14337

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ জুন: হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সন্দেহভাজন নয়জন সদস্যকে রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ৷ সোমবার তাদের আদালতে হাজির করে খিলগাঁও থানার তিন মামলায় এবং সূত্রাপুর থানার এক মামলায় ৪০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়৷ শুনানি শেষে খিলগাঁও থানার দুই মামলায় ছয়জনকে তিন দিন করে ও অপর একটি মামলায় দুই দিন এবং সূত্রাপুর থানার এক মামলায় সবাইকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত৷খিলগাঁও থানার মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম ইউসুফ হোসেন এবং সূত্রাপুর থানার মামলায় শামসুল আরিফিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷ রোববার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন নয় ‘জঙ্গি’ আটকের দাবি করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)৷ এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়৷ আটকরা নিষিদ্ধঘোষিত হরকাতুল জিহাদ এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে জানায় পুলিশ৷

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন৷আটকরা হলেন- কাজী ইফতেখারুল খালেদ, ফাহাদ বিন নুরুল্লাহ কাসেমী, মো. রাহাত, দ্বীন ইসলাম, আরিফুল করিম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল্লাহ কাসেমী, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. ইয়াসিন আরাফাত৷জাহাঙ্গীর আলম সরকার দাবি করেন, আটকরা ব্যাংক ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল একইসঙ্গে সূত্রাপুর থানার এক মামলায় নয়জনের প্রত্যেককে দু’দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত৷

রাজধানীর বনশ্রী ও সুত্রাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার নবগঠিত বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপের নয় সদস্য সংগঠনের ুঅর্থ সংগ্রহে ছক কষছিলো৷ এ তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)৷ রোববার বিকেল ৩টায় বনশ্রীূ এলাকার একটি বাড়ির গ্যারেজ থেকে গ্রেফতার ছয়জন হলেন কাজী ইফতেখার খালিদ (খালেদ), ফাহাদ বিন নুরুল্লাহ (কাসেমী, কায়েস), মো. রাহাত, দ্বীন ইসলাম, আরিফুল করিম চৌধুরী (আদনান), মো. নুরুল ইসলাম৷ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সুত্রাপুর এলাকার লালমোহন দাস লেন এলাকা থেকে মাওলানা নুরুল্লাহ কাশেমী, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. ইয়াসিন আরাফাত নামের আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়৷এসময় তাদের কাছ থেকে ৫ কেজি বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, ৮টি বোমা, ৬টি চকলেট বোমা, ৪টি চাপাতি, উগ্র মতবাদ সম্বলিত পুস্তক ও সংগঠনের একটি প্রস্তাবিত পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে৷ সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়৷

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্সের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায় জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রথমে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিতে ছয় জঙ্গিকে আটক করা হয়৷ পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুত্রাপুর এলাকা থেকে আরও তিনজনকে আটক করা হয়৷ বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের জন্য তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে উত্তরবঙ্গে ব্যাংক ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলো৷ তাদের দেওয়া তথ্যে বাকিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে৷

ফেতারদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও এবং সুত্রাপুর থানায় বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস আইনে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ডিবি দক্ষিণ বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আহসান হাবীব ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ও পুলিশের বিশেষ শাখার একটি টিম অভিযানটির সমন্বয় করে৷ এদিকে, রাজধানীতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক উগ্রপন্থি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) এক সন্দেহভাজন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ৷ রোববার রাতে বনানী ডিওএইচএস থেকে আটক ফিদা মুনতাসির সাকেরকে (২৫) আটক করা হয়৷ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ এ তথ্য জানান৷

এসময় সাকেরের কাছ থেকে একটি কম্পিউটার সিপিইউ, ৩টি ল্যাপটপ, ৩টি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট, তার ফেসবুকের বন্ধুতালিকা ও আইএস সম্পর্কিত বিভিন্ন বইয়ের প্রথম পাতার স্ক্রিনশট জব্দ করা হয়৷কৃষ্ণপদ রায় বলেন, সাকের বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য জুনুদ আত তাওহীদ ওআল খিলাফা এবং সমপ্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য৷সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করে সংগঠনের সদস্য বাড়ানোর কাজ করে৷তদন্তের স্বার্থে সাকেরের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ৷এর আগে একই রাতে বনশ্রী ও সূত্রাপুর থেকে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নয় সদস্যকে আটকের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ৷গত মাসের শেষ দিকে বারিধারা ডিওএইচএস থেকে আবদুল্লাহ আল গালিব (২৫) নামে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার ছেলেকে আটকের পর জুনুদ আত তাওহীদ ওআল খিলাফা’র নাম প্রথম গণমাধ্যমে আসে৷

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম তখন জানান, গালিব নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের সহ-সমন্বয়ক৷ আগে তিনি হিজবুত তাহরীর ও জেএমবির সঙ্গেও ছিলেন৷সমপ্রতি আইএসের আদলে বাংলাদেশের খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে গালিব জুনুদ আত তাওহিদ ওআল খিলাফা’ গঠন করে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে গালিব৷১০-১৫ জন সদস্য সংগ্রহ করে তিনি প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু করেছিলেন বলে জানান নাজমুল৷হুজি, জেএমবি ও আনসারুল্লাহসহ মোট ছয়টি সংগঠন জঙ্গি তত্‍পরতা ও উগ্রপন্থি কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ৷অন্য চারটি সংগঠন হল জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ ( জেএমজেবি), শাহাদাত্‍-ই আল-হিকমা ও হিযবুত তাহরীর৷২০০৫ সালে জেএমবিসহ চারটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সরকার৷ ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়৷সবশেষ গত ২৫ মে নিষিদ্ধ করা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে, যাদের সঙ্গে আল কায়েদার যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা৷