দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া, ০৩ জুন: রামনাবাদ পাড়ের লালুয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ, বাড়িঘর, আবাদি জমিসহ সব লোনা পানিতে ভাসছে। চারদিকে এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। চারিপাড়া গ্রাম সংলগ্ন বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় পুর্ণিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে সহ¯্রাধিক পরিবার এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কোথাও এক ইঞ্চি জায়গা খালি নেই যেখানে লোনা পানিতে প্লাবিত হয় নি। এসব পরিবারের মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বর্ষা মৌসুম না আসতেই এমন দশায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এখনই রান্না করার জায়গা নেই। চলাচলের পথ পানিতে ডুবে আছে। স্কুলে যেতে পারছে না তাদের সন্তানরা। এমনকি পবিত্র শবে বরাতের রাতটিও কেটেছে পানিবন্দী দশায়। মসজিদে যেতে পারেনি অধিকাংশ মানুষ। মানুষগুলো চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। মূলতঃ এ দূর্ভোগ পরিণত হয়েছে দুর্যোগে। পর পর তিনটি বছর আমনসহ কোন ফসল পায়নি সহ¯্রাধিক পরিবার। রামনাবাদ নদীতে জীবিকার পন্থা বেচে নেয়। কিন্তু মাছও মেলে না। এখন চারিপাড়া, ধঞ্জুপাড়া, ১১নং হাওলা, বানাতিপাড়া ও পশুরবুনিয়া এ পাঁচটি গ্রামের সর্বত্র চলছে আতঙ্ক। চারিপাড়া গ্রামের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে সজন কিংবা দুরে কোথাও চলে গেছেন।
ইউপি মেম্বার মজিবর রহমান জানান, এ বছর আগেভাগেই জোয়ারের চাপ শুরু হয়েছে।এখনই বাড়িঘর, পুকুর, আবাদি জমি সব পানির নিচে। হাটু থেকে বুক সমান পানি পুরো গ্রাম জুড়ে। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে স্কুলে যায় ছেলে-মেয়েরা। তিনি জানালেন, ভাঙ্গ বেড়িবাঁধ মেরামত কিংবা বিকল্প বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে করা না হলে গ্রাম ছাড়তে হবে অধিকাংশ মানুষের। বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌকা কিংবা কলাগাছের ভেলা। মেম্বার মজিবর জানালেন, ইতোমধ্যে কামাল প্যাদা তার মা, স্ত্রী-সন্তানসহ সাতজনের সংসার নিয়ে এখন পাশের বালিয়াতলী ইউনিয়নে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। শাহীন হাওলাদার গ্রাম ছেড়ে বানাতি বাজার বেড়িবাঁধের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলে মেছের মোল্লা স্ত্রী-পরিজন নিয়ে দুই মাইল দুরে চলে গেছেন। এভাবে অন্তত ১৫টি পরিবার এলাকা ছেড়েছে। এছাড়া বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৩৫ টি পরিবার। মজিবর প্যাদা তার জমিতে নদী ভাঙ্গনকবলিত ৩০/৩৫টি পরিবারকে নিজের আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ এখন নিজেই গ্রাম ছাড়ার শঙ্কায় পড়েছেন। জানালেন, প্রতিদিন লোনা পানিতে ভিজে চলাচল করতে হয়। তক্তা দিয়ে মাচান পেতে রান্না করতে হয়। পরপর তিনটি বছর ফসল হারানো হাজারো পরিবারে এখন চরম দুরাবস্থা চলছে। এবছরও চাষাবাদ পড়েছে মহা অনিশ্চয়তায়।
এসব মানুষের দুর্দশা দুচোখে না দেখলে বোঝানোর উপায় নেই।চাল-চুলা সব হারিয়ে ফেলছে। এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামতসহ পুনর্বাসন কাজ শুরু করা প্রয়োজন, নইলে নানাবিধ সঙ্কট শুরু হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে রামনাবাদপাড়ের সহ¯্রাধিক পরিবারে। ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা জানান, চারিপাড়াসহ পাঁচটি গ্রামের মানুষকে রক্ষায় বাঁধ মেরামতের জন্য তিনি বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়াস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের জানান, তারা বাঁধ মেরামত করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।