53

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ০৫ জুন: রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারটি রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের দুপাশ ঘিঁষে গুড়ে উঠেছে। একসময় এই হাটটি ছিল গুরুর জন্য বিখ্যাত। বলা হতো গরুর হাট। তবে কালের বিবর্তনে সেই গরুর হাট এখন পরিণত হয়েছে আমের হাটে। হবেই না কেন, বছরের এই সময়ে বানেশ্বর হাটের মাঝ দিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কও পার হওয়া দায় হয়ে যায় আমের ভিড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমে ভরে গেছে বৃহত্তর বানেশ্বর বাজারটি। গোপালভোগ, মোহনভোগ, হিমসাগর, লখনা, ন্য্ংাড়াসহ নাম না জানা হরেক প্রজাতির আটি আম কাঁচা-পাকা আমের মিশেল। পাকা আমের মিষ্টি গন্ধও নাকে এসে বিধছে। এগুলো আবার কোনো কোনোটি লাল টুকটুকে আবার কোনোটি হুলুদ বর্ণের। চারিদিকে শুধু আম আর আম। গতকাল শুক্রবার বাবেশ্বর বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

ব্যবসায়ী ও আম বিক্রেতোরা জানিয়েছেন, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে জমায়েত হচ্ছেন এই বাজারে। এসব ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ বাগান মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করছেন, কেউ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাইকারী কিনে নিয়ে পাঠাচ্ছেন রাজশাহীর বাইরে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের ব্যবসায়ীর কাছে, আবার অনেকে নিজ গাছের আম পেড়ে নিয়ে এসে বিত্রি করছেন। কিন্তু চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় সঠিক দাম পাচ্ছেন না বলে মনে করেন আম ব্যবসায়ীরা।

বানেশ্বর বাজারের এক আরতদার মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে আমের রাজা বলে পরিচিত গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মন ২৩-২৪শ’ টাকা। এর বাইরে নতুন উঠা হিমসাগর ১৪-১৫শ’, ন্যাংড়া ১৫-১৬শ’ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আরো অনেক নাম না জানা আটি আম বিক্রি করা হচ্ছে মন প্রতি ৬০০-৭৫০ টাকা দরে। তবে এখন পর্যন্ত ফজলি, আম্রপালী এবং আশ্বিনী জাতের আম বাজারে আসেনি। এগুলো আসবে আরো দেরিতে। তিনি আরো বলেন, বানেশ্বর বাজারে আম বেশি আসে দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট এবং পুঠিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে। এই বাইরে আসে পবা, মোহনপুর, বাগমারা এবং জেলার বাইরে নাটোরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও। এরপর সেগুলো পাইকারী কিনে নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ নানা জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে এবার একসঙ্গে অতিরিক্ত আম বাজারে আসার কারণে এখন দাম অনেকটাই কম।কিন্তু এই দাম হয়তো কয়েকদিনের মাথায় বেড়ে যাবে।

বানেশ্বর বাজারে আম বিক্রি করতে আসা এক ব্যবসায়ী আমান বলেন, নিজের গাছের বাছাই করা আম বাজারে নিয়ে এসেছি। যদিও রং ভালো না। কিন্তু এই আম খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এই আমগুলো কেবলই পাকতে শুরু করেছে, তাই ক্রেতার সুবিধার্থে তা সরাসরি বাজারজাত করতে শুরু করেছি। ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলী বলেন, বানেশ্বরে বর্তমানে কাঁচা আম বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমে ওষুধ দিলে আম অনেক দিন পর্যন্ত গাছে রাখা যায়। কিন্তু ঔষুধ মেশাতে না পারার কারণে আম তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছে। ফলে ওই পাকা আমগুলো পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তা তাড়াতাড়ি বাজারজাত করা হচ্ছে।

পুঠিয়ার ভাড়য়া গ্রাম থেকে আসা এক টেন্ডার ব্যবসায়ী বাবর আলী জানান, গরমে আম তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছে। সবাই আম নিয়ে আসছে তাই আমের দাম অনেক কম। প্রতিদিন তিনি ৭-৮ মনিআম নিয়ে এসে পাইকারী দরে বিক্রি করে যাচ্ছেন বলেও জানান। ব্যবসায়ীরা জানান, ফরমালিন মেশানো আম ধরা পড়লে নগদ এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে তাই ব্যবসায়ীরা যথাসময়ে আম বাজারজাত করা শুরু করেছেন। ফলে এবার কোনো আমেই ফরমালিন পাওয়া যাবে না। আরতদারেরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে আম সংগ্রহ করে। এরপর তারা এসব আম আবার পাইকারী ব্যবসায়ী ও বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এই ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে আম পৌছে দেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে আম পরিবহনে তাদের রাস্তায় কিছু সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় এক ব্যবসায়ী শাওন ।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন তার ট্রাকবোঝাই আম আসে পবা, মোহনপুর, দূর্গাপুর থেকে। সাধারনত ট্রাকে চালান দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু গত বুধবার ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের বাঘা শাখা থেকে অভিযোগ আসে চালানে কোন সিল নেই। এরপর তার কাছে আদায় করা হয় অতিরিক্ত টাকা। এদিকে বসে নেই খুচরা ব্যবসায়ীরাও। বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ীরা লাইন ধরে রাস্তার ধারে বসেছেন আম নিয়ে। এসব আম বাসায় খাওয়ার উপযোগী এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জ্যন বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ী সালাম। তিনি বলেন, স্থানীয় বিক্রেতার পাশাপাশি স্থানীয় ক্রেতার উপস্থিতিও বেশি। বাজারে প্রতি কেজি খিরসা(হিমসাগর)আম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, গোপালভোগ ৬০ আর লখনা আম বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে।

এবার একসঙ্গে দ্রুতি আম বাজারে নামছে। এর কারণ হলো এবার আগে-ভাগেই কেউ আম নামাতে পারেনি প্রশাসেনের চাপের কারণে এপর আছে সামনে রমজান। রমজানে আমের চাহিদা অনেকটায় কমে যাবে বলে আমচাষিরা একনোই দ্রুত আম বাজারজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এদিকে বানেশ্বর বাজারের এক ভ্যান চালক মুক্তার জানান, চারঘাট থেকে প্রচুর আম আসে, তাই চারঘাটের প্রতিটি ভ্যান চালক এখন অম পরিবহনে ব্যাস্ত সময় পার করছে। ট্রাক শ্রমিক মামুন বলেন, প্রতিদিন অন্তত ১০-১২ ট্রাক আম পাঠানো হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতি ট্রাকে প্রায় ৩০০-৩৫০ ক্যারেট আমপাঠানো হয় যার প্রতি ক্যারেটে প্রায় ২৫-২৬ কেজি আম সংরক্ষিত থাকে। তারপর কুরিয়ার সার্ভিসগুলো তো আছেই।