Rajshahi Hsc Couchin centre News 10-6-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১০ জুন: রাজশাহী মহানগরীতে চলছে লাগামহীন কোচিং বাণিজ্য। মহানগরীতে ভবন ভাড়া করে বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে এসব কোচিং সেন্টার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পাড়া মহল্লায় প্রায় সব জায়গায় তাদের বিভিন্ন ধরনের চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন দেখা যায়। যেমন, শতভাগ পাসসহ ‘এ’ প্লাস প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। তাদের এসব বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকটাই কোচিং নির্ভর হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

শুধু তাই নয় কোচিংয়ের নামে ভবন ভাড়া করে চলছে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড। গত ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার নগরীর ঘোষপাড়া মোড়ের রেটিনা কোচিং সেন্টার থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদি বইসহ ১৩জনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। কিছুদিন আগে রাজশাহীর অ্যাডমিশন চ্যালেঞ্জ নামের একটি কোচিংয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট আটকে রেখে টাকা দাবির অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তানোর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা এক শিক্ষার্থী প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নগরীর স্কুল কলেজ এমনকি ভবন ভাড়া নিয়ে চলছে কোচিং সেন্টারের ক্লাস। নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ভবনের দেয়ালগুলো ছেয়ে গেছে পোস্টার আর ফেস্টুন এবং বিশাল আকৃতির বিজ্ঞাপনে। আর এসব বিজ্ঞাপনের

কারণে নগরীর ভবন ও দেয়ালগুলো হারাচ্ছে সৌন্দর্য, এমনকি ছাড় পাচ্ছেনা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালও। তাছাড়াও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের শুধু কোচিংয়ের জন্য খরচ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। মহানগরী জুড়ে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক কোচিং সেন্টার। প্রতিমাসে শিক্ষার নামে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কোচিং সেন্টারগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যদিও বা কোচিং সেন্টারের পড়া লেখার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, শিক্ষার্থীদের কোচিং এর প্রতি আগ্রহের ফলে স্কুল ও কলেজগুলোতে কমে যাচ্ছে প্রতিদিনের উপস্থিতি সংখ্যা। শুধু তাই নয় সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও কোচিং ব্যবসায় মেতে উঠেছেন। সরকার ২০১২ সালের জুন মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়ে নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালা জারির পর শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য এখন অনেকটা বৈধ হয়ে গেছে। নীতিমালায় কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপারে যে নির্দেশনা রয়েছে, তার অপপ্রয়োগ হচ্ছে।

গাইড ও নোটবই এবং প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে কঠোর বিধান রেখে দেশে প্রথমবারের মতো যে খসড়া শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হয় সেখানে বলা হয় কোনো শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবে না। আর অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনকে কোচিং করাতে পারবেন। তবে তা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে। এই নীতিমালা ভঙ্গের জন্য চাকরিচ্যূতিসহ নানা শাস্তিরও বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে এ আইন লঙ্ঘনে ধারা বিশেষে সর্বনি¤্ন ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও সর্বনি¤œ ৬ মাস থেকে এক বছর জেল অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

এরপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না কোচিং ব্যবসা বাণিজ্য। অপরদিকে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট তদারকি না থাকায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে। এব্যাপারে রাজশাহী রাজস্ব অঞ্চলের উপকমিশনার ওয়াকিল আহমেদ জানান, মহানগরীতে প্রায় অনেক কোচিং গড়ে উঠলেও সুনির্দিষ্ট কোচিং সেন্টারের তালিকা নেই আমাদের কাছে। তবে কিছু সংখ্যক কোচিং আমাদের রাজস্ব দেয়। তবে খুব শীঘ্রই নতুন কোচিংগুলোকে রাজস্ব বিভাগের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।