DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_G_M_Kader_firstnewsbd

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ জুন: জাতীয় পার্টিতে সর্বময় ক্ষমতার মালিক পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু তার এই পদের পরেই আরও একটি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু তার অথবা রওশন এরশাদের অবর্তমানে দলের কাণ্ডারি কিংবা তাদের উত্তরসূরী হিসেবে একজনকে গড়ে তুলতে কো- চেয়ারম্যান নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর এ পদে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে।মূলত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ভবিষ্যতে পার্টিকে রক্ষা, নিজ পরিবারের সদস্যদের পার্টিতে অবস্থান শক্ত করতে এবং চলমান সময়ে দলের নানা বিষয় দেখভাল করতেই এই পদের সৃষ্টি করে। তবে কেউ কেউ বলছেন কোনমতেই যাতে অন্য ব্যক্তিরা দলকে কুক্ষিগত করতে না পারেন এসব কথা বিবেচনা করেই এই পদের সৃষ্টি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, পদটির প্রস্তাব আসার পর পাটিৃর কোন বিশ্বস্ত নেতাকেই বসাতে সাহস পাচ্ছিলেন না। অবশেষে নানাদিক চিন্তা করেই জিএম কাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হল। এব্যাপারে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও জাপার সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় করা এক গোপন বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্তও হয়েছে। ফলে চলতি মাসেই তা কার্যকর করা হতে পারে বলে জানিয়েছে জাপার একটি সূত্র।জাপার সূত্রটি জানায়, গত ২৮ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় রওশনের এরশাদের গুলশানের বাসায় মিলিত হন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ, জিএম কাদের, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও রওশন এরশাদ। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। এই গোপন বৈঠকে দলের বর্তমান অবস্থা, পার্টির মধ্যে কারা কারা সক্রিয়, আগামীর পরিকল্পনা, রওশন এরশাদ এবং এরশাদের অবর্তমানে দলের ভবিষ্যত নেতা, চলমান পরিস্থিতিতে করণীয়, দলে দালাল চিহ্নিতকরণ, নতুন মহাসচিব আসার পর গত এক বছরে দলের সফলতা ও বিফলতাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এসব আলোচনা শেষে দলকে রক্ষার কথা জোরালোভাবে ওঠে এরশাদের কণ্ঠেই। তখনই অন্য তিনজনের একজন দলকে রক্ষার জন্য কো- চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। প্রস্তাব পেয়েই এরশাদ বেশ খুশি হয়ে গ্রহণ করেন এবং তা সিদ্ধান্ত আকারে নিতে বলেন।

সূত্রটি আরও জানায়, এমন প্রস্তাবে কাকে করা হবে সেই কো-চেয়ারম্যান তা নিয়ে ভাবতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে রুহুল আমিন হাওলাদার জিএম কাদেরকেই সেই পদে বাসানোর জন্য পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে তখনই একমত হন রওশন-এরশাদ। তারা কাদেরকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বলেন। কিন্তু এসময় জিএম কাদের তাদের এমন প্রস্তাবে কোন উত্তর দেননি বা না সূচক কোনো কথাও বলেননি। ফলে তারা প্রস্তাবটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রেসিডিয়াম বৈঠকে তোলার ব্যাপারে রওশনকে নির্দেশ দেন এরশাদ।জিএম কাদের এরশাদের ছোট ভাই এবং তাকে কো-চেয়ারমান করা হলে ভবিষ্যতে দলকে নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না পাশাপাশি এখন বর্তমান মহাসচিবের বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলাও বন্ধ হয়ে যাবে বলে হাওলদার ধরেন।

এই বৈঠকের প্রায় দুমাস আগে আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে তা কোথায় কোন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভাল করে জানা যায়নি। আর এসব বৈঠকের মূল মূল পরিকল্পনা করেন রুহুল আমিন হাওলাদার।তিনি এখন দলে বেশ সক্রিয় ভুমিকা রাখার জন্য সর্বদাই এরশাদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।তবে কো-চেয়ারম্যানের পদ সৃষ্টি হলে কিছু সমস্যাও বাধবে। তবে ভীত নন এরশাদ। কারন এমন সমস্যার সৃষ্টি হোক তা স্বয়ং এরশাদ নিজেই চান। আর চান বলে তিনি কো-চেয়ারম্যান পদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন।পার্টির কয়েকজন নেতা জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এমন পদ সৃষ্টি হলে চেয়ারম্যান ও মহাসচিব দুজনেই ক্ষমতা অনেকাংশে কমে আসবে। তখন যে কোন নেতাকে বহিস্কার করতে হলে কো-চেয়ারম্যানের সম্মতি ও স্বাক্ষর লাগবে। তার অনুমতি ছাড়াও অনেক কাজ করা সম্ভব হবে না। ফলে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের বদলে বেশি বিপাকে পড়বেন তখন মহাসচিব বাবলুই। কো-চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরকে বসানোর পর প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু কোন কোন বিষয়ে তুলে ধরে এই পদকে বাতিলের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারেন তাও ভাবছেন এরশাদ। তবে এই সিদ্ধান্তটি এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে না এবং একটু সময় লাগবে বলেও জানায় জাপার সূত্রটি।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, পার্টির আনিস বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজেকে পার্টির কো- চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন। আর এ বিষয়টি এরশাদের কানে আসার পরই তিনি বেশ নড়েচড়ে উঠেছেন। ফলে আনিসের কো-চেয়ারম্যান হওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে দলকে মুক্ত করতেই নিজ ভাইকে সেই পদে বসাচ্ছেন এরশাদ।নাম প্রকাশ না করা শর্তে পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম বলেন,দলকে তো আনিস ও বাবলু দুইজনই পার্টিকে মেরে ফেলে ঘোলা পানি মাছ শিকার করছে। তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেন।তিনি আরও বলেন, ইদানিং বাবলু এরশাদ স্যারকে তেমনভাবে মান্য করেন না। বাবলুকে যারা পছন্দ করেন এবং তার কথায় কাজ করেন যেসব নেতাদের তিনি জাপাতে এবং কমিটিতে স্থান করে দেয়ার জন্যও নানা ষড়যন্ত্র ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। আর এ বিষয়টি স্যার বিভিন্নভাবে আকার ইঙ্গিতে বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি এখন দলকে বাচানোর জন্য নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন।পার্টির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যে হারে বহিষ্কার শুরু হয়েছে তাতে তো দলই থাকবে না। দলে শুধু থাকবেন বাবলু ও আনিস। তারা তো সেই পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে। আর তাদের পরিকল্পনার কথা স্যার বুঝতে পেরেছেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন হয়তো।তবে এ বিষয়টি এখনও জানেন না দলের বর্তমান মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। বাবলু জানতে পারলে এরশাদের এমন পরিকল্পনাকে ভেস্তে নিয়ে যেতে পারেন বলে গোপনেই এগোচ্ছেন এরশাদ।তবে এ ব্যাপারে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের বলেন, এমন প্রস্তাব আগে দেয়া হয়েছিল কিন্তু আমি রাজি হইনি। আর এ বিষয়টি আমার তেমন কোন জানা নাই। বিষয়টির ব্যাপারে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর কাছে জানতে ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।