zanjot_dhakareport_24916

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ জুন: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। রাস্তাঘাটে যানজট মোটামুটি সহনীয়। তবে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের রুটি রুজির জন্য নামতে হয়েছে রাস্তায়। কাজে নেমে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বিভাগ, সিলেট এবং উপকুলীয় জেলা পটুয়াখালী অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আগামী তিন থেকে চারদিন পর রাজধানী ঢাকাসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও এলাকায় বৃষ্টি শুরু হতে পারে।আবহাওয়া অধিদফতর থেকে আজ বাসসকে এ কথা জানায়।আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বাসসকে জানান,বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে রাজধানী ঢাকায় আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। বৃষ্টি শুরু হলে ধীরে ধীরে গরম কমে যাবে।তিনি জানান, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে দেশে গরম থাকবে। তবে এ সময়ে সারাদেশে বৃষ্টি হবে। তখন গরম কমে আসবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং তা ক্রমান্বয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছ্িরড়য়ে পড়বে। বৃষ্টি হলেই ভ্যাপসা গরম কেটে যাবে।আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। মৌসুমী বায়ু উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, এ সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে।উল্লেখ্য, গত ২২ মে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।এদিকে, আনসার আলী গুলিস্তান-আব্দুল্লাহপুর রুটের বাসচালক। তার সঙ্গে কথা হয় কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায়। তিনি বললেন,‘গত কয়েক দিন সকাল থেকেই তো মারাত্মক গরম। এর মধ্যেই সারাদিন ইঞ্জিনের পাশে বসে গাড়ি চালাতে হয়। জীবনটা একেবারে শেষ। গায়ের মধ্যে ঘামাচিতে ভরে গেছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। বেঁচে থাকতে হলে গাড়ি চালাতেই হবে।তিনি জানান,আজ তো তবু জ্যাম কম। কিন্তু অন্যদিন গরম আর জ্যাম মিলে শরীরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। ভৈরব থেকে জীবিকার খোঁজে রাজধানীতে আসা রিকশাচালক আব্দুল মতিনের সঙ্গে কথা হয় নীলক্ষেত মোড়ে। মতিন বলেন,গরিব মানুষ রিকশা চালাইয়া খাই। কিন্তু এই গরমে রিকশা চালান সম্ভব না। সকাল থিকা তিন-চার গ্লাস লেবুর শরবত খাইয়াও গলা ভিজে না।শরীরের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। মাঝখানে একদিন পেট খারাপ অইছিলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে দেখা গেল কেউ কেউ রিকশা চালানো বন্ধ করে গাছের ছায়ায় রিকশার নীচে ঘুমাচ্ছেন। কেউ উদোম গায়ে বসে বাতাস খাচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের নির্মাণাধীন ভবনে কর্মরত শ্রমিক ফরিদ হোসেন বলেন,ভাই যে গরম পড়ছে এ্যার মধ্যে কোনো মানুষের পক্ষেই কাজ করা সম্ভব না। রইদের (রোদ) তেজে মনে হয় মাথা ফাইটা যাইবো। একটানা দুই-তিন দিন বৃষ্টি হইলে বালো অইতো।অসহনীয় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এর মধ্যে বৃষ্টি না হওয়ায় গরমের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। খেটে খাওয়া এসব নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টেরও তাই অন্ত নেই। তীব্র গরমে পরিশ্রম বাড়লেও বাড়েনি আয়।অসহ্য এই গরম থেকে মুক্তির আশায় তারা তাকিয়ে আছেন এক পশলা বৃষ্টির জন্য। অনেকে আবার তৃষ্ণা মেটাতে লেবুর শরবত, আখের রস খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে মধ্য তাপপ্রবাহ চলছে। মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও একটু বাড়তে পারে। তবে এ বছর তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়বে না বলে জানান আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শাহ আলম।এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যাতায়াতের নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর সড়কগুলোতে যান চলাচলের বিষয়ে আগে থেকে নির্দেশনা না থাকায় সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে যানজট পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। মোদীর সফরের প্রথম দিন শনিবারও যানজট হলেও ছুটির দিন থাকায় তার তুলনায় রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে মানুষের ভোগান্তি অনেক বেড়ে যায়।সকালে হোটেল সোনারগাঁও থেকে বের হয়ে প্রথমে বকশীবাজারে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শন শেষে পৌনে ১০টার দিকে বারিধারায় পৌঁছান। সেখানে ভারতীয় হাই কমিশনের নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে ভারতীয় সহায়তার ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে কারওয়ান বাজার মোড়ে সোনারগাঁও হোটেলে ফিরে যান। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে যান মোদী।তার এই চলাচলের পথগুলো সুগম করতে কোন কোন সড়কে কখন যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা আগে থেকে নগরবাসীকে জানায়নি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।এর ফলে জৈষ্ঠ্যের তপ্ত দুপুরে গুলিস্তান, মতিঝিল, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর রোড, মৌচাক, মালিবাগ, বাংলামোটর, চামেলীবাগ, কাকরাইল, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এয়ারপোর্ট রোড এলাকাজুড়ে যানজটে পড়ে নগরবাসী।

dc-water

একে তীব্র গরম তার উপরে যানজট- দুইয়ে মিলে নাকাল রাজধানীবাসীর মধ্যে কেউ কেউ ইন্টারনেটত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেন। রোববার ভোগান্তি শুরু হয় পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকা থেকে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আজিমপুর এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নিয়ন্ত্রণ করা হয় জনসাধারণের চলাচল।জুয়েল নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, নিউ মার্কেটে যাব। কিন্তু যে কোনো পথ দিয়েই যাই না কেন পুলিশ বলে সে রাস্তা বন্ধ।চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসেন, ১৩ মিনিট অবস্থান করে তিনি চলে যান। তার আগমন উপলক্ষে কিছু সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।তবে নগরবাসীর জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয় মোদীর বঙ্গভবনের যাওয়ার সময়। গুলিস্তানের আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করা হয়। ফলে তীব্র গরমে গাড়ির যাত্রীদের প্রায় একঘণ্টা বসে থাকতে হয়।

সদরঘাট থেকে গুলিস্তান হয়ে কুড়িলগামী সু-প্রভাত বাসের যাত্রী শরিফ হোসেন বলেন, সাড়ে ১০টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে সু-প্রভাত বাসে উঠি। কিন্তু আলুবাজারের কাছে দাঁড়িয়ে আসি আধাঘণ্টা ধরে।একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন বলেন, দুপুর ১টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল। তীব্র গরমে সেখানে বাসে বসে থাকতে হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের অব্যবস্থাপনায় এটি হচ্ছে। ফেইসবুকে সাজ্জাদ মাহমুদ শুভ নামে একজন লিখেছেন, যে শহরে এক ভিআইপি একঘণ্টা রাস্তায় নামলে পুরো শহর অচল হয়ে যায়, সে শহর রাজধানী হয় কীভাবে?মোদীর যাতায়াতের সময় ও রুট চিন্তা করে নিজেদের চলাচলের রুট প্ল্যান’ করার পরামর্শ দিয়ে ওমর শরীফ নামে একজন লিখেছেন, ১২টায় বঙ্গভবন, সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবেন। তারপর সোনারগাঁও হোটেলে ফিরে খালেদা জিয়া, রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি সরাসরি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

বঙ্গবভন এলাকায় কর্মরত সার্জেন্ট মশিউর রহমান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনের যাওয়ার পর সব সড়কের যান চলাচল শুরু হয়।অব্যবস্থাপনার অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, যানজট ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।অন্যান্য সময়ে তুলনায় এই যানজট কম বলেও দাবি করেন তিনি।বঙ্গভবনের দরবার হলে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন মোদী।বঙ্গভবনের পর্ব শেষে দুপুরে হোটেলে ফিরবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে তার বৈঠক করেন। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ব্যবসায়ী নেতাদেরও সাক্ষাৎ দেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শনিবার সকালে প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে, প্রচণ্ড দাপদাহে বিপদশঙ্কুল হয়ে পড়েছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথ। বিভিন্ন অংশে রেললাইন বাঁকা হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করছে রেল শ্রমিকরা। লাইন প্রসারিত হয়ে প্রত্যেক জোড়ার ফাঁক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে লাইন কেটে আবার ফাঁক করে দেয়া হচ্ছে। লাইন কোথাও বাঁকা হয়ে যাচ্ছে কি না সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে গরমে রেললাইন বাঁকা হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এ এলাকায়।সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার গঙ্গাসাগরে রেললাইন বাঁকা হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় দুই ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। দাপদাহে লাইন বাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এই পরিস্থিতিতে সতর্কভাবে ট্রেন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেলওয়ে সেকশনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঘাচং এলাকার চার কিলোমিটার জায়গায় সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেলের দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, ৫০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা হলেই রেললাইন বাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইতিমধ্যে দাপদাহে রেললাইন প্রসারিত হয়ে লাইনের জোড়ার মধ্যকার ফাঁক অনেক স্থানেই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ স্থানে ফাঁক বাড়ানোর কাজ করছে রেল শ্রমিকরা। শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের গোকর্ণ রোড রেলক্রসিং থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকে কয়েক কিলোমিটার অংশে শ্রমিকদের লাইন ঠিক করতে দেখা যায়।