abd182

দৈনিকবার্তা-খুলনা, ৭ জুন: সাবেক স্পিকার,বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান,রাজনীতিবিদ ও শিক্ষানুরাগি অ্যাডভোকেট শেখ রাজ্জাক আলী আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি রোবাবর ৭ জুন ২টা ৪৫ মিনিটে এই মর্ত্যলোকের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন এক অন্য জগতে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মৃত্যুর সংবাদ শোনার সাথে সাথে মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু মরহুমের বাড়িতে ছুটে যান এ সময় তার সাথে দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন।এ সময় তিনি মরহুমের শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এদিকে সাবেক স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিদাতারা হলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সৈয়দা নার্গিস আলী, জাফরুলাহ খান সাচ্চু, শেখ মোশারফ হোসেন, সিরাজুল ইসলাম মেঝো ভাই, ফখরুল আলম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, এ্যাড.ফজলে হালিম লিটন, আরিফুজ্জামান অপু, সিরাজুল হক নান্নু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, এস এম আরিফুর রহমান মিঠু প্রমুখ।

অনুরুপ জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির চেয়াপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাড. এস এম শফিকুল আলম মনা ও ড. মামুন রহমান, এ্যাড. গাজী আব্দুল বারী, ডাঃ গাজী আব্দুল হক, কওসার জমাদ্দার, মোল¬া আবুল কাশেম, আমির এজাজ খান, মনিরুজ্জামান মন্টু, খান আলী মুনসুর, কওসার চৌধুরী, সাইফুর রহমান মিন্টু, এ্যাড. মোমরেজুল ইসলাম, এস এ রহমান বাবুল, আবুল খয়ের খান, শেখ আব্দুর রশিদ, খান জুলফিকার আলী জুলু, মোল¬া খায়রুল ইসলাম, সরদার আলাউদ্দিন মিঠু প্রমূখ।রাজ্জাক আলীর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের অধিকারী শেখ রাজ্জাক আলীর জন্ম খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হিতামপুর গ্রামের এক ব্যবসায়িক মুসলিম পরিবারে ১৯২৮ সালের ২৮ শে আগস্ট। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন আইনজীবী। তার শিক্ষাজীবন ছিল বেশ বৈচিত্র্যময়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে (১৯৫২) ও বাংলা সাহিত্যে (১৯৫৪) মাস্টার্স ডিগ্রী ও অর্জন করার পর এল এল বি সম্পন্ন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি সক্রিয় ভাবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি খুলনা জেলা জজ কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্ট বার এর সদস্য হন ও ১৯৬৪ সালে খুলনা আইনজীবি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি খুলনা ল’ কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। এরপর তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর উক্ত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিটি ল’ কলেজ খুলনা, সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় খুলনা, সবুরন্নেসা মহিলা কলেজ খুলনা, বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টুটপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইকগাছা ডিগ্রি কলেজ, শহীদ জিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাইকগাছা, বি এন এস বি চক্ষু হাসপাতাল শিরোমণি খুলনা, সিটি ল’ কলেজ মসজিদ, হিতামপুর জামে মসজিদ এবং কপিলমুনি শাহ্ জাফর আউলিয়া মাজার সংলগ্ন মসজিদ এর প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ খুলনা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ, খুলনা মহিলা আলিয়া মাদরাসা ও হাজী ফয়েজউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বয়রা এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্র অংশগ্রহণ করতে না পারলেও তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে টেট্রা ক্যাম্পে চলে যান এবং রেডক্রসে যোগ দিয়ে অনেক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে সেবা প্রদান করেন। শেখ রাজ্জাক আলীর রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি আজীবন লড়াকু সৈনিক মওলানা ভাসানীর হাতে। তিনি ন্যাপে যুক্ত হয়ে রাজনীতি শুরু করেন। এরপর তিনি যোগ দেন জাসদে। ১৯৭৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে জাসদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ১৯৭৮ সালে বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্বে গঠিত জাগদল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন। ১৯৮৯ সালে এই দলের নাম পরিবতন করে ‘বিএনপি’ করা হয় এবং সেবছর নির্বাচনে খুলনা-৬ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসন থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। সেবছরই ৫ই এপ্রিল তিনি ডেপুটি স্পিকার ও ১২ই অক্টোবর স্পিকার নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে তিনি শ্রীলঙ্কার কলোম্বোতে প্রথম সার্ক স্পিকারস সম্মেলনে যোগদান করেন ও সার্ক স্পিকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর শেখ রাজ্জাক আলীর সভাপতিত্বেই জাতীয় সংসদে স্বল্প সময়ের অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অনুমোদন দেওয়া হয়। শেখ রাজ্জাক আলী ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিযুক্ত হন। তিনি ২০০৬ সালের শেষ দিকে বিএনপি ছেড়ে কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে এলডিপি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি পরিবারের সাথে নিভৃতে সময় কাটাতে থাকেন।

শেখ রাজ্জাক আলী ১৯৫৩ সালে প্রখ্যাত সমাজসেবী, ভাষা-সৈনিক ও লেখিকা অধ্যাপক বেগম মাজেদা আলী’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পাঁচ কণ্যা সন্তানের সবাই নিজ নামে খ্যাতিমান ও সুপ্রতিষ্ঠিত। বড় কন্যা ড. রাণা রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। দ্বিতীয় কন্যা ডা. সাহানা রাজ্জাক স্ত্রীরোগ (গাইনি) বিশেষজ্ঞ হিসেবে খুলনায় কর্মরত। তৃতীয় কন্যা জার্মানীতে কর্মরত ডা. এ্যানা রাজ্জাক মেডিসিন ও আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ। চতুর্থ কন্যা লীনা রাজ্জাক চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট এবং কনিষ্ঠা কন্যা ব্যারিস্টার ড. জনা রাজ্জাক ইউনিভার্সিটি অব দ্যা ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড এর আইন বিভাগের অধ্যাপক। সাবেক স্পিকার অ্যাডভোকেট শেখ রাজ্জাক আলীর মৃত্যুকে গভীর শোক প্রকাশ করেছে খুলনা বিএনপি। একই সঙ্গে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শেখ রাজ্জাক আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোববার বিএনপির পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ শোক প্রকাশ করেন।বাণীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মরহুম শেখ রাজ্জাক আলীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।পাশাপাশি শোকাহত পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।