দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ জুনঃ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সিমকার্ড, সিগারেট, ইমিটেশন জুয়েলারি, চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিক্সা,মোটরগাড়ির টায়ারের দাম বাড়বে। আর প্রস্তুতকৃত খাদ্য, টয়লেট-টিস্যু পেপার জাতীয় গৃহস্থালী পণ্য, মশার কয়েল, এরোসেল, দিয়াশলাই দাম কমবে।প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও শুল্কহার বাড়ানো হয়েছে বেশ কিছু পণ্য ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে। এতে দাম বাড়বে বেশকিছু পণ্যের। এর মধ্যে রয়েছে.দাম বাড়বে :পোল্ট্রি, গবাদি পশু ও চাষের মাছ, শুকনো মাছ, হিমায়িত চিংড়ি, ডেইরি, টমেটো, কালো চা, পেইন্ট, ইলেক্ট্রিক ব্যাটারিচালিত মোটরগাড়ি, মোটরগাড়ির টায়ার, ফিল্টার, রিভালবার ও পিস্তল। যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে । এছাড়া মাখন-চর্বি-তেল, পেইন্ট বার্নিস, সিগারেট, পোল্ট্রি ফিড, মাংস, বীজ, দুধ, ব্যাঙ, মধু, রেশম, ফুল। একইভাবে হাঁস, মুরগি, চিংড়ি, মাছ, সিরামিকের বাথটাব, জিকুজি, শাওয়ার ট্রে, অনলাইনে পণ্য, সাজ-সজ্জা ও বিউটি ফ্যাশন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, স্বর্ণ- রৌপ্য, রাবার, এলইডি-এলসিডি টেলিভিশন, অপটিক্যাল ফাইবার।এছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সেমিস্টার ফিও বাড়তে পারে। জ্বালানি তেল, হাইব্রিড গাড়ি, মাইক্রোবাস, সিগারেট-বিড়ি, এলপিজি সিলিন্ডার, স্বর্ণ, সেলফোন সেট প্রভৃতি। ফলে বেড়ে যেতে পারে এসব পণ্যের দাম।তবে কম্পিউটার পণ্যের বিদ্যমান ২ শতাংশ কর হার অপরিবর্তিত থাকবে।
আর কর ও শুল্ক কমানো হয়েছে বেশ কিছু খাত ও পণ্যে। এর মধ্যে রয়েছে। দাম কমবে : ওভেন ফেব্রিক্স, নিট ফেব্রিক্স ও টেক্সটাইল ফেব্রিক্সসহ কাপড়জাতীয় পণ্য, প্রস্তুতকৃত খাদ্য, চকলেট, মিষ্টি ও টোস্ট বিস্কিট, প্লাস্টিকের তৈরি দরজা-জানালা, বাক্স, কেইস, ক্রেট ও সমজাতীয় পণ্য, বোতলজাতীয় পণ্য, ছাপানো বই, লিফলেট, ব্র“শিয়ার, ছাপানো ছবি, সব রকমের পোশাক। তবে শুল্ক ও কর বাড়ানো বা কমানোর প্রস্তাব করলেই ওই পণ্যের দাম কমে বা বাড়ে এমন নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু আমদানি পর্যায়ে শুল্ক বাড়ানোর ডস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।অর্থমন্ত্রী যেসব পণ্যের সম্পূরক শুল্ক, কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব করেছেন তার মধ্যে গ্লুকোজ, সাদা চকলেট (কোকাযুক্ত নয়), কোকাযুক্ত চকলেট, চকলেট বার, মিস্টি বিস্কুট, ওয়েফার, টোস্ট, জ্যাম, জেলি, প্রীজ, মশার কয়েল, টয়লেট পেপার, ওভারকোট, কার কোট, কেইপ, স্যুট, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, ছেলেদের শার্ট(নিটেড বা ক্রশেটেড), ছেলেদের আন্ডার প্যান্ট, ব্রিফ, নাইটশার্ট, পায়জামা, মেয়েদের ব্লাউজ, শার্ট ও শার্ট-ব্লাউজ,মেয়েদের জার্সি, পুলওভার, কার্ডিগান, পেটিকোট, প্যান্টিসহ বিভিন্ন অন্তর্বাস, সব ধরনের টুথ ব্রাশ, বিভিন্ন ধরনের চশমা ও চশমার ফ্রেম, স্যানিটারি ন্যাপকিন, টাওয়েলস (প্যাড) ও বাচ্চাদের একই ধরনের পণ্য,খেলার তাস, দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত খেলনা ইত্যাদি।এছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের সম্পূরক শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পয়েন্ট কমানো হয়েছে। পার্টিকেল বোর্ড, ছাপানোর ছবির খরচ কমানোর জন্য শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়াও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উপর ১০% মুসক আরোপ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার ডস্তাবিত বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।বাজেট পেশের আগে প্রথমেই সংসদের কাছে অনুমতি চান অর্থমন্ত্রী। পরে স্পিকার সম্মতি দিলে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে কর ও শুল্ক হারের পরিবর্তনের কারণে কিছু পণ্য ও সেবার দাম কমতে যাচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ ও বর্তমান নির্ধারিত শুল্কের পরিমাণ এবং কর হার বৃদ্ধির করার কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ডস্তাব করেছেন, তাতে বেশ কিছু পণ্যের কর ও শুল্ক বাড়ানো এবং কমানোর প্রস্তাব করেছেন। মোবাইল সিমকার্ড ইস্যু ও প্রতিস্থাপিত সিমকার্ডের ক্ষেত্রে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবু মাল আবদুল মুহিত।
অন্যদিকে মোবাইল সিমকার্ড বা রিম কার্ডের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপেরও প্রস্তাব করেন তিনি। এর ফলে সিমকার্ডের ক্রয়মূল্য কমলেও, মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ বাড়তে যাচ্ছে।অর্থমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোনখাতের উত্তরোত্তর উন্নয়নের স্বার্থে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে তথা এ খাতের সার্বিক ও সুষম প্রবৃদ্ধির জন্য সিমকার্ড ইস্যু এবং প্রতিস্থাপিত সিমকার্ড উভয় ক্ষেত্রে ১০০ টাকা শুল্ককর ধার্য করার প্রস্তাব করছি।বর্তমানে মোবাইল অপারেটরদের সিমকার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা এবং প্রতিস্থাপিত সিমকার্ডের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা কর ধার্য আছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের ওপর বিদ্যমান কর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।একই সঙ্গে সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রয় ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যক্তি-অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর কর হার বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এদেশের সবচেয়ে কম কর দেয় তামাক বা সিগারেট শিল্প। অথচ এ শিল্প জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। সিগারেট প্রস্ততকারী পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি কোম্পানির করহার ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।একইসঙ্গে সিগারেট প্রস্তুতকারী নন পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি ৪৫ শতাংশ কর বহাল থাকবে।তিনি বলেন, সিগারেট উৎপাদন ব্যবসা হতে অর্জিত করযোগ্য আয় বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন যাবত সিগারেটের ওপর থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে মূল্যসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। যা বাজার অর্থনীতিতে কোনোভাবেই কাম্য নয়। এবারই প্রথম সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দিয়ে তার ওপর একটি সম্পূরক কর ও মূসক আরোপ করছি।একইসঙ্গে এ সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যের সিগারেটের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক ও মূসক আরোপের প্রস্তাব করা হলো।
অর্থমন্ত্রী জানান, সিগারেটের বিদ্যমান মূল্যস্তর (১০ শলাকার জন্য)১৫-১৬.৫০ টাকা মূল্যের সিগারেটে বিদ্যমান করহার ৪৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ১৯ টাকা ও এর ওপর ৪৮ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। ৩২.৫০-৩৫ টাকা মূল্যের সিগারেটে বিদ্যমান করহার ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম ২০-৩৯ টাকা ও ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হলো।৫০-৫৪ টাকা মূল্যের সিগারেটে বিদ্যমান করহার ৬২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মধ্যমান ৪০-৬৯ টাকা পর্যন্ত ও সম্পূরক শুল্ক ৬১ শতাংশ করা। ৯০ ও তদূর্ধ্ব মূল্যের সিগারেটে বিদ্যমান করহার ৬১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে উচ্চমান ৭০ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করছি।বিড়ির শুল্ক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিড়ি দেশীয় শিল্প হলেও বিগত কয়েকবছর বিড়ির ওপর তেমন কোনো শুল্ক বাড়ানো হয়নি। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার করসহ ৬.১৪ টাকার বিড়ি মূল্য ৭.০৬ টাকা ও ২০ ফিল্ডারযুক্ত ২০ শলাকার করসহ ৬.৯২ টাকার বিড়ির মূল্য ৭.৯৮ টাকা করার প্রস্তাব করছি।অর্থমন্ত্রী বলেন, সিগারেট পেপারের স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও বিড়ির ক্ষেত্রে এইচএস কোড জটিলতায় বিড়ির ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি হচ্ছে।এ বৈষম্য দূর ও কর ফাঁকি রোধে বিড়ি পেপারের ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরাপ করার প্রস্তাব করছি।