দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ জুন: বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যাত্রীবাহী ও মালবাহী মোটরযান চলাচল চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন ভূঁইঞা। এ চুক্তির আওতায় চার দেশের মধ্যে সড়কপথে পণ্যবাহী গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত মোটরযান চলাচল করবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চার দেশের সড়ক পরিবহন মন্ত্রীরা ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চুক্তিটি স্বাক্ষর করবেন।চুক্তিটি চূড়ান্ত হলে এই চার দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আগামী ১৫ জুন ভুটানে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হতে পারে।
বৈঠকশেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন,এ সম্পর্কিত একটি খসড়া কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু একটি দেশের অপ্রস্তুতির কারণে তা স্বাক্ষর হয়নি।তিনি বলেন, মোটর ভেহিকেলস এগ্রিমেন্ট ফর রেগুলেশন অব প্যাসেঞ্জারস, পার্সোনাল এন্ড কার্গো ভেহিকুলার ট্রাফিক বিটুইন বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল’ শীর্ষক এই চুক্তি ১৪ জুন ভুটানে অনুষ্ঠিতব্য পরিবহন মন্ত্রীদের বৈঠকে স্বাক্ষরিত হতে পারে।খসড়ায় এই চার দেশের অনাপত্তির ভিত্তিতে আগামীতে অন্য কোন দেশকে এ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। চুক্তিটি প্রতি ৩ বছর বা এর আগেও নবায়নের বিধান রয়েছে। কোন দেশ ইচ্ছা করলে ৬ মাসের সময় দিয়ে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় প্রটোকল অনুমোদনের পর এটি কার্যকর হবে। তবে সব দেশ একমত থাকলে প্রটোকল চূড়ান্ত করতে সময় নেবে না।
মন্ত্রিসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর (৬ ও ৭ জুন-২০১৫) অত্যন্ত সফল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রয়াসের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে এক প্রস্তাব গৃহীত হয়।প্রস্তাবে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, আন্তরিকতা, নেতৃত্ব, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃঢ় অঙ্গীকারের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফল সফর অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫ ফেরত দেয়া হয়। এতে তাদের রাস্তার পাশের জমি সকল মন্ত্রণালয়ের জন্য ব্যবহারের সমন্বিত নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়।বৈঠকে ডব্লিউটিও’র এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পরবর্তী সময় পেশ করতে বলা হয়। এতে ডব্লিউটিও’র কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন সম্পর্কিত রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়।মন্ত্রিসভায় আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষ নৌবাহিনী (সংশোধনী) আইন-২০১৫ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা সাংবাদিকদের জানান , সড়কপথে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলের জন্য চার দেশের (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) মধ্যে ‘বিবিআইএন মোটর ভেহিকল অ্যাগ্রিমেন্ট (এমভিএ)’ সইয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।আগামী ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটরযান চুক্তি সই হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।ভবিষ্যতে চার দেশের সম্মতিতে এই যোগাযোগে অন্য যে কোনো দেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগও চুক্তিতে রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, চুক্তির খসড়া অনুযায়ী চার দেশের মধ্যে চলাচলে রুট পারমিট নিতে হবে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোনো যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না। যে দেশের উপর দিয়ে যানবাহন যাবে, সেই দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে তা সার্চ ও ইন্সপেকশন করতে পারবে। কোনা দেশে যদি একটি পণ্য নিষিদ্ধ থাকে তাহলে সেই দেশের উপর দিয়ে সেই পণ্য পরিবহন করা যাবে না বলেও চুক্তির খসড়ায় রয়েছে।তিন বছর পরপর এই চুক্তি নবায়ন হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোনো দেশ চাইলে ৬ মাসের নোটিশ দিয়ে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পাররে।চুক্তির আওতায় যান চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশ নিজেদের নির্ধারিত হারে ট্রানজিট ফি আদায় করবে বলে জানান তিনি।উদাহারণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি নেপাল থেকে বাংলাদেশে একটি যানবাহন প্রবেশ করে তাহলে ভারত ও বাংলাদেশকে ফি দিতে হবে।১৫ জুন চুক্তি ও পরে প্রটোকল সই হওয়ার পর শিগগিরই চুক্তি অনুযায়ী যানবাহন চলাচল শুরু হবে বলে জানান তিনি।এর আগে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপের আদলে এই চার দেশের মধ্যে ২০১৬ সাল মোটর যান চলাচল শুরু করা যাবে। এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর ফলপ্রসূ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ৬ ও ৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেন। তার সফরে বাণিজ্য ও যোগাযোগ প্রসারে ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এছাড়া বিনিময় হয় স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের দলিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নরেন্দ্র মোদীর সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি ও প্রটোকল স্বাক্ষর হয়েছে, যা ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে খুবই ঘটনাবহুল ও কর্মবহুল উল্লেখ করে মোশাররাফ বলেন, এর পেছনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিশাল অবদান রয়েছে।তার দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, আগ্রহ, নেতৃত্ব, ইতিবাচক মনোভাব, দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক, আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি তার যে দৃঢ় অঙ্গীকার- এর ফলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একটি সফল সফর সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।সফরে শেষে ফিরে যাওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদী আঞ্চলিক উন্নয়নের উপর জোর দিয়ে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়েই চলার অঙ্গীকার করে গেছেন।