দৈনিকবার্তা-কুমিল্লা, ০৩ জুন: কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলায় অন্তত সাতজন দগ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার বাংলাদেশ পাট গবেষণা কেন্দ্রের কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই হামলা চালানো হয়। দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এই দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।মঙ্গলবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলা গেট ও পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।আহতরা হলেন- রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষক সঞ্জিত শর্মা, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের উপদেষ্টা অঞ্জন দেব, রাঙ্গামাটি জেলার সুধির চন্দ্র নাথের ছেলে সুমন চন্দ্র নাথ (২৪), গোপালগঞ্জ সদর এলাকার সায়দুর রহমানের ছেলে ইমরান মিয়া (২৮), নারায়ণগঞ্জের জহিরুল ইসলাম, স্ত্রী লাভলী আক্তার ও রাঙ্গামাটির খোকন চাকমা।গাড়ি চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে রাঙামাটির উদ্দেশে ছেড়ে আসার পর বাসটি চান্দিনা বাস স্টেশন অতিক্রম করে উপজেলা গেট ও পাট গবেষণা কেন্দ্রের সামনে পৌঁছালে হঠাৎ গাড়িতে বিকট শব্দ হয় এবং আগুন ধরে যায়। আমি তাৎক্ষণিকভাবে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করি এবং আমার হেলপারদের সহযোগিতায় আগুন নিভাতে সক্ষম হই।
তিনি আরো জানান, গাড়ির সামনের অংশের বাম দিকের দু’টি সিটে আগুন ধরলে ওই সিটের দুই যাত্রী দগ্ধ হন। এ সময় ছুটাছুটি করে দ্রুত নামার সময় আরও পাঁচজন আহত হন।ইউনিক পরিবহনের ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীবাহী বাসটি ঢাকা থেকে রাঙামাটি যাচ্ছিল।দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন অঞ্জন চন্দ্র চাকমা (৪৮) ও রঞ্জিত চন্দ্র চাকমা (৪৫)।তাঁদের বাড়ি রাঙামাটি। তাঁদের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।কুমিল্লা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুর রহমানের ভাষ্য, যাত্রীবাহী বাসটি রাত ১২টার দিকে চান্দিনায় পৌঁছালে পেট্রলবোমা হামলার শিকার হয়। এতে সাতজন যাত্রী দগ্ধ হন। দগ্ধ ব্যক্তিদের প্রথমে জেলার বুড়িরচং উপজেলার ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়।সেখান থেকে নেওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।সেখান থেকে দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, সেখানকার বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন রাঙামাটির খোকন চন্দ্র চাকমা (৩৩) ও সুমন চন্দ্র নাথ (৩০) এবং গোপালগঞ্জের এমরান হোসেন (২৫)। তাঁদের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
একই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জহিরুল ইসলাম (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী লাভলি আক্তার (২৮)।চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রসুল আহমেদ নিজামী বলেন, ঘটনার পরপর আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং আহতের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠাই। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ বা যান্ত্রিক ত্রুটি বলে ধারণা করা হলেও প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হয়েছে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় এ ঘটনা ঘটেছে।তবে কারা, কি কারণে এ হামলা করেছে তা জানা যায়নি। গাড়িটি উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। আহতদের প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়। সেখানে সঞ্জিত ও অজ্ঞন দেবের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, আহতদের মধ্যে সঞ্জিত ও অজ্ঞন দেবের অবস্থার অবনতি হলে তাদের ঢামেকের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। ইমরান, খোকন ও শ্যামল বর্তমানে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া জহিরুল ইসলাম ও লাভলি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে চলে গেছে।এদিকে, খবর পেয়ে বুধবার সকাল ১০টায় ডিজিএফআই কর্নেল একেএম নাজমুল হাসান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, হাইওয়ে পুলিশ (বাংলাদেশ পূর্বাঞ্চল)রেজাউল কবির, র্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার খুরশিদ আলম, চান্দিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রসুল আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দগ্ধদের প্রথমে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে গুরুতর দগ্ধ দুইজনকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া বাকি দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকিদের পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বাসে পেট্রলবোমা হামলার বিষয়ে ওসি বলেন, হঠাৎ কেন, কী কারণে এঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং দূ®কৃতিকারীদের ধরতে যৌথ অভিযান চালানো হবে।এদিকে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কুমিল্লায় চিকিৎসাধীন ৩ জনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে এবং ঢাকায় চিকিৎসাধীনদের জন্য ১৫ হাজার টাকার আর্থিক সয়তায়তা দেয়া হয়েছে।অন্যদিকে, পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় কুল্লিা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাশকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।