DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_1433180391

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ জুন: বিগত অর্থবছরে রাজস্বের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের চলমান ধারায় কমিয়ে আনা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় রয়েছে। এর মধ্যে আসছে বাজেটে আবারো বিশাল রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে এনবিআরকে। গত বাজেটে এনবিআরকে ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আদায় বেড়েছে ১৬ শতাংশের কম। অথচ আসছে বাজেটে এনবিআরকে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বেশি নয়। কিন্তু আদায়কারি প্রতিষ্ঠান এনবিআরের সক্ষমতাও বিবেচনায় নিতে হবে। বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলে বিগত বছরের ন্যায় আসছে বছরের লক্ষ্যমাত্রাও ব্যর্থ হতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া যৌক্তিক হবে না। তিনি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত কখনোই ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আর ৩০ শতাংশ বাস্তবতা বিবেচনায় অর্জনযোগ্য নয়। এ বছরের মত আগামী অর্থবছরেও শেষ দিকে এসে তা আবার কমিয়ে আনতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করছে, এনবিআর ও এনবিআর বহির্ভূত প্রাথমিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার (১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা) মধ্যে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে। এর মধ্যে এনবিআরের ঘাটতি হতে পারে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই আগামী বাজেটে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনীতির সামপ্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিপিডি এমন অভিমত দিয়েছে।সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৩০ শতাংশ বাড়তি রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হলে তা চ্যালেঞ্জিং হবে। কেননা সে জন্য এনবিআরের যে ধরনের সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন তা এখনো নেই।চলতি অর্থবছরে রাজস্বের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা থাকলেও গত মাসে তা কমিয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০কোটি টাকা করা হয়। এর উপর ৩০ শতাংশ পপ্র“দ্ধি ধরে আগামী অর্থবছরে তা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩২০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এর বাইরে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হতে ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি ও আমদানি পর্যায়ে শুল্ক খাত থেকে ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদে বাজেট বক্তৃতায় এ লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরতে পারেন।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। আলোচ্য সময়ে ১ লাখ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন।এটি হবে বাংলাদেশের ৪৪তম বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬তম। আর অর্থমন্ত্রী হিসাবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের নবম বাজেট। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতই প্রথম অর্থমন্ত্রী যিনি ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত একনাগাড়ে ৭টি বাজেট পেশ করছেন। অবশ্য তিনি ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে আরো দুটি বাজেট পেশ করেছিলেন।গত বছরের বাজেট পেশের সময় তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বাজেটে উ”চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আয় বৈষম্য কমিয়ে এনে জনগণকে দারিদ্রর বৃত্ত থেকে বের করার গতিশীল প্রক্রিয়া থাকবে।দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রেখে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, অবকাঠামো খাতের আরো উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে বিশেষ মনোযোগ প্রদান চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।আর অর্থমন্ত্রী যখন আগামী অর্থবছরের বাজেটের কৌশল নির্ধারণ করছিলেন, তখন রাজনীতির নামে সারা দেশে সংঘটিত নজিরবিহীন সহিংসতার ফলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ছিলেন শংকিত । তারপরও অর্থমন্ত্রী তখনকার পরি¯ি’তিতে দৃঢ়তার সাথে আশা পোষণ করেছিলেন যে, রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। সে অনুযায়ী অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান এবং বিশ্বব্যাংক ও সিপিডিসহ থিং ট্যাংদের প্রক্ষেপণে প্রমাণিত হচ্ছে যে অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ সঠিক ছিল।সকল সংশয় এবং পূর্বাভাস অসত্য প্রমাণিত করে চলতি অর্থবছরে (২০১৪-১৫) ৬.৫১ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন শক্তিশালী অব¯’ানে রয়েছে , যা বাইরের প্রতিঘাত সহ্য করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রতিকূলতাও সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করেছে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি বাজেট ও আর্থিক নীতিমালায় বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ রেখেছেন।অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ থেকে ৭.৩ ভাগ নির্ধারনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।অর্থমন্ত্রী পরিস্কার করেছেন যে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস ও বিদ্যুত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, শিক্ষা,স্বাস্থ্যএবং অন্যান্য সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকেও বাজেটে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।মুহিত সাংবাদিকদের বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে। তবে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেয়া হবে।মুহিত বলেছেন, আসন্ন বাজেটে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মতো চলমান বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হবে।অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে কর্মসং¯’ান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তাবলয় খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দিয়ে দারিদ্রতা হ্রাসের চলমান পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে। ইতোমধ্যে দেশে দারিদ্র হার ২০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন আগামী অর্থবছরের বাজেট ও আর্থিক নীতি অদূর ভবিষ্যতে দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সহযোগী ভূমিকা পালন করবে।অর্থমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটবে বলেও আশাবাদী। গত ৫ বছর ধরে এটি দুই শতাংশের ওপরে রয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি।এর আগে তিনি বাজেট-পূর্ব আলোচনায় সাংবাদিকদের বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ফলে ২০১৮ সালে বাজেটের আকার ৫ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। অবশ্য আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা হতে পারে। আর এটা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৫৬০ কোটি টাকা বেশী।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) ইতোমধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৯৭ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক কর্মসূচির চেয়ে ২৯.৩৩ ভাগ এবং মূল বাজেটের বার্ষিক কর্মসূচির তুলনায় ২০.৭৭ ভাগ বেশী।গত অর্থবছরের মতো এবারো অর্থমন্ত্রী পাওয়ার পয়েন্টে বাজেট উপস্থাপন করবেন।বাজেট ডকুমেন্ট অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটেwww. bangladesh.gov.bd,www. nbr-bd.org, www.plancomm.gov.bd, www.imed.gov.bd,www.bdpressinform.org,www.pmo.gov. www.bssnews.net পাওয়া যাবে।অর্থমন্ত্রী শুক্রবার বিকাল ৪টায় বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।