দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ জুন: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে রোববার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেছেন।সকাল ৮টা ৪০মিনিটে তিনি মন্দিরে এসে পৌঁছলে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এবং স্থানীয় এমপি হাজী মো: সেলিম মন্দিরের গেটে তাঁকে পুষ্পতোড়া প্রদান করে স্বাগত জানান। এসময় মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ন সাহা মনি উপস্থিত ছিলেন।সাদা কোর্তা এবং পায়জামা পরিহিত সৌম্য-দর্শন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মন্দিরের মূল বেদিতে প্রবেশের সাথে সাথে শঙ্খ, ঢাকঢোলের বাদ্য বাজিয়ে এবং উলুধ্বনি দিয়ে তাকে বরণ করে নেয়া হয়।নরেন্দ্র মোদি মন্দিরে প্রবেশ করে দেবি দুর্গার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় মন্দিরের প্রধান সেবাইয়েত প্রদীপ চক্রবর্তী তার সাথে ছিলেন।পরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির-এর পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দেবি দুর্গার প্রতিকৃতি সম্বলিত ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত নরেন্দ্র মোদিকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন ।ভারতের প্রধানমন্ত্রী সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সবার সাথে করমর্দন করেন। পরে তিনি মন্দিরে অবস্থিত শিব মন্দির পরিদর্শন করেন এবং ছবি তোলেন।
এ সময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাণাদাস গুপ্ত, পূজা উদযাপন কমিটির নেতা কাজল দেবনাথ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা , ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নির্মল কুমার চাটার্জ্জী, এডভোকেট তাপস পাল প্রমুখ।সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্দেশ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির ত্যাগ করেন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁঁছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিন সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার সকালে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি শান্তি ও অহিংসার জন্য প্রার্থনা করেন।শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃজ্ঞ মন্দিরে নরেদ্র মোদি প্রার্থনায় অংশ নেন। ‘ভগবান আমাদের সবাইকে শান্তিতে রাখুন, সকলকে সুরক্ষা দিন এবং আমাদের আত্মাকে পবিত্র করুন যাতে আমরা একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে পারি ও একে অপরের প্রতি কখনো যেন নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন না করি মোদি এই মন্ত্র উচ্চারণ ও প্রার্থনায় অংশ নেন।ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন শেষে তিনি সকাল ৯টা পাঁচ মিনিটে মিশনে এসে পৌঁছেন। রামকৃষ্ণ মিশনের ( বেলুড় মঠ) সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ ও ঢাকা মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ এ সময় তাঁকে স্বাগত জানান।
মিশন প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছলে বৈদিক মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে অতিথিকে স্বাগত জানানো হয়। গাড়ি থেকে নেমে আসার পর তার কপালে চন্দনের তিলক এবং মাথায় ধান দুর্বা দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেয়া হয়। তিনটি শিশু এসময় অতিথিকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী রামকৃষ্ণ, সারদা দেবি, স্বামী বিবেকানন্দের মর্মরমূর্তি ও প্রতিকৃতিতে এবং শিবলিঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। তিনি কর্পূর জ্বালিয়ে কিছুক্ষণ আরতি এবং মিশনের মন্দিরে অর্ঘ্য প্রদান করেন।ঢাকা মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্র“বেশানন্দ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বস্ত্র ও গেরুয়া রং-এর উত্তরীয় প্রদান করেন। এ সময় নরেন্দ্র মোদির মায়ের জন্য প্রসাদি কাপড়ও উপহার হিসাবে দেয়া হয়।
এছাড়াও মিশনের অধ্যক্ষ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং শতবর্ষী রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল-এর পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও গুজরাটি ভাষায় লেখায় ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং স্বামী বিবেকান্দের জীবনীচরিত গ্রন্থ উপহার দেন।পরে নরেন্দ্র মোদি লালগালিচা দিয়ে হেঁটে ভক্তদের কাছে যান এবং তাদের সাথে কুশল বিনিময় এবং সবার সাথে কর্মদন করেন। তিনি মিশনের প্রবীন সাধুদের সাথেও কুশল বিনিময় করেন।রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সাধারণ সম্পদক স্থিতœা নন্দ মহারাজ জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিশনে তার সফরের সময় সাধু এবং মহারাজদের সঙ্গে খুবেই অন্তরঙ্গ ভাবে কথাবার্তা বলেছেন। প্রবীণ সাধু স্বামী পরদেবানন্দ প্রধানমন্ত্রীকে বলেন যে, তিনি বাগেরহাটে রামকৃষ্ণ আশ্রমের অধ্যক্ষ ছিলেন বর্তমানে অবসর নিয়ে ঢাকায় আছেন । জবাবে মোদি ঠাট্টা করে বলেন, না রামকৃষ্ণ মিশনের কেউ অবসর গ্রহণ করে না ।এ কথা বলেই প্রধানমন্ত্রী হাসতে থাকেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্যাসীদের সাথে কুশল বিনিময় শেষে ফটো সেশনে অংশ নেন। এ ছাড়াও এককভাবে তিনি সারদা দেবির প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন ত্যাগ করেন।অন্যদিকে, সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ নগরীর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের নবনির্মিত চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন করেন।তিনি এখানে ভারত সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশে ৬টি প্রকল্পের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন।
প্রকল্পগুলো হলো টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হসপিটাল, অন্ধ শিক্ষা ও পুনর্বাসন উন্নয়ন কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে হিন্দি বিভাগ প্রতিষ্ঠা, সংগীত বিভাগে রেকর্ডিং স্টুডিও এবং নৃত্যকলা বিভাগে সহযোগিতা প্রকল্প এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী গার্লস হোস্টেল।তিনি ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স ফাউন্ডেশনের নেতাদের কাছে দু’টি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন। এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ এবং দূতবাসের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।ঢাকাস্থ ভারতীয় কিছু নাগরিক মোদিকে স্বাগত জানান। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে মোদি এখানে পৌঁছেন। দুই শিশু ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। এ সময় ইয়োগা প্রেমিক মোদিকে শিশুদের সঙ্গে মজা করতে দেখা যায়।মোদি পরে কমপ্লেক্স চত্বরে একটি বকুল চারা রোপণ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শিশুদের সঙ্গে ছবি তোলেন।