DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_Cox-Poribes-Pic-2-05-06-15-230x140দৈনিকবার্তা-কক্সবাজার, ০৫ জুনঃ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেছেন, আজকের পৃথিবীটা ৭’শ কোটি মানুষের। তাই সবুজের সমারোহে সুস্থ পরিবেশে সুন্দর জীবন পরিচালনের অধিকার সবার। কিন্তু কিছু ভোগবিলাসী মানুষের কু-মনোভাবের কারণে ধ্বংস হচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। তাদের কালো থাবায় আজ বিপন্ন পরিবেশ প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ হারাতে বসেছে নাতিশীতুষ্ণ অঞ্চলের তকমা। এভাবে চলতে থাকলে সমুদ্র পৃষ্ঠের ক্রমাগত উচ্চতা উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ খুব অল্পসময়েই সাগরদেশে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সময় এসেছে সোচ্চার হবার। নিজ অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলতে হবে, ব্যক্তি সুবিধার জন্য ৭’শ কোটি মানুষের পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে না। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। এর আগে সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে একটি বিশাল র‌্যালী বের হয়ে হোটেল-মোটেল জোনের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে পুনরায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ফিরে যায়।

‘শত কোটি জনের অপার স্বপ্ন, একটি বিশ্ব, করি না নি:স্ব’ প্রতিপাদ্যে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আয়োজনে সকাল সাড়ে ১০টায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ, কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) শাহ-ই-আলম, (দক্ষিণ) মুহাম্মদ আলী কবির।ক্রেল প্রকল্পের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর শফিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারস্থ সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম।

উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম রহিমুল্লাহ বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের দিক দিয়ে বাংলাদেশের মাঝে কক্সবাজার অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত। এখানকার অধিবাসীদের বিলাসী জীবন-যাপনই নিজেদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়কাটা, অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সাগরের কিনার হয়েও এখানকার ভৌগলিক তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সচেতনতার অভাব কক্সবাজারবাসীর বিবেক অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী কবির বলেন, একসময় দেশের দ্বিতীয় বৃষ্টিপাতের স্থান ছিল কক্সবাজার। তখন এখানকার বনে সবুজের সমারোহ ছিল। এখন বনভূমিগুলো ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। দখল হয়ে কর্তনের কবলে পড়ছে এসব পাহাড় ও প্রাচীন বৃক্ষরাজি। বনায়নের পরিবর্তে এখন বনভূমি উদ্ধারে শ্রম ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বন বিভাগকে। তিনি আরো বলেন, চলমান সময়ের অসহ্য তাপদাহ কমানোর একমাত্র উপায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বৃক্ষায়ন বাড়ানো। এ ব্যাপারে তিনি সর্বস্থর থেকে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। অপর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) শাহ-ই-আলম বলেন, সুরম্য অট্টালিকা তৈরী করে বিত্তশালী হওয়ার স্বপ্নে শহর-গ্রাম সবখানেই ভরাট করা হচ্ছে প্রাচীন জলাধার। মনে রাখতে হবে, এসব জলাধার থেকেই ভূ-গর্ভস্ত পানির স্থর তার প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করে ভারসাম্য টিকিয়ে রাখে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবী পৃষ্ট থেকে পর্যাপ্ত পানি শোষণে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানীর তীব্রসংকট। বন রক্ষার পাশাপাশি জলাধারও রক্ষা করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য কক্সবাজার নির্মাণে সকলকেই একসাথে কাজ করতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ১৯৭২ সালে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঘোষণার পর ১৯৭৩ সাল থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালন হয়ে আসছে। এরপরও নিজেদের জন্য আমরা সচেতন হতে পারিনি। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রের শহর কক্সবাজারকে প্রাকৃতিক পরিবেশে বাসযোগ্য করতে নানা স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন, তারকামানের হোটেল ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা এখন একযোগে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন। র‌্যালী ও আলোচনা সভায় কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস, হোটেল সী-ওয়ার্ল্ড, লংবীচসহ বিভিন্ন এনজিও ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থার কর্মকতা ও কর্মীগণ অংশ নেন। সভায় পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শহরের ১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরন করা হয়।