High-Court

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১০ জুন:  মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নীতিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।বুধবার আইনজীবী ইউনুস আলী আকন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন।এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মেধা তালিকার ভিত্তিতে নয় পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তি করাতে হবে কারণ সরকারের এ নীতিমালা সংবিধানের কয়েকটি ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।এর আগে গত ১ জুন মেধা তালিকার ভিত্তিতে কলেজে ভর্তির জন্য নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালার ৩.১, ৪.১, ৪.২, ৫.৩, ৯.১, ও ৯.৩ এ ছয়টি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন হলিক্রস, নটর ডেম ও সেন্ট জোসেফ কলেজের তিন অধ্যক্ষ।নীতিমালার ৩.১ ধারায় বলা হয়েছে, ভর্তির জন্য কোনো বাছাই বা ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না। কেবল শিক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে।৪.১ ধারায় বলা হয়েছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন অথবা টেলিটকে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। ৪.২ ধারায় বলা হয়েছে, আবেদন ফি ১৫০ টাকা, একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৫ কলেজে পছন্দক্রম দিতে পারবে। অনলাইনে একবার আবেদন করতে পারবে। প্রতি কলেজের জন্য আবেদন ফি ১২০ টাকা।৫.৩ ধারায় বলা হয়েছে, এসএমএস প্রাপ্তির পর মেধাক্রম অনুসারে কলেজের নোটিশ বোর্ড বা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। কোনো কারণে আসন শূন্য হলে বোর্ডের পছন্দ অনুসারে ২য় মেধাক্রম পড্রকাশ করতে হবে।

৯.১ ধারায় বলা হয়েছে, সব কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। ৯.৩ ধারায় এ নীতিমালা না মানলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।প্রসঙ্গত: শুনানি শেষে সোমবারআদালত এই তিন কলেজের জন্য নীতিমালার কার্যকারিতা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন। এছাড়া এ ছয়টি ধারা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েও চার সপ্তাহের রুল জারি করেন আদালত। বুধবার এ রিট আবেদনটি দায়ের করেন হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম খানকে এ রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।আগামী রোববার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, মেধা তালিকার ভিত্তিতে নয়, পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তি করাতে আমি রিট আবেদনটি করেছি। কারণ একাদশে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের করা এ নীতিমালা সংবিধানের কয়েকটি ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।এদিকে, ঢাকার তিন কলেজে মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির নিয়ম স্থগিত করে দেওয়া হাই কোর্টের আদেশ চ্যালেঞ্জ করেও আদালতের সায় পায়নি সরকার।এর ফলে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশই বহাল থাকছে এবং নটরডেম, হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফ কলেজে পরীক্ষার মাধ্যমে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে কোনো বাধা থাকছে না বলে ওই তিন কলেজ কর্তৃপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন।

বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতেই একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম রেখে গত ১ জুন নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে ৬ জুন থেকে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রমও শুরু হয়।এরপর নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিয়াস রোজারিও, হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার শিখা গোমেজ এবং সেন্ট জোসেফ কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশন মন্ত্রণালয়ের ওই নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র ভর্তির জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেন।২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার ছয়টি ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয় তাদের রিট আবেদন।সোমবার এ বিষয়ে শুনানি করে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের অবকাশকালীন বেঞ্চ ওই তিন কলেজের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়।ওই নীতিমালার ছয়টি ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহিভূর্ত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করে হাই কোর্ট।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালতে আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষে এ বিষয়ে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।অন্যদিকে তিন কলেজের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন শুনানিতে অংশ নেন।শুনানির পর তানিম হোসেইন বলেন, চেম্বার বিচারপতি নো অর্ডার দিয়েছেন। এর ফলে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশই বহাল থাকল।তিন কলেজে পরীক্ষা নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।ওই নীতিমালার ৩.১ ধারায় বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য কোনো বাছাই বা পরীক্ষা হবে না। এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে।