দৈনিকবার্তা- কক্সবাজার, ০৮ জুন: মিয়ানমার নৌবাহিনী কর্তৃক উপকূল থেকে উদ্ধার হওয়া ১৫০জন বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার। পতাকা বৈঠক শেষে সোমবার দুপুর ২টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম জিরো পয়েন্টে তাদের হস্তান্তর করে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)।কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেকুজ্জামানের কাছে মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তা চ নাইন ১৫০ বাংলাদেশিদের হস্তান্তর করেন। পরে পাঁচটি বাসে করে তাদের কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হয়।মিয়ানমারের ইমেগ্রেশন অফিসার চ নাইন জানান, সাগরে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা আজ নিজ দেশে ফেরত যাচ্ছে। এতে মিয়ানমার সরকারও খুশি। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্য সু-সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে জানান তিনি।এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিজিবি সেক্টর কমান্ডার খালেকুজ্জামান জানান, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে একটি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ১৫০ বাংলাদেশিকে যাচাই-বাচাইয়ের পর ফেরত আনা হয়। পরবর্তীতে আরো কোনো বাংলাদেশি যদি মিয়ানমারে থাকে তবে তাদেরও যাচাই বাচাইয়ের পর দেশে ফেরত আনা হবে।
এর আগে মিয়ানমার নৌবাহিনী কর্তৃক উদ্ধার হওয়া ২০৮ অভিবাসীর মধ্যে ১৫০জন সনাক্ত হওয়া বাংলাদেশিদের গ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করে বেলা ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে বাংলাদেশের সীমান্তের প্রবেশ করে প্রতিনিধি দল। তাদের নিয়ে ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলের মিডিয়া সেন্টারের দায়িত্বে থাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন।এর আগে বিজিবি কক্সবাজার-১৭ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সকাল ১০টা ৪০ মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া ১ নম্বর সেক্টরে যান তারা। কিন্তু দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যাত্রা বিলম্বের পাশাপাশি পতাকা বৈঠকও বিলম্ব এবং হস্তান্তর প্রক্রিয়াতে বিলম্ব হয়।উল্লেখ্য, ২১ মে মিয়ানমার উপকূল থেকে ২৮৪ জন অভিবাসী উদ্ধার করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে ১৫০ জন বাংলাদেশি সনাক্ত হবার পর সোমবার তাদের বিনিময় করার সিদ্ধান্ত করে দু’দেশের সীমান্ত প্রহরীরা। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের ঘুমধুম ও মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া সীমান্তে পতাকা বৈঠকে পর মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) এই বাংলাদেশিদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।এরপর বেলা ১টা ৫৩ মিনিটে ঘুমধুমের বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু দিয়ে ৩০ জনের প্রথম দলটি দেশে প্রবেশ করে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও নিয়ে আসা হয়।
বিজিবি ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলমের নেতৃত্বে দশ সদস্যের যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল পতাকা বৈঠকে অংশ নেন, তাতে পুলিশ, ইমিগ্রেশন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে ছিলেন বিজিপি, দেশটির ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট ও স্থনীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা।মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন বিভাগের উপ পরিচালক সনাইং ওই বাংলাদেশিদের দায়িত্ব কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. খালেকুজ্জামানের হাতে বুঝিয়ে দেন।২১ মে মিয়ানমার উপকূলে একটি নৌকা থেকে ২০৮ জনকে উদ্ধারের পর এর মধ্যে ২০০ জন বাংলাদেশি রয়েছে বলে দাবি করে মিয়ানমার।
কিন্তু মিয়ানমারের পাঠানো তালিকা বিভ্রান্তিকর ও অপূর্ণাঙ্গ উল্লেখ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়।কর্নেল খালেকুজ্জামান জানান, গত শনিবার আরও তথ্যসহ নতুন তালিকা পাঠায় মিয়ানমার। তালিকাটি যাচাই করে দেড়শ জনকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে শনাক্ত করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।তালিকা মিলিয়ে তাদেরেই সোমবার দেশে ফিরিয়ে আনা হল বলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল জানান।ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশিদের প্রাথমিকভাবে নাইক্ষ্যছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে পুলিশে হস্তান্তরের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, এই দেড়শ জনের মধ্যে ১৭ জেলার বাসিন্দা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৫ জন নরসিংদীর এবং ৩৪ জন কক্সবাজার জেলার।মিয়ানমারের নৌ-বাহিনী ২৯ মে সাগর থেকে আরও ৭২৭ জনকে উদ্ধার করে। এদের মধ্যেও বাংলাদেশি রয়েছে বলেও দাবি করছে মিয়ানমার।এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কথা হচ্ছে বলে জানান মো. খালেকুজ্জামান।