দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ০৪ জুন: অপেক্ষার পালা শেষ। বছর ঘুরে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শেষভাগে রাজশাহীর বাজারে আসতে শুরু করেছে আম। সারি সারি বাগান থেকে ভাঙা হচ্ছে রসালো ও সুস্বাদু এ ফল। রাজশাহীর আমের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। প্রায় আড়ইশ জাতের আম উৎপন্ন হয় এখানে। সবার আগে গাছ থেকে বাজারে নেমেছে জাত আম খ্যাত ‘গোপাল’ বা গোপালভোগ। সঙ্গে রয়েছে ক্ষিরসাপাতও। তবে দাম বেজায় চড়া।
এবার রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ছিলো ৫ জুনের আগে গাছ থেকে আম ভাঙা যাবে না। কিন্তু অব্যাহত তাপদাহে আম পেকে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই রাজশাহীর বাজারে নামতে শুরু করেছে ফলের রাজা আম। এর মধ্যে দেশি গুটি কয়েক জাতের আমই বেশি। তবে জেলা ও মহানগরের বাজারে দাম বেশি হলেও সীমিত আকারে গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত আম পাওয়া যাচ্ছে এখন। মহানগরের সাহেব বাজার এলাকার আম ব্যবসায়ী শাহীন শেখ জানান, গতবার জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আম নামলেও নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বছর তা হয়নি। কিন্তু তাপদাহে আমের আকার ছোট হয়েছে, তেমনি পাকছেও তাড়াতাড়ি। তাই দামও চড়া।
তিনি জানান, বাজারে মানভেদে গোপালভোগ খুচরা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাইকারি বিক্রি হচ্ছে, ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। অথচ গতবছর শুরুর দিকে আম খুচরা বিক্রি হয়েছে, ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। এ বছর মৌসুমের শুরুতেই কয়েক দফা কালবৈশাখী ও টানা তাপদাহসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগে শেষ পর্যন্ত আমের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়নি। ফলে রাজশাহীর বাজারে দামের এ তারতম্য। চলতি সপ্তাহে ক্ষিরসাপাত আম অল্প-বিস্তর উঠলেও খুচরা বাজারে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর রানীপছন্দ গোপালভোগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন আম ব্যবসায়ী শাহীন।
নগরীর উল্লেখযোগ্য আমের মোকাম শালবাগান বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমের আমদানি দ্বিগুণ হবে। সে সময় গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত না থাকলেও অনেক জাতের আম নামবে। তবে এর চেয়ে আর বেশি দাম কমার সম্ভাবনা নেই। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হযরত আলী বলেন, এ বছর রাজশাহীতে আমের আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে গত বছরের উৎপাদন অর্থাৎ, ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। টানা তাপদাহে আমের ফলন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক গাছে আম পরিপক্ব না হতেই ঝরে যাচ্ছে অথবা ফেটে যাচ্ছে। আবার যেভাবে বড় হওয়ার দরকার সেভাবে না হওয়ায় আকারেও ছোট হয়ে গেছে। এরপরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হতে পারে বলে জানান তিনি।
আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় আড়ইশ জাতের আম উৎপন্ন হয়। তবে এবার জাত আম গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে। প্রথমেই উঠেছে গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও রানীপছন্দ আম। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে লকনা, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, দুধসর, মোহনভোগসহ বিভিন্ন জাতের আমে ভরে উঠবে। এরপর চলতি মৌসুমের আকর্ষণীয় ফল ফজলি এবং সর্বশেষ বাজারে ঝুড়িতে উঠবে আশ্বিনা আম।