দৈনিকবার্তা-কক্সবাজার, ০৩ জুন: আন্দামান সাগর থেকে আটক ৭২৭ অভিবাসীকে টেকনাফ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের মংডুতে আনা হয়েছে।মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) চিঠির মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ৪২ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রাসেল ছিদ্দিকী।তিনি বুধবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে জানান, ৭২৭ জন অভিবাসীকে নিয়ে মিয়ানমারে আটক ট্রলারটি মংডু শহরে অবস্থান করছে। এসব অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছি কি না সে ধরনের তালিকা এখনো বিজিবির কাছে পৌঁছাইনি। মিয়ানমারে আটক অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলেও জানান তিনি।উল্লেখ্য, আন্দামান সাগর থেকে ৭২৭ অভিবাসীকে আটক করেছিল মিয়ানমারের নৌ বাহিনী। তারা সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দাবি করে আসছে। ইতোমধ্যে সাগর থেকে আরো ২০৮ জনকে আটক করে মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়া এলাকায় রাখা হয়েছে। যা বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা বরাবর।এদিকে, পাচারের শিকার ৭২৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীসহ একটি নৌকা বাংলাদেশের জলসীমার দিকে ঠেলে দেওয়ার কথা বলার পর ওই বক্তব্য ‘সংশোধন’ করেছেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। দেশটির তথ্যমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইয়ে হুতুত মঙ্গলবার বলেছেন, নৌবাহিনীর পাহারায় নৌকাটিকে একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাতে তাদের নাগরিকত্ব সনাক্ত করা যায়।একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকেও।
বিজিবি টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী জানান, ওই নৌকা ও আরোহীদের বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বিজিবিকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।মিয়ানমারের নৌবাহিনীর পাহারায় দুটি জাহাজে করে ওই অভিবাসীদের বুধবার নাফ নদী দিয়ে মংডু শহরে নিয়ে যাওয়া হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের পুশব্যাক নয়, স্থানান্তর করা হচ্ছে।গত শুক্রবার মিয়ানমারের দক্ষিণ উপকূলে ওই নৌকা আটকের পর দেশটির সরকার আরোহীদের বাঙালি বলে দাবি করে।এর চার দিনের মাথায় মঙ্গলবার সকালে মিয়ানমারের তথ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দামান সাগর থেকে আটক ওই নৌকার আরোহীরা বাংলাদেশে যেতে চান, মিয়ানমারে নয়।মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাদের সঙ্গে করে বাংলাদেশের জলসীমায় নিয়ে যাবে। নৌকার আরোহীদের সঙ্গে পানি ও খাবারও দিয়ে দেওয়া হবে। এটা তাদের ইচ্ছাতেই করা হচ্ছে।এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় মিয়ানমারের মন্ত্রী তার বক্তব্য সংশোধন করেন বলে রয়টার্সের পরের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এর আগে মিয়ানমার আরেকটি নৌকা থেকে প্রায় ২০০ জনকে উদ্ধারের পর তাদের বাংলাদেশি বলে দাবি করে, যদিও তারা রোহিঙ্গাদের আড়াল করে আরোহীদের বাংলাদেশি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে আসে।বিজিবি কর্মকর্তা মেজর রাসের বলেন, মিয়ানমারের নৌ-বাহিনী চিঠির বক্তব্যের বাইরে অন্য কিছু করার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করবে।বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সদস্যরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন, বলেন তিনি।সরকারের পদক্ষেপ ও পুলিশের তৎপরতায় সড়ক ও আকাশপথে মানবপাচার বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেছুর রহমান।আর এই কারণে এখন সাগরপথে মানবপাচার বেড়েছে বলে মঙ্গলবার ঢাকায় মানবপাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে আন্তঃদেশীয় পুলিশি সহযোগিতা জোরদার নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।
আন্দামান সাগরে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার মধ্যে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের এই কর্মকর্তার এই বক্তব্য এল। সাগরে ভাসমানদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর। মোখলেছুর বলেন, আগে স্থলপথে, বিমানবন্দর দিয়ে মানবপাচার হত বেশি। স্থলপথে, বিমান বন্দর দিয়ে যখন মানবপাচার বন্ধ হয়ে গেছে, তখনই নদীপথে, সমুদ্রপথে পাচারের প্রবণতা বেড়েছে।অনুষ্ঠানে বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মানবপাচার বন্ধে সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের তিনটি সেল কাজ করছে।মানবপাচারে জড়িত সাড়ে তিন হাজারের বেশি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় এদের মধ্যে আটজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে বলে জানান মোখলেছুর। তিনি বলেন, তিন হাজারের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অনেককে ধরা হয়েছে, অনেকে আবার বের হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।