DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_thamPress-Confer-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ জুনঃ বাজেটে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর হার বাড়ানোয় ক্ষোভ জানিয়েছেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এতে শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হবে। প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে সামগ্রিকভাবে তাঁদের অভিমত,বাজেট বস্ত্রখাত বান্ধব হয়নি।রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) কার্যালয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের সংগঠনের নেতারা।অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার বাজেটে পোশাক খাতের রপ্তানিতে উৎসে করহার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ এবং পোশাক খাতের সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য প্রস্তুতকারীদের সংগঠন বিজিএপিএমইএ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম।

তবে উৎসে কর নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেছে সিপিডি। সকালে ঘোষিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) উৎসে কর বাড়ানোর সরকারের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে মত দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, অন্তবর্তীকালীন সহায়তার অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরে উৎসে কর হার কমানো হয়েছিল। নতুন অর্থবছরে সেটি আগের চেয়ে সামান্য বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার পরিকল্পনাটি ঠিক আছে। পোশাক শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে উৎসে কর হার কমানোর দাবির পেছনে যুক্তি হিসেবে আতিকুল ইসলাম বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক কারখানার সংস্কার কার্যক্রম চলছে। এতে উদ্যোক্তাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। আবার গত এক বছর ধরে ডলারের বিপরীতে ইউরোর অবমূল্যায়ন চলছে। এর অর্থ তাঁদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে উৎসে করহার ১ শতাংশ করা হলে তা শিল্পের জন্য যুক্তিযুক্ত হবে না। নিট ও ওভেন পোশাক খাতে নতুন করে ঝুঁকি বাড়বে। তাতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা টিকতে পারব না।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, আমাদের কাপড় ও পোশাকশিল্প নানা ধরনের সুযোগসুবিধা উপভোগ করছে।এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়েছি ঠিকই, তবে অর্থনীতিকেও অনেক কিছু দিয়েছি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। দিয়েছি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ, দিয়েছি ফরোয়ার্ড লিংকেজ। আমরা ৪৪ লাখ শ্রমিক ভাইবোনের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করেছি।উৎসে কর কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ করা হলে আরও অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন বিজিএমইএর সভাপতি।আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে যন্ত্রপাতি আমদানিতে প্রথমবারের মতো ১ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটি কমানোর দাবি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। এখন আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে তা উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে।

তৈরি পোশাক ছাড়াও হিমায়িত খাদ্য, পাট, চামড়া, সবজি ও প্যাকেটজাত খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে কর হার বাড়িয়ে এক শতাংশ করা হয়েছে।নতুন বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎসে কর প্রায় আড়াই গুণ বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনগুলো।বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, যেখানে মুনাফার পরিমাণ ২ থেকে ৩ শতাংশ, সেখানে ১ শতাংশ উৎসে কর দিলে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।আগের দিন জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তুলে ধরেছেন, তাতে তৈরি পোশাক পণ্যের রপ্তানি মূল্যের উপর আরোপিত বর্তমান দশমিক ৩০ শতাংশ উৎস কর বাড়ানোর কথা বলা হয়।

মুহিত বলেন, আমাদের কাপড় এবং পোশাক শিল্প নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে। এছাড়া আরো রপ্তানি দ্রব্যও এই সুযোগ পায়। এই সুযোগটি শুধু এক বছরের জন্য দেওয়া হয়েছিল।তাই এবারে এই সুযোগ প্রত্যাহার করে তৈরি পোশাক, টেরি টাওয়েল, কার্টন ও এক্সেসরিজ, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছসহ সকল রপ্তানি পণ্যের রপ্তানি মূল্যের উপর ১ শতাংশ হারে উৎসে করা কর্তনের প্রস্তাব করছি এবং একইসঙ্গে উক্ত কর সকল ক্ষেত্রে করদাতার চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ৪৪ লাখ শ্রমিক ভাইয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, যার মধ্যে ৩২ লাখই নারী। উৎস কর কমিয়ে পূর্বের অবস্থায় নিলে আরও অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারব বলে কথা দিচ্ছি।বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকেই আসে, যার আকার বর্তমানে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার।এবার বাজেটে গার্মেন্ট শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ওপরও প্রথমবারের মতো এক শতাংশ আমাদানি শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান বিজিএমইএ সভাপতি।এমন হলে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হবে। শিল্পের বিকাশ থেমে যাবে।সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী, বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান, বিজিএপিএমইএর সভাপতি রাফেজ আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলমচৌধুরী পারভেজ,বর্তমান সহসভাপতি এস এম মান্নান,সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর সহসভাপতি আসলাম সানি প্রমুখ।বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও বিপিজিএমইএ’র শীর্ষ নেতারাও এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।