DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_03-06-15-Brahmanbaria_Lichy-1

দৈনিকবার্তা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ০৩ জুন: ভোরের আলো তখনো ফুটেনি।ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে চারটা বাজে। ওই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষা আউলিয়া বাজারের চারদিক থেকে চাষিদেরকে দলবেঁধে মাথায় ও কাঁধে করে লিচুর ঝুড়ি নিয়ে বাজারে আসতে দেখা যায়। দুর-দুরান্ত থেকে আসা পাইকাররা আগে থেকেই ওই বাজারে অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ পরই ক্রেতা-বিক্রেতার সমন্বয়ে জমে ওঠে বাজারটি।সকাল সাড়ে ছয়টা-সাতটার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বেচাকেনা।প্রকৃতির সবুজ আর লিচুর লাল রঙ মিলে-মিশে ওই এলাকায় এক অন্যরকম সকাল তৈরি করে।মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে বাজারটিতে অন্তত ৫০ লাখ টাকার লিচু পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। সে হিসেবে সপ্তাহ তিনেক স্থায়ী এ বাজারটিতে প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।সোমবার ভোরে আউলিয়া বাজারে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজন লিচু চাষীর সঙ্গে। তারা জানান, আউলিয়া বাজারের সঙ্গে রেল, সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা লিচু কিনতে আসেন এ বাজারে।

আউলিয়া বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সিলেট-চট্টগ্রাম ও ঢাকা রেলপথের মুকুন্দপুর রেলস্টেশন। তিন কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আখাউড়া-চান্দুরা সড়ক। তাছাড়া বাজারের পাশে রয়েছে তিতাস নদীর একটি খাল। ওইসব পথে ব্যবসায়ীরা সহজেই লিচু পরিবহন করতে পারেন।দুর-দুরান্ত থেকে আসা পাইকাররা জানান, সারাদিন শহরে লিচু বিক্রি করে আবার রাতের ট্রেনে মুকুন্দপুর রেলস্টেশনে এসে অপেক্ষা করেন তারা।জানা যায়, উপজেলার আউলিয়া বাজার, ভিটিদাউদপুর, কচুয়ামোড়া, পাহাড়পুর, খাটিঙ্গা, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, কালাছড়া, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মিরাসানী, কামালমোড়া, নূরপুর, হরষপুর, ধোরানাল ও নোয়াগাঁও এলাকায় রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক লিচুর বাগান। এ এলাকার পতিত জমি এবং বাড়ির আঙিনায়ও চাষ করা হয় লিচু। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ওইসব এলাকার লিচু চাষীরা ধানী জমিতেও লিচুর চাষ করেছেন। লালমাটি অধ্যুষিত এলাকা বলে এখানে দেশীয় পাটনাই ও বোম্বাই উভয় জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়।

স্থানীয় লিচু চাষিরা জানান, এই এলাকায় উৎপাদিত লিচু আকারে বড়, দেখতে লালচে আর স্বাদে সুমিষ্ট হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা বাড়ছে। বাজারের ব্যবসায়িরা জানান, বর্তমানে বাজারে প্রতি হাজার লিচু দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে নিম্নমানের কিছু লিচু হাজার প্রতি এক হাজার থেকে এক হাজার দুই’শ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।আখাউড়ার ধরখার এলাকা থেকে লিচু ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, একসঙ্গে আটজন পাইকার এসেছি লিচু কিনতে। একেক জন ৩০ হাজার টাকার লিচু কিনে সিএনজি করে নিয়ে যাব এলাকার বাজারে।হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা থেকে আসা পাইকার হাদিছ মিয়া বলেন, সবদিক থেকে যোগাযোগ ভালো। ফলে এ বাজার থেকে লিচু কিনে নিয়ে লাভ হয় বেশি। এ এলাকার লিচু সুস্বাদু হওয়ায় বেচাকেনাও জমে ভালোআউলিয়া বাজারের পাশের গ্রাম কচুয়ামোড়ার সাইফুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার অনেক যুবক আছেন যারা লিচুর বাগান কিনে থাকেন। এ মৌসুমে বাড়তি একটা আয়ের সুযোগ হয় তাদের।

বাজারের ইজারাদার ভিটিদাউদপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি টাকার লিচু এ বাজারের বেচাকেনা হয়ে থাকে।স্থানীয় (পাহাড়পুর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মইনুদ্দিন চিশতী বলেন, এবার লিচুর ভালো ফলন হলেও আকারে তেমন বড় হয়নি। ফলে অপেক্ষাকৃত কম দামে এবার লিচু বিক্রি হচ্ছে।বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসকর আলী বলেন, এবছর উপজেলার প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে এসব জমিতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি লিচু উৎপাাদন ও প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।