দৈনিকবার্তা-লামা, ৫ জুন: বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এখন সেই কাঁঠালের মৌসুম। শহর থেকে গ্রাম যেখানেই যান সেখানেই কাঁঠালের ম ম গন্ধ। সেই গন্ধেই অনেকের জিভে জল এসে যায়। আর পাহাড়ি কাঁঠালের তো তুলনাই হয় না। সর্বত্রই আগাম কাঁঠালের বাজার বেশ জমে উঠতে শুরু করেছে। অনুকূল আবহাওয়া আর প্রয়োজনীয় পরিচর্যার কারণে চলতি মৌসুমে বান্দরবানের লামা উপজেলায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে। গতবারের চেয়ে এ বছর কাঁঠালের ভালো দাম পাওয়ায় চাষীরাও বেজায় খুশি। সাপ্তাহিক হাটের দিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে এখন সরগরম হয়ে উঠে উপজেলার প্রত্যন্ত হাট বাজারগুলো। প্রতি হাটের দিন প্রায় ১০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিকিকিনি হয়। প্রতি মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে এখানকার মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন বলেও চাষিরা জানিয়েছেন। এখানকার পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কাঁঠাল স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। তাই বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদা প্রচুর। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলার হাট বাজারে রপ্তানি হচ্ছে এ কাঁঠাল।
সরজমিন দেখা গেছে, লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে কাঁঠাল বাগান মালিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে বাজারজাত করতে নারী-পুরুষ সবাই কাজ করছেন। এসব কাঁঠাল বাগানে অনেকে আবার শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন। পাহাড়ে কাঁঠাল পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য এখন গড়ে উঠেছে মৌসুমি হাট। উপজেলা সদরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে কাঁঠালের হাট। এছাড়াও বাগান মালিকরা প্রতিদিন বিক্রির জন্য রিকশা, ভ্যান,
ঠেলাগাড়ী, টেম্পো, জিপ, বাঁশের চালি ও নৌযোগে কাঁঠাল নিয়ে আসছে বিভিন্ন মৌসুমি বাজারে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে কাঁঠাল চাষ না হলেও পৌর এলাকা এবং উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের পাহাড় ও বাড়ীতে কাঁঠাল চাষ হচ্ছে। উপজেলায় চলতি মৌসুমে কি পরিমাণ কাঁঠাল বাগান কিংবা উৎপাদন হয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব কৃষি বিভাগে নেই। তবে এলাকার এমন কোনো বাড়ি নেই যে, সেখানে ২০-৩০টি কাঁঠাল গাছ নেই। প্রতি বছর কাঁঠাল বিক্রি করে উপজেলার শতশত পরিবার স্বাবলম্বী হচ্ছেন। শুক্রবার বিকালে পৌরশহরের কাঁঠাল হাটে কথা হয় লামা সদর ইউনিয়নের ছোট বমু এলাকার চাষী কফিল উদ্দিন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, এ মৌসুমে কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। আমার বাগানে প্রায় ১০০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকার বিক্রি করতে পারবেন।
পৌর এলাকার কাঁঠাল ব্যবসায়ী ফখরুজ্জামান জানিযেছেন, পৌর এলাকার চম্পাতলী গ্রামের ইয়াহিয়া বাবুলের বাগান থেকে মাঝারি আকারের সাড়ে ১শ কাঁঠাল ১৮ হাজার টাকায় পাইকারী কিনেছেন। এ কাঁঠাল হাটে তুলে বিক্রি করলে কমপক্ষে ৬-৭ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম বলেন, তিনি বড় আকারের প্রতি’শ কাঁঠাল ৩০ হাজার টাকা, মাঝারি আকারের কাঁঠাল ১৮ হাজার এবং ছোট আকারের কাঁঠাল ৬ হাজার টাকায় কিনেছেন। এসব কাঁঠাল তিনি ফেনী ও নোয়াখালীতে নিয়ে বিক্রি করবেন। তার কেনা ৪শ কাঁঠালে খরচ বাদ দিয়ে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন।
কক্সবাজারের মহেশখালীর ব্যবসায়ী জাফর আহমদ (৩২) ও চকরিয়ার মো. সেলিম (২৭) বলেন, পাহাড়ী এলাকার কাঁঠাল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। তাছাড়া যোগাযোগ ভালো থাকায় এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে বিক্রি করলে ভালো লাভও পাওয়া যায়। তবে দাম একটু বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতিদিন ৮-১০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হয়। প্রতিদিন ট্রাক যোগে কাঁঠাল উপজেলা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ব্যাপকহারে বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁঠাল চাষ না হলেও স্থানীয়দের প্রায় বাড়ীর বাগানে কাঁঠালের কাঁঠালের বাম্পার ফলনের সত্যতা স্বীকার করে লামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রুস্তম আলী বলেন, পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া কাঁঠাল চাষের উপযোগী। এখানে বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁঠালের চাষ করা গেলে পাল্টে যেত অর্থনীতি।