দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ জুন: রাতভর নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আসগার ও মহান আল্লাহর কাছে সারা বছরের ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো পবিত্র শবে বরাত।মুসলমানদের সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে বরাত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পালিত হয়েছে। এ রাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলসহ নফল ইবাদত-বন্দেগি পালন করেছেন।ফারসি শব শব্দের অর্থ রাত এবং বরাত অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে শবে বরাত অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী। আরবিতে একে বলে লাইলাতুল বরাত। ১৪ শাবান দিবাগত রাতটিই পবিত্র শবে বরাত। হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহান আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে সকাতরে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন।শাবান মাসের পরেই আসে পবিত্র মাহে রমজান। শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজান মাসের আগমনী বার্তা বয়ে আনে।
শবে বরাত উপলক্ষে মুসলমানদের বাড়িতে সাধ্যানুযায়ী হালুয়া, পায়েস, রুটিসহ উপাদেয় খাবার রান্না করা হয়। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠানো এবং গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। অনেকে মুক্ত হস্তে দান-খয়রাত করেন।পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।শবে বরাতের পরদিন অর্থাৎ আজ বুধবার সরকারি ছুটি। তবে সংবাদপত্রে ছুটি ছিল। তাই বুধবার পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। বৃহস্পতিবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে।শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মাগরিবের নামাজের পর থেকে শুরু করে ফজরের নামাজ শেষে আখেরি মোনাজাতসহ রাতব্যাপী লাইলাতুল বরাতের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা, ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করে। পবিত্র শবে বরাতে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিশেষ করে ফজরের নামাজের পর রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানসহ সারা দেশের কবরস্থানে হাজারো মানুষ জিয়ারত করে তাদের বাবা মাসহ আত্মীয় স্বজনদের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ দোয়া মোনাজাত করেন।মুসলমানদের জন্য মহিমান্বিত এ রাতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর সবগুলো মসজিদেই ছিল মুসল্লিদের ভিড়। এশার নামাজ দিয়ে শুরু করে ফজরের নামাযের পর আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শবে বরাতের ইবাদত। নামায ছাড়াও মুসলমানরা তাদের আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করতেও ছুটে গেছেন কবরস্থানে। আল্লাহর অশেষ কৃপা লাভের আশায় অনেকে গরিব, এতিম, মিসকিনদের টাকা পয়সা দান করেছেন।শবে বরাতের রাতটি বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহান আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি পালন করে রাত কাটান মুসলমানরা।মসজিদগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকেই চলে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত। গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন মুসল্লিরা। অনেকে শব-ই-বরাত উপলক্ষে নফল রোজাও রাখেন। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে সারারাত অতিবাহিত করেন।মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া খায়ের করেন।
সৌভাগ্যের এ রজনীতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মুসলমানগণ কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন। এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষগণ নফল রোজাও পালন করেন।বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে রাতভর চলে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল ও অন্যান্য এবাদত-বন্দেগী।মুসলমানদের বিশ্বাস, মহিমান্বিত এই রাতে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের ভাগ্য অর্থাৎ তার নতুন বছরের ‘রিজিক’ নির্ধারণ করে থাকেন।রাতব্যাপী এবাদত, বন্দেগী, জিকির ছাড়াও এই পবিত্র রাতে মুসলমানরা মৃত পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনসহ প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করে থাকেন। তাই এ রাতে কবরস্থানগুলোতেও মুসল্লীদের উপচেপড়া ভীড় দেখা গেছে।মহিমান্বিত এ রজনী ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালনের লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছেÑওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, হামদ্, না’ত, নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ এবং আখেরী মোনাজাত।পবিত্র এ রাতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররকসহ দেশের সকল মসজিদ রাতভর খোলা ছিল।এ রাতের বিশেষ অনুষঙ্গ কবর জিয়ারতের পাশাপাশি মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মসজিদে মসজিদে এশার নামাজের পর থেকেই দফায় দফায় ওয়াজ মাহফিল, জিকির ও মিলাদের পর বাদ ফজর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার জন্য আল্ল¬¬াহর রহমত কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র লাইলাতুল বরাত উদযাপিত হলো।বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এদিকে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত করেছে।