11-06-15-Sylhet_Rain-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ জুন: পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষা আসতে তিনদিন বাকি থাকলেও বুধবার থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট মহানগরীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিতে নগরীর অন্তত ৫০টি এলাকায় পানি জমে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী।আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায় সিলেটে ২৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ।

আর নগরীর ছড়া ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরীর উপশহর, সোনারপাড়া, মিরাবাজার, যতরপুর, রায়নগর, ছড়ারপার, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, দাড়িয়াপাড়া, লামাবাজার, ভাতালিয়া, বিলপাড় এলাকা বৃষ্টির পানিয়ে তলিয়ে গেছে।এছাড়া নগরীর সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া, হাউজিং এস্টেট, জালালাবাদ, লোহারপাড়া, বাগবাড়ি, কুয়ারপার, চারাদিঘীরপাড়, রায়হোসেন, হাওয়াপাড়া, কলবাখানি, কুয়ারপাড়, কাজলশাহ, পাঠানটুলা, খোজারখলা, ভার্থখলা, মেনিখলা, বারখলা, পাঠানপাড়াসহ নগরীর অন্তত ৫০টি এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে।এসব এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোথাও সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। কোনো কোনো এলাকায় বাসা বাড়িতেও পানি উঠেছে।

রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। কোথাও হাঁটু জল, আবার কোথাও কোমর পানি ভেঙে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে।স্থানীয়রা বলছেন, নগরীর নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিভিন্ন ছড়া-খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বর্ষাতেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে।তারা বলছেন, সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় ১১টি ছড়া ও খাল দিয়েই বর্ষার পানি নিষ্কাশন হয়। এর মধ্যে রয়েছে ধুবড়ি ছড়া, গুয়ালি ছড়া, মালনী ছড়া, ভূবি ছড়া, বারুতখানা ছড়া, মির্জাজাঙ্গাল ছড়া, কেওয়া ছড়া, বৈঠা ছড়া, গাভিয়াল খাল, রত্মারখাল ও বাবুর ছড়া।এক সময় এসব ছড়া দিয়ে বর্ষা মৌসুমে বড় বড় নৌকায় মানুষ দূর-দূরান্তে যাতায়াত করত। কিন্তু এখন কোনো কোনোটির অস্তিত্ব এখন কেবল সিটি করপোরেশনের মানচিত্রে। বাকিগুলো ভরাট হয়ে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।ছড়া ও খালের উভয় পাশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা।

অনেকে আবার পুরো ছড়া ভরাট করে দালান তুলেছেন।ফলে এবার বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নগরীর বাসিন্দারা। খোজারখলা এলাকার বাসিন্দা জুমাদিন আহমদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ছড়া উদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে তড়িঘড়ি করে ছড়া সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সেই কাজ শুরুর আগেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ তোড়জোড় নগরবাসীর কোনো কাজে আসে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।ছড়া-খাল দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসন সিলেট সিটি করপোরেশন বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ করলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। এর কারণ হিসাবে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নূর আজিজুর রহমান দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করেছেন।তিনি বলেন, নগরীর ছড়া সংস্কারের জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ করেছে করপোরেশন।এছাড়া নগরীর ৫৬৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪৭৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে।

প্রকৌশলী আজিজুর বলেন, এখনও করপোরশন জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া খননের কাজ করছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা হচ্ছেই। আসলে দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধান করতে দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা দরকার।এদিকে, সকালে কড়কড়ে রোদ। তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু হঠাৎ আকাশ ছেয়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। নেমে আসে মুষলধারে বৃষ্টি। মৌসুমী বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত থেমে থেমে কয়েকদফা বৃষ্টিপাত হয়। বিকেল তিনটা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর চট্টগ্রামের আমবাগান কার্যালয়।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্তব্যরত কর্মকর্তা বিজন রায় বলেন, অনেকদিনের অনাবৃষ্টির কারণে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি আকারের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে ভারী বর্ষণ হতে পারে।এদিকে মুরাদপুর, ২নং গেইট, ওয়াসা মোড়, হামজারবাগ, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর, হালিশহর, আগ্রাবাদ কে ব্লক, প্রবর্তক, কাপাসগোলা, চকবাজারসহ নগরীর কয়েকটি নিচু এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃৃষ্টি হয়েছে। চার ঘণ্টার বৃষ্টিতে কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি জমে গেছে।জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। বৃষ্টি আর সড়কে জমে থাকা পানির কারণে অফিস ফেরত লোকজন ও স্কুল ফেরত শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন। বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়েও গাড়ি পাননি ঘর ফেরত লোকজন। গাড়ি পাওয়া গেলেও উচ্চ ভাড়া হাঁকছেন চালকরা।জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নগরবাসী।