chilmari-photo-4-6-15-205x300

দৈনিকবার্তা-কুড়িগ্রাম, ৫ জুন: চিলমারীর ৪ অদম্য মেধাবী দারিদ্রতাকে জয় করে এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়ে গ্রামে ও বিদ্যালয়ের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ৪ বান্ধবী। ওরা কেউ কৃষক, দিনমজুর ,ভ্যানচালকের সন্তান। অভাব ওদের নিত্য সঙ্গী। কখনো কখনো দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটেনি তাদের ভাগ্যে। চাহিদা মতো জোগার হয়নি পোশাক। তবুও দমে যায়নি ওরা। হার মানেনি দারিদ্র্যেতার কাছে। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে হাসি ফুটিয়েছে দুঃখী মা বাবার মুখে। শিক্ষা জীবনের প্রথম এ সাফল্যে তাদের দু’চোখে এখন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। এরপরও অর্থাভাবে ভাল কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে পড়েছে ওরা। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেই ওদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পুরন হবে। কিন্তু এই অদম্য মেধাবীদের এখন স্বপ্ন পূরণে বাঁধা দারিদ্র্যেতা। এরা জানে না তাদের স্বপ্ন কিভাবে পূরুণ হবে? কারণ এদের পরিবারে নুন আনতে যেন পান্তা ফুরার অবস্থা।

মোসলেমা আক্তার: পিতা হারা দুখিনী মোসলেম কে দিনের পর দিন অনাহারে থেকে যেতে হয়েছে স্কুলে। ছিল না প্রয়োজনীয় বই-খাতা-কলম। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন অন্ধকারে রয়ে গেছে। ভাল কোন পোশাক পরা হয়নি। একমাসেও জোটে না এক টুকরো মাংস কিংবা দুধ। পুষ্টিহীনতায় বেড়ে ওঠে অভাবের সংসারে মোসলেমা। ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে বড় ভাই ভেন চালিয়ে ও ছোট ভাই দিনমজুর কাজ করছে। শত বাধা পেরিয়ে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় থানাহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোকেশনাল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভবিষ্যতে প্রকৈশলী হয়ে জীবনের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে চান মোসলেমা। সেই সঙ্গে তার ইচ্ছা সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। মোসলেমার বাড়ি উপজেলার থানাপাড়া গ্রামের মৃত মোক্তার আলীর কন্যা।লাকী আক্তারঃউপজেলার উত্তর মাছাবান্দা ডম্পোড় মোড় এলাকার দিন মজুর আইয়ুব আলীর ছোট কন্যা। সম্পদ বলতে বাড়িভিটা। অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রি করে একমাত্র আয় আইয়ুব আলীর। তিন কন্যা নিয়ে তার ৫ জনের সংসার। তিন বেলা পেটপুরে খাবার জোটাই কঠিন। ধানদেনা করে দুই মেয়ের বিয়ে দিলেও ছোট মেয়ের পড়াশুনা যেন পাহাড় ঠেলার সমান। পিতা আইয়ুব আলীর রাতে ঘুম হয় না মেয়ে লাকীর পড়ালেখা কিভাবে চালাবেন? এরপর দুষ্ট লোকেদের উৎপাত। কিন্তু মেয়ে এতে ভিত নয়। সে পড়তে চায়। স্বপ্ন দেখে প্রকৈশলী হওয়ার। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে প্রধান বাধা অর্থনৈতিক দীনতা। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। মা সাজেদা বেগম সংসারের অভাব দূর করতে কঠর পরিশ্রম করেন। শত কষ্ট হলেও মা চান তার মেয়ে যেন পড়ালেখা করে নিজের ভাগ্য বদলাতে পারে। তিনি দুঃখ করে বলেন, গরিব হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরাই ভাল।

রোকছানা খাতুন: স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায় রোকছানা। দারিদ্র্যতা এবং পারিবারিক নানা সঙ্কট বিকশিত হওয়ার পথকে সঙ্কুচিত করেছে। তাই সে স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায়। পিতা দিনমজুর। ধারদেনা, অন্যের সহায়তা নিয়ে ৬ জনের টানাটানির সংসার। সংসারের অভাবের কারনে লেখাপড়া ছেড়ে তার বড় ভাই দিনমজুর ও ছোট ভাই রিক্্রাচালিয়ে অতিকষ্টে দিনাপাত করছে। নেই বই-খাতা-কলম-পোশাক। আরও নেই খাবার…। শুধু নেই আর নেই। শত প্রতিকূলতাকে ডিঙ্গিয়ে রোকছানা চলতি এসএসসি পরীক্ষায় থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে মাচাবান্দা তেলিপাড়া সফিউল ইসলামের কন্যা। সে আইনজীবি হতে চায়।

আইরিছ আক্তার: আইরিছ আক্তার চলতি এসএসসি পরীক্ষায় থানাহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোকেশনার হতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অনাহার-অর্ধাহার, বই-খাতা-কলম, পোশাকের সঙ্কটের মধ্যেও ঈর্ষণীয় সফলতায় মুখ উজ্জ্বল করেছে পরিবারের। কিন্তু হাসি নেই কারো মুখে। কারণ উচ্চ শিক্ষার প্রধান বাধা অর্থনৈতিক দীনতা। উপজেলার মাচাবান্দা শিমুল তলা গ্রামের দিনমজুর আব্দুল আজিজের ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে একমাত্র মেয়ে আইরিছ। নিজের কোন জমি নেই। দু’হাতের ওপর চলে ৬ জনের ভরণপোষণ। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরলে গোটা পরিবারকে করতে হয় উপোস। তার উপর সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। সংসারের কষ্টকে ভাগাভাগি করতে লেখাপড়া ছেড়ে বড় ভাই দিনমজুর ও মেজ ভাই রিক্সা চালক পেশা বেঁচে নিয়েছেন। শত অনিশ্চয়তার মাঝেও আইরিছ স্বপ্ন দেখে পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে।

ভোকেশনাল শিক্ষক মোঃ সাহিনুর ইসলাম মুক্তা জানান এই চারজন অভাবী সংসারে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করে এই অর্জন করেছে। লেখাপড়ার জন্য স্কুল থেকেও তাদের সহযোগীতা করা হয়েছে। সরকারী/বে-সরকারী ভাবে সহযোগীতা পেলে আল্লাহ্ রহমতে তারা দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করবে।