দৈনিকবার্তা-কক্সবাজার, ১০ জুন: দেশে ফিরিয়ে আনা ১৫০ অভিবাসীর স্বজনদের কাছে ফেরার প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। দেশে প্রবেশের দু’দিন পর আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুধবার বিকেল থেকে তাদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফিরিয়ে আনাদের মাঝে প্রাপ্ত বয়সী ১২২ জন ঘরে ফিরছে নিজ জিম্মায়। আর ২৪ কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সংস্থার সহায়তায় এসব কিশোর নিজ ঘরে ফিরবে। তবে সাগরপাড়ি, বন্দি ও শরনার্থী জীবন একসাথে পার করলেও অন্যদের সাথে ঘরে ফেরা হচ্ছে না ৪ হতভাগার। দু’জন বিদেশী ও অপর দু’জন মামলার আসামী হিসেবে সনাক্ত হওয়ায় তাদের ভাগ্য থেকে বন্দি জীবনের কালো ছায়া কাটানো যায়নি। এ ৪ জন পুলিশ হেফাজতে থেকে গেছে। বুধবার কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে ১২২ জনকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অপর ২৪ জন শিশু। যাদের বয়স ১৯ বছরের নিচে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সংস্থার সহায়তায় তারা ঘরে ফিরবে অথবা স্বজনরা এসে তাদেরকে নিয়ে যেতে পারবেন।জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ফিরিয়ে আনাদের মাঝে দু’জন বিদেশি নাগরিক ও দু’জন বিভিন্ন মামলার আসামী হিসেবে সনাক্ত হয়েছে। তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয়েছে।এদিকে বিদেশি হিসেবে সনাক্ত দু’জনের মাঝে মোহাম্মদ হামিদ (৩২) মানবপাচারকারী দালাল বলে জানাগেছে। এদেরকে বিদেশী বলঅ হলেও তারা কোন দেশের তা স্পষ্ট করেননি জেলা প্রশাসক। তাদের দেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তাদের ব্যাপারে আরও যাচাই-বাছাই চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ফিরিয়ে আনা ১৫০ জন দেশের ১৭ জেলার বাসিন্দা। পাচারের শিকার ব্যক্তিরা জেলা পর্যায়ে মানবপাচার আইনে মামলা করবে। কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান আবুল হোসেন জানান, ফিরিয়ে আনা ১৫০ জনের একজন চকরিয়ার বাসিন্দা একরাম হোসেন বাদী হয়েছে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার রাত ১টায় অজ্ঞাতনামা ২০ দালালকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আসিফ মুনীর জানান, ১৫০ অভিবাসীর দেশে আসার বিষয়টি আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে গেছে। তাই তাদের সঠিক গন্তব্য নিশ্চিত করতে প্রশাসন সুনিপূণ তদারক কার্য চালিয়েছে। এ কারণে দেশে আনার পরও স্কজনদের কাছে ফিরতে দু’দিন প্রতীক্ষা করতে হয়েছে এসব অভিবাসীদের।
তিনি আরো জানান, জীবনবৃত্তান্তসহ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে বুধবার বেলা ২ টার দিকে ১৮ এর নিচের বয়সী ২৪ কিশোরকে কক্সবাজার চীফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখান থেকে তাদের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংস্থার পক্ষে কক্সবাজারস্ত সহ-সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, সাধারণ সম্পাদক আবুহেনা মোস্তফা কামালসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। নুরুল আবছার বলেন, ঠিকানা অনুযায়ী সকল কিশোরকে নিজ ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছে সংস্থা। চাইলে কোন স্বজন এসে তাদের গ্রহণ করে নিয়ে যেতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।