দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ জুনঃ রমজান উপলক্ষে খোলা বাজারে চিনি, মশুর ডালসহ পাঁচটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু করছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)৷
বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে ১৭৪টি স্থানে ট্রাকে করে পাঁচটি পণ্য বিপণন শুরু হবে বলে টিসিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়৷টিসিবির কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ঢাকায় ২৫টি স্থানে, চট্টগ্রামে ১০টি স্থানে, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি স্থানে ও বাকি জেলা সদরে দুটি স্থানে ট্রাক যোগে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি শুরু হবে৷প্রাথমিকভাবে চিনি, মশুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি৷টিসিবি জানিয়েছে, এক্ষেত্রে প্রতি কেজি চিনির দাম হবে ৩৭ টাকা৷ আর একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি কিনতে পারবেন৷
প্রতি কেজি মশুর ডাল (নেপালি) বিক্রি হবে ১০৩ টাকা করে, একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি ডাল নিতে পারবেন৷ ছোলা বিক্রি হবে ৫৩ টাকা করে, একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ তিন কেজি কিনতে ছোলা কিনতে পারবেন৷এছাড়া ১ ও ২ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল প্রতি লিটার ৮৯ টাকা করে এবং ৫ লিটারের বোতল প্রতি লিটার ৮৮ টাকা করে বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে টিসিবি৷একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ লিটার তেল কিনতে পারবেন৷
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব, সচিবালয় গেট, কাপ্তান বাজার, শাপলা চত্বর, মতিঝিল,ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, দৈনিক বাংলা মোড়, শান্তিনগর বাজার, শাহজাহানপুর বাজার, বাসাবো বাজার, শেওড়াপাড়ায় খোলা বাজারে এসব পণ্য পাওয়া যাবে৷এছাড়া ছাপড়া মসজিদ ও পলাশী বাজার, মিরপুর-১২ নম্বর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কলমিলতা সুপার মার্কেট,তেজকুনি পাড়া, মহাখালী কাঁচাবাজার, রামপুরা, মালিবাগ বাজার, আগারগাঁও বাজার, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট মিরপুর-১, কচুক্ষেত বাজার, মোহাম্মদপুর টাউনহল ও ঝিগাতলা কাঁচাবাজারেও এসব পণ্য মিলবে৷এর বাইরে মিরপুর-১০ গোলচত্বর,আব্দুল্লাহপুর বাজার, উত্তরা,গোপীবাগ কমিউনিটি সেন্টার, কালশী বাজার মোড় ও গোলাপশাহ মাজার এলাকায় খোলা ট্রাক থাকবে পণ্য বিক্রয়ের জন্য স্থান নির্ধারিত রয়েছে ৷
২০১৫-১৬ অর্ধবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ এই বৈঠক বসে৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বাজেট বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ৷বৃহস্পতিবার দেশের ৪৪তম বাজেট পেশ হয়৷ জনপ্রত্যাশার চাপ সামলাতে বাড়তি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নিয়েই ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ এটি তার নবম বাজেট৷ আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট৷
গতবারের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে এবারের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা৷ এ অর্থের সংকুলানে বড় চাপ রাজস্ব খাতেই থাকছে৷ এ লক্ষ্যে আয়কর ও ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হচ্ছে৷ কিছু ক্ষেত্রে করের হারও বাড়ানো হচ্ছে৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশই রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন৷
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ১ শতাংশ ধরে সরকারের মেয়াদের দ্বিতীয় এই বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন মুহিত, যাতে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে৷বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা৷ ফলে প্রায় ৮৬ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে৷বিশ্ব বাজারে সস্তা জ্বালানি তেল, কয়েক মাসের ঝড়ের পর স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির মধ্যে দেশবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বড় ব্যয় পরিকল্পনা করে নিজেকে সাহসী ভাবছেন ৮৩ বছর বয়সী মুহিত৷সব উপজেলায় কর অফিস স্থাপন, কর কর্মকর্তাদের ‘পুরোনো স্টাইল’ থেকে বেরিয়ে আসার সতর্কবার্তা এবং জরিপ করে পাওয়া নতুন ৫ লাখ করদাতাকে করজালে নিয়ে আসা রাজস্ব আদায়ে উচ্চাভিলাষী হতে আশাবাদী করছে তাকে৷
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বক্তৃতার মধ্য দিয়ে টানা সপ্তম বারের মতো বাংলাদেশের বাজেট উপস্থাপনের মতো বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হতে যাচ্ছেন মুহিত৷ শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে এর আগে ছয় বার বাজেট দিয়েছেন তিনি৷ আর ব্যক্তিগতভাবে এটা হতে যাচ্ছে তার নবম বাজেট৷
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের আগের দিন বুধবার মুহিত বলেন, সত্যিই একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থার মধ্যে বাজেট দিতে যাচ্ছি এবারৃ৷ এমন ফুরফুরে মেজাজে আগে কখনও বাজেট দিইনি৷ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে৷ হরতাল-অবরোধ চিরবিদায় নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে৷ আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে৷বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে আসাকে বিনিয়োগের জন্য সেরা সুযোগ বলে মনে করছেন শিল্পোদ্যোক্তারাও৷ তবে তাদের হতাশা রয়েছে গ্যাস-বিদ্যুত্ না পাওয়ার৷বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ খাদ্যপণ্যের দামও এখন কম৷ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে৷বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে৷ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছে৷ আমদানি বাড়ার সঙ্গে রপ্তানি খাতেও ইতিবাচক ধারা৷সব মিলিয়েই আমাকে সাহস দিয়েছে বড় বাজেট দিতে, বলেন মুহিত৷গত কয়েক বছরের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের ৫ বছরে সরকারের আয় অর্থাত্ রাজস্ব আদায় বেড়েছে গড়ে ১১ শতাংশ হারে৷ একবার ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও ছিল জাতীয় রাজস্ব বোডের্র আয়ে৷পাল্লা দিয়ে ব্যয়ও বাড়িয়েছে সরকার৷ তবে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি কোনোবারই ৫ শতাংশের বেশি হতে দেননি অর্থমন্ত্রী৷
এমনকি এবার মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদা মেটাতে গিয়ে গত ১৪ মে এনইসির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা এডিপির বাড়তি বরাদ্দের অনুরোধও মেটানোর সাহস দেখাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী৷ যে কারণে রাজস্ব আয়ের প্রাথমিক প্রাক্কলন ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটির বদলে এনবিআরকে আদায় করতে হবে এক লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা৷ এনবিআরবহির্ভূত আয় ধরলে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা৷তবে এই বিশাল অর্থ আদায়ে নতুন করের বোঝা চাপাবেন না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন মুহিত৷সেক্ষেত্রে দুই লাখ কোটি টাকা কোত্থেকে আসবে?করজালের বাইরে থাকা সক্ষম খানাকে করের আওতায় এনেই এই লক্ষ্য পূরণ করা হবে,উত্তর অর্থমন্ত্রীর৷এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সব উপজেলায় আয়কর অফিস করব আমরা৷ এনবিআরের লোকজনকে বলা হয়েছে- ওই লোকের কাছ থেকে ১০ টাকা পাও, তার থেকে ১২ টাকা নিতে হবে; নট দ্যাট৷ ওই লোকের কাছ থেকে ১০ টাকা পাও নাও..৷ তার সঙ্গে আরো ১০টা লোককে নিয়ে আসতে হবে..৷আমি আশা করি এভাবেই ১১ লাখ থেকে করদাতার সংখ্যা ২০ লাখ, ৩০ লাখ, ৪০ লাখ পেরিয়ে যাবে৷ বাড়বে রাজস্ব৷চার দশক আগে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা৷ তিনটি বাজেট দেওয়া জিয়াউর রহমানের শেষ বাজেটও ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকার মধ্যে৷৪ হাজার ১০০ কোটি দিয়ে শুরু করে সবচেয়ে বেশি বার বাজেট দেওয়া প্রয়াত সাইফুর রহমানের শেষ বাজেট ছিল ৭০ হাজার কোটি টাকার৷মাঝে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে বাজেটের আকার বাড়াতে অতটা উদার দেখা যায়নি৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনামলে মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেটও ছিল ১ লাখ কোটির মধ্যে৷মধ্য আয়ের দেশে বাংলাদেশকে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মুহিত সাহস দেখাচ্ছেন বড় বাজেট দেওয়ার৷দিনবদলের স্বপ্ন দেখানোর দর্শন নিয়ে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার সরকার বা তার দল আওয়ামী লীগ কতটুকু সফল সে স্বপ্নপূরণে?উত্তরে মুহিত বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯-১০ অর্থবছরে আমি যে বাজেট দিয়েছিলাম তার আকার ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা৷ সাত বছরের মাথায় ৩ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট দিচ্ছি, সেটা দিনবদলের স্বপ্ন পূরণেরই বাজেট৷ সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছেৃ৷ ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ে দেশে পরিণত হব৷