দৈনিকবার্তা-নাটোর, ০৯ জুন: গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে বিপর্যস্ত জীবনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে মধুমাসের রকমারী ফল। বাজারে নানান ফলের পসরা নাগরিক জীবনে এনে দিয়েছে উৎসবের আমেজ। জামরুল শেষ হয়ে বাজারে এখন আম, লিচু, তাল আর জামের প্রচুর সরবরাহ। কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে কাঁঠাল। মধুমাসের এমনই চিত্র নাটোরে।গ্রীষ্মের ফল উৎপাদনে উত্তরবঙ্গের রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য। উত্তরবঙ্গের মধ্যভূমির অবস্থানে থেকে নাটোরও এই ঐতিহ্যের ধারক। গ্রীষ্মকালীন ফল নাটোরের অন্যতম অর্থকরি উৎপাদন। লাভজনক বলে এলাকার মানুষ ফল উৎপাদনে অনেক সচেতন। তাই বিগত সময়ে নাটোরে ফলের আবাদী জমি ও ফলন- উভয়ই বেড়েছে।নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরে জেলায় তিন হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে ৩৮ হাজার ৩৯০ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছর আমের আবাদী জমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯০ হেক্টর। এতে ৪৪ হাজার ৯৯০ টন ফলন হবে বলে আশা করছে ডিএই।
সূত্র জানায়, গত মৌসুমে জেলায় ৬০৮ হেক্টর জমি থেকে ২ হাজার ১৪৯ টন লিচু উৎপাদন হলেও চলতি মৌসুমে ৬২৮ হেক্টর আবাদী জমি থেকে প্রায় আড়াই হাজার টন লিচু উৎপাদন হবে। গত মৌসুমে ১৪১ হেক্টর জমি থেকে জামের ফলন পাওয়া গিয়েছিল ৫৯২ টন। এবার ১৪৮ হেক্টর আবাদী জমি থেকে আশা করা হচ্ছে ৬২৫ টন জাম উৎপাদন হবে। গত মৌসুমে ১৫২ হেক্টর আবাদী জমি থেকে ২ হাজার ১০৯ টন তাল পাওয়া গেলেও এবার ১৫৩ হেক্টর জমি থেকে আশা করা হচ্ছে ২ হাজার ১২২ টন তাল।গত মৌসুমে ১৮ হেক্টর জমি থেকে ৬১ টন জামরুল পাওয়া গেলেও এবার তা বেড়ে দাঁড়াবে ৮৫ টনে। গত বছর ৪২০ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ২০০ টন কাঁঠাল হয়েছিল। এবার ৪২২ হেক্টরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টন কাঁঠাল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।নাটোরে চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন ভালো। গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলার তমালতলার লিচু প্রসিদ্ধ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব এলাকার লিচু রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। নাজিরপুরের হামলাইকোল এলাকার অভিজাত কৃষক আবুল হোসেনের ২৪ বিঘার লিচুর বাগান রয়েছে। তিনি জানান, এলাকার সব লিচু ব্যবসায়ী মৌসুমের শুরুতেই বাগান বিক্রি করে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে। তিনি বলেন, বাগান বিক্রি করে দেয়া এলাকার দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। বাজারে স্থানীয় জাতের প্রচুর লিচুর সমারোহ রয়েছে।
নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকার আম চাষি আব্দুল গফুর বলেন, নাটোরে এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তুলনামূলকভাবে বাজারে আমের দাম কম। এলাকার ৪০ বছরের আম ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল বলেছেন গাছে কেমিকেল না থাকায় এক সাথে সব আম পেঁকে বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে ।নাটোরে বাজারের আনাচে কানাচে আমের ডালি সাজিয়ে বসেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী কার্ত্তিক বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় জাতের আম গড়ে ৩০ টাকা এবং কালুয়াসহ অন্যান্য আম ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অল্পদিনের মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করবে খেড়সা, ল্যাংড়া, আম্রপালী এবং সবার শেষে ফজলী ও আশ্বিনা।বাজারে তিন চোখের তালের শাস বিক্রি হচ্ছে গড়ে পাঁচ টাকা দরে। জামরুল কমে আসলেও শেষ পর্যায়ে এখন গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবার জামের দাম অনেক বেশী। প্রতি কেজি জাম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। মানুষের গাছ গাছালীর বাগান ও বাড়ির আঙিনায় করমচা, লটকন, ফলসা গাছে ফল ধরছে। মাঝে মধ্যে এসব দেশীয় ফল বাজারে উঠতে দেখা যায়।নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সচেতনতা বাড়ার ফলে নাটোরে রকমারী ফলের আবাদী জমি ও বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এলাকার মানুষেরা ফল থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছেন। গাছ থেকে আম পাড়তে সময়ের বিধি নিষেধ থাকায় নাটোরের আম কেমিকেলমুক্ত বলে তিনি মনে করেন ।