দৈনিকবার্তা-দিনাজপুর, ৫ জুন: আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও ও ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে শিক্ষাবোর্ডের কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার বকশীগঞ্জ রানী দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান আলী দীর্ঘদিন যাবত নিয়ম বর্হিভুতভাবে রিজার্ভ ও জেনারেল ফান্ডের ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা উত্তোলন থেকে বিরত, জাতীয় সংগীত পরিবেশন থেকে বিরত, এ্যাসেম্বিলি না করার অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বারবার কারন দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হলেও সমুচিত জবাব না দেওয়ায় তাকে গত ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের ২৬ তারিখে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এডহক কমিটির সভাপতি গোলাম মওলার সভাপতিত্বে সাধারন সভার মাধ্যমে তাকে বিধি সম্মতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করায় তিনি গত ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করলে আদালত ওই বিষয়টির বিধি সম্মত নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রদান করেন। পরে বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবরে অভিযোগ প্রদান করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের আইন উপদেষ্টা এবিএম শফিকুর রহমান বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ও বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষককে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির মতামত প্রদান করেন। পরে এ ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ড নোটিশ জারি করলে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তারা মিয়া যাবতীয় কাগজপত্র শিক্ষাবোর্ডে জমা প্রদান করেন।
কিন্তু শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ন ভট্টাচার্য ওইসব কাগজপত্র ও ঘটনা পর্যালোচনা না করেই বোরহান আলীকে স্বপদে বহাল করার নির্দেশ প্রদান করেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক বোরহান আলীকে স্বপদে বহাল না করায় শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ম্যানেজিং কমিটি কেন ভেঙ্গে দেয়া হবে না এ বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ মোতাবেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ১২ মার্চ জবাব প্রদান করেন। কিন্তু গত ২০ মে নিয়ম বর্হিভুতভাবে শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ন ভট্টাচার্য ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যালয় পরিদর্শক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেন। এর আগেও ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অর্থের বিনিময়ে নিয়ম বর্হিভুতভাবে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকারী নিয়ম মোতাবেক প্রেশনে একজন কর্মকর্তা একটি প্রতিষ্ঠানে ৩ বছরের বেশি সময় থাকার কোন বিধান নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনারায়ন ভট্টাচার্য নিয়ম বর্হিভুতভাবে অদৃশ্য খুটির জোরে ২০০৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে রয়েছেন। তার নামে ইতিপূর্বে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তার বিরুদ্ধে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের ৮টি জেলায় নির্দিষ্ট দালালদের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে অবৈধ লেনদেন করার অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ন ভট্টাচার্য অর্থ কিংবা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর মোতাবেক ওই কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর সর্ম্পুণ দায় দায়িত্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আহমেদ হোসেন জানান, ম্যানেজিং কমিটি ভাঙ্গা যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তারা আদালতে যেতে পারে। আদালত থেকে নির্দেশনা মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। রবীন্দ্রনারায়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রেষনে ৩ বছরের বেশি থাকার বিধান না থাকলেও তিনি কিভাবে আছেন এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান বলেন, এসব ব্যাপার আপনারাই ভাল জানেন।