বাংলাদেশকে শিক্ষা এবং উন্নয়ন এই দুইটি খাতে জোর দিতে হবে। শিক্ষা এবং উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশ প্রগতি ও শান্তির পথে এগুতে পারে না। আশা করব বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে গিবসন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন সকালের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলাম। কিন্তু তারপর পরিস্থিতি অনেক পাল্টে যায়। অনিয়মের অভিযোগে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ত্রুটি তদন্ত না করা লজ্জাজনক। নির্বাচনের অনিয়মের সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে তদন্ত না হলে এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা না হলে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্থ হবে।বাংলাদেশের গণতন্ত্র কী অবস্থায় আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট অনুষ্ঠান নয়। বিভিন্ন দেশ তাদের মতো করে গণতন্ত্র চর্চা করে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে যে তারা কেমন গণতন্ত্র দেখতে চান। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কিন্তু ওই নির্বাচন বয়কট করে রাজনৈতিক এই দলটির কী অর্জন হয়েছে তাও দেখার বিষয় রয়েছে।বিদেশি বিনিয়োগ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। ন্যায় বিচার, গণতন্ত্রের চর্চা এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার থাকতে হবে।যুক্তরাজ্য টেকসই গণতন্ত্রের জন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনাকে উৎসাহিত করে।গিবসন আশা করেন, নির্বাচিত মেয়ররা তাদের কাজের মাধ্যমে ঢাকাকে আদর্শ নগরীতে পরিণত করবেন।
সম্প্রতি, অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেন নির্বাচন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন সকালে পর্যবেক্ষণের পর সুষ্ঠু পরিবেশের কারণে আমি স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক সারাদিন সেই সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় থাকেনি। দুপুরের দিকে বিএনপিও নির্বাচন বর্জন করে।এরপরেও আমরা আশা করেছিলাম, যে সব ইস্যুতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেসব বিষয়ে তদন্ত করবে। কিন্তু সেটি পরে আর করা হয়নি; যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রশংসাও করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এ দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত হলেও মানুষ গণতন্ত্রেরই পক্ষে; যা বাংলাদেশের জন্য খুব ইতিবাচক।সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে হাইকমিশনার গিবসন বলেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতা রয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা আর দায়িত্বশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।সংগঠনটির সভাপতি মাসুদ করিম ও সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ এ সময় উপিস্থত ছিলেন।