দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ জুনঃ পরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মমতা আজ ঢাকায় আসছেন। তিস্তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে পর্দার অন্তরালে। আলোচনা এগিয়ে চলছে। তাই এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।আপনারাধৈর্য ধরেন সাফল্য আসলে আপনাদের জানাবো।শুক্রবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, মোদির বাংলাদেশ সফরে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে। বাণিজ্য চুক্তিতে নতুন কিছু উপাদান থাকছে।তিস্তা চুক্তি না হওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক ব্যর্থতা কি না এমন প্রশ্নের জবাব মন্ত্রী বলেন, আমাদের তা মনে হয় না। এই মুহূর্তে ভারত-বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত । ডিপ্লোমেসি কখনো প্রকাশ্যে হয় না, হয় চোখের আড়ালে। রাতারাতি কোনো কিছু অর্জিত হয় না।তিনি আরো বলেন, মানবপাচার বন্ধ ভারত-বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে। এজন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে।বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।মাহমুদ আলী বলেন, মনে হয় না তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের কোনো সুযোগ আছে।তিস্তা চুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুক্রবার মমতা আসছেন। আলোচনা চলছে। তিস্তা নিয়ে পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে। আপনারা ধৈর্য ধরেন সাফল্য আসলে আপনাদের জানাবো।
তিস্তা চুক্তি না হওয়ার বিষয়টি কূটনৈতিক ব্যর্থতা কি না এমন প্রশ্নের জবাব মন্ত্রী বলেন, আমাদের তা মনে হয় না। এই মুহূর্তে ভারত-বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত । ডিপ্লোমেসি কখনো প্রকাশ্যে হয় না, হয় চোখের আড়ালে। রাতারাতি কোনো কিছু অর্জিত হয় না।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ৬-৭ জুন রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসবেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে। সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।তিনি বলেন,বৈঠকের পর উভয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্থলসীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত চুক্তির ও অনু সমর্থনের দলিল বিনিময় হবে। এছাড়া কয়েকটি চুক্তি/প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল, উপকূলীয় নৌ চলাচল চুক্তি, পণ্যের মান স্ট্যান্ডারাইজেশন সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় সহযোগিতা চুক্তি।এছাড়া উভয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চল নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা, মানবপাচার প্রতিরোধ, জ্বাল নোট পাচার প্রতিরোধ, সমুদ্র ভিত্তিক ব্লু ইকোনমি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হবে। এসময় ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও সহযোগিতা সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক সই হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এসব চুক্তি সইয়ের ফলে আঞ্চলিক আন্তঃসংযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে বলে মনে করেন তিনি।তিনি বলেন, সফরের সময়ে নরেন্দ্র মোদি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা গ্রহণ করবেন। মোদী সফরের সময় কলকাতা-আগরতলা বাস সার্ভিস ও ঢাকা- শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিসের সূচনা হবে। এছাড়া খুলনা-মংলা রেলওয়ে লাইন এবং কুলাউড়া-শাহাবাজপুর রেল সংযোগ পুনর্বহাল, শিলাইদহের কুঠির বাড়িতে রবীন্দ্র ভবন, শারদা পুলিশ একাডেমিতে একটি মৈত্রী ভবন নির্মাণ, ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টটিটিউশনের একটি পরীক্ষাগার ও একটি একটি বর্ডার হাটের উদ্ভোধন করবেন।নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এই আলোচনা চলছে কূটনৈতিক পর্যায়ে।ডিপ্লেমেসিতে সব কিছু তো পাবলিকলি হয় না। অনেক কিছুই চোখের আড়ালে হয়। তিস্তা চুক্তি নিয়েও আলোচনা চলছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে আপত্তি তোলায় বিষয়টি আটকে যায়।এর প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় গত ফেব্র“য়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা এসে শিগগিরই তিস্তার জট খোলার আশা দেন মমতা।এরপর মোদীর ঢাকা সফরের সময় মমতারও আসার আলোচনা শুরু হলে পুরনো কাঠামোতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আবারও বেঁকে বসেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ঢাকা সফরে ‘তিস্তা চুক্তি না করার’ আশ্বাস দিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সফরে আসতে রাজি করান বলে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবর।গত ১ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্পষ্টই জানিয়ে দেন মোদীর সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হচ্ছে না।শুক্রবার মোদীর সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এলেও তিস্তা নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হয় তাকে। চোখের আড়ালে তিস্তার আলোচনা প্রসঙ্গে মাহমুদ আলী বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর এ জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করেছি। আর আমাদের সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিব উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা নিশ্চই এ বিষয়ে আরও আলোচনা করব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের আলোচনায় আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে।ঢাকা সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত মোদীও বৃহস্পতিবার রাতে এক টুইটে লিখেছেন, আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে আমার বাংলাদেশ সফর আমাদের বন্ধন আরও মজবুত করবে এবং তাতে দুই দেশের জনগণই উপকৃত হবে।বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের সব বাধা কাটিয়ে ওঠার পর নরেন্দ্র মোদীর এই সফর হচ্ছে। ৪১ বছর ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি হওয়ায় দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবন বদলের স্বপ্ন দেখছে।সেই স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রোটোকলে দুই দেশের অনুসমর্থনের দলিল মোদীর সফরে বিনিময় হবে বলে মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে জানান।শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা পৌঁছানোর পর শাহজালাল বিমানবন্দরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হবে।তার ৩৬ ঘণ্টার সফরে আন্তঃযোগাযোগ, সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্য সহযোগিতার মতো অন্তত ২০টি বিষয়ে চুক্তি ও আলোচনা হওয়ার কথা, যার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
ঢাকা পৌঁছানোর পর নরেন্দ্র মোদী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।সেখান থেকে তিনি যাবেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে।শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও থাকবেন।রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ছাড়াও বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সমম্মেলন কেন্দ্রে বক্তৃতা দেবেন মোদী। এরপর সন্ধ্যায়ই তিনি ঢাকা ছাড়বেন।মমতা ঢাকা আসছেন মোদীর একদিন আগে, শুক্রবার রাতে। মোদীর একদিন আগেই তিনি ঢাকা ছাড়বেন।সফরসঙ্গীদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদী থাকবেন সোনারগাঁও হোটেলে। আর মমতার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে েেহাটেল র্যাডিসনে।