Rajshahi City Mango News 10-6-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১০ জুন: রাজশাহীর সর্বত্রই এখন আম আর আম। হাটে, মাঠে, পাড়ার অলিগলিতে, পথে-প্রান্তরে, বাগানে-বাগানে শুধুই আম। এরইমধ্যে বাজার থেকে গোপালভোগ ও মোহনভোগ বিদায় নিতে শুরু করলেও তাদের স্থলে আসছে ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, লখনা, রাণীপছন্দ, আম্রপলি, রাণীপ্রসাদসহ বাহারি নাম ও স্বাদের আম। এসব আমের বিরামহীন বেচাকেনা চলছে প্রাচীন এ জনপদে। গাছ থেকে আম নামানো ও বাজারজাতকরণ কাজের ব্যস্ততায় ফুরসত নেই এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।

রাজশাহীতে এবার স্বাদের আমে ‘লোভের থাবা’ বসাতে পারেনি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাই অপরিপক্ক আমে কেমিক্যালের মিশ্রণ নয়, এবার উপযুক্ত সময়ে পাকা আমে ভরে উঠেছে প্রতিটি বাজারের ঝুঁড়ি। আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী জুড়ে এখন আমেরই রাজত্ব। ৫ জুনের আগে গাছ থেকে অপরিপক্ক আম না নামানোর নিষেধাজ্ঞা ছিল জেলা প্রশাসনের। ফলে এতদিন অপেক্ষায় ছিলেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে গাছ থেকে আম ভাঙার কারণে চাঙা হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।

কেবল হাট-বাজার নয়, আমকেন্দ্রীক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও। রাজশাহী অঞ্চলের দু’টি বড় আমের মোকাম রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে দুই কোটি টাকার আম। আমের কারবার নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থানও হয়েছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের পরও জুনের পুরো মাস জুড়েই চলবে ‘আম বাণিজ্য’। তাই গাছের আম নামানোর পারদর্শী থেকে আম চালানের ঝুঁড়ি বানানো এবং বাজারগুলোতে নানা সহায়ক কাজে নিয়োজিত লোকজনের কর্মসংস্থানে গ্রামীণ জনপদ ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

আম বাণিজ্যের কারণে অর্থবছরের শেষ দিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও বেড়েছে লেনদেনের হার। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার পুঠিয়ার বানেশ্বরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষিতে এখন মুখরিত থাকছে রাতদিন।এ ছাড়াও নগরের সাহেব বাজার, শালবাগান বাজার, শিরোইল বাস টার্মিনাল, বিন্দুর মোড়, বাঘা, চারঘাটসহ প্রতিটি উপজেলার বাজারে জমে উঠেছে আম ব্যবসা। উৎপাদন বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, এবার রাজশাহীতে অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।

Rajshahi City Mango News 10-6-15 (2)রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা ভায়ালক্ষ্মীপুর গ্রামের আমচাষি নূরুল আমিন বলেন, সাত সকালে উঠেই গাছ থেকে আম পাড়তে শুরু করি। এরপর ওজন করে ঝুঁড়িতে নিয়ে ওইদিনই পাঠিয়ে দেই পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে। ‘বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত আমের খাঁচি তৈরি, সাজানো ও বাঁধাইকাজে প্রতিদিন বাগানে ২০ জন লোক কাজ করছেন’ বলে জানান তিনি। পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে আমের রাজা বলে পরিচিত গোপালভোগ প্রায় শেষ। যাদের কাছে আছে তারা প্রতিমণ ২৩ থেকে ২৪শ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ সপ্তাহে ওঠা ক্ষীরসাপাত ১৭শ’ থেকে ১৮শ’, ল্যাংড়া ১৫ থেকে ১৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন গুটি জাতের আম বিক্রি করা হচ্ছে মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। টানা তাপপ্রবাহ একটু কমলে এবার রাজশাহীতে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে জানান তিনি। হাটের অপর ব্যবসায়ী ফরিদ শেখ জানালেন, পুঠিয়া উপজেলার এ বাজারে দুর্গাপুর, বাঘা এবং চারঘাটের বিভিন্ন বাগান থেকে আম আসছে। এর বাইরে পবা, মোহনপুর, বাগমারা এবং পাশের জেলার নাটোর থেকেও প্রচুর আম আসে, তাই যথেষ্ট আমদানি থাকে। এখান থেকে পাইকাররা আম কিনে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ নানা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে এবার একসঙ্গে সব বাগান থেকে আম ভাঙা হচ্ছে এবং বাজারে পাঠানো হচ্ছে। তাই দাম অনেকটাই কম। তবে বিভিন্ন মোকামের পাইকাররা ঢুকলে কয়েকদিনেই দাম বাড়বে বলে জানান তিনি। রাজশাহী ট্রাক ও ট্যাংকলড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা সাদরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ ট্রাক আম পাঠানো হয় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতি ট্রাকে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ ক্যারেট (প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি) আম পাঠানো হয়।

এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে আমচাষিরা ভ্যান, ভটভটি, নসিমন, করিমনসহ স্থানীয় বাহনে করে আম নিয়ে বাজারে উপস্থিত হন। সব আম জমা হয় আড়তে। আড়ত থেকে পাইকার ও চালানি ব্যাপারীরা নিয়ে যান। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হযরত আলী বলেন, এ বছর রাজশাহীতে আমের আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে গত বছরের উৎপাদন অর্থাৎ দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। টানা তাপদাহে আমের ফলন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় আড়ইশ’ জাতের আম উৎপন্ন হয়। বাজারে প্রথমেই উঠে বিদায় নিতে চলেছে গোপালভোগ ও মোহনভোগ। বর্তমানে ক্ষীরসাপাত, রাণীপ্রসাদ, ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে লকনা, লক্ষণভোগ, দুধসরসহ বিভিন্ন জাতের আমে ভরে উঠবে। এরপর চলতি মৌসুমের আকর্ষণীয় ফল ফজলি এবং সর্বশেষ বাজারে ঝুঁড়িতে উঠবে আশ্বিনা আম।