দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ জুন: ওমরাহ এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়ে আর দেশে ফেরেননি প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ। ৫৬টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে এরা সৌদি আরবে গিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে সৌদি আরবের হজ এজেন্সিগুলো।সোমবার সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।ধর্মমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদিআরবের ওমরাহ এজেন্সিগুলো বাংলাদেশের কতগুলো ওমরা এজেন্সির বিরুদ্ধে তাদের ওমরাহ যাত্রীদের দেশে ফিরে না আসার তথা মানব পাচারের অভিযোগ তুলেছে।
মন্ত্রী জানান, এ বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এর ফলে প্রকৃত ওমরা পালনকারীদের ওমরাহ পালন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ সৌদি কর্তৃপক্ষ সাময়িক সময়ের জন্য ওমরা ভিসা ইস্যু বন্ধ রেখেছে।বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী বেশ বিব্রত ও ক্ষুব্ধ বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। এসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাদের লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হবে। তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।তিনি আরো জানান, খুব দ্রুততম সময়ে পুনরায় ওমরাহ ভিসা চালু করার চেষ্ট চলছে। শিগগিরই ওমরাহ ভিসা আবার চালু হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রীর ছেলে জড়িত আছে এমন অভিযোগের কথা জানালে তিনি বলেন, আমার ছেলে জড়িত আছে এমন প্রমাণ এনে দেন। আমি ব্যবস্থা নেবো।পবিত্র হজ ও ওমরাহ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিলেন ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান।এছাড়া মানবপাচারে জড়িত ওমরাহ এজেন্সির বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্তসহ ফৌজদারী আইনে মামলা করার কথাও জানান মন্ত্রী। এ সময় ধর্ম সচিব চৌধুরী বাবুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।ধর্মমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের বেশ কিছু ওমরাহ এজেন্সি বাংলাদেশের ওমরাহযাত্রী ফিরে না আসার কারণে মানবপাচারের অভিযোগ করেছে আমাদের বেশ কিছু ওমরাহ এজেন্সির বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত পাওয়া এজেন্সির সংখ্যা প্রায় ৫৬টি। এসব এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহযাত্রী ফিরে না আসার সংখ্যা ৬ থেকে ৭ হাজার। তবে সৌদি আরব সরকার থেকে কোনো সংখ্যা বা এজেন্সির তালিকা আমরা পাইনি।সৌদি আরবের কাউন্টার এজেন্সিগুলোর ৩/৪টি অভিযোগে বাংলাদেশের জেদ্দার হজ কাউন্সিলর এবং সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া পত্রের মাধ্যমে আমরা এসব তথ্য বিষয়ে অবহিত হয়েছি’ বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।ধর্মমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এর ফলে সৌদি কর্তৃপক্ষ ওমরাহ ভিসা বন্ধ রেখেছেন। প্রকৃত ওমরাহ পালনকারীরা এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
মন্ত্রী জানান, বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে গত ২৮ মে সৌদি আরবের ধর্ম বিষয়ক উপমন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে।পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, আমি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই- যাদের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। দায়ী এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স বাতিলসহ জামানত বাজেয়াপ্ত করবো। মানবপাচারসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ফৌজদারী আইনে মামলা দায়ের করা হবে। আমি আরও বলতে চাই- দায়ী যেই ব্যক্তি হোন, যত শক্তশালী ব্যক্তিই হোন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।ধর্মমন্ত্রী দ্রুত ওমরাহ ভিসা পুনরায় চালু করার জন্য জোর প্রচেষ্টার কথা জানান। বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি সৌদি সরকার দ্রুতই ভিসা চালু করবেন।হজ ও ওমরাহ নিয়ে হজ অ্যাসোসিয়ন অব বাংলাদেশ’র (হাব) নেতার এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর দুর্নীতির সঙ্গে সচিব এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান বলেন, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।