bww8le6n

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০২ জুন: মুসলিম সম্প্রদায়ের সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবেবরাত উদযাপিত হবে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে।বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে সারারাত অতিবাহিত করছেন।মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া খায়ের করছেন।পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।সৌভাগ্যের এ রজনীতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মুসলমানগণ কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার সš‘ষ্টি অর্জনের জন্য এবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন। এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুগণ নফল রোজাও পালন করছে ।বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে রাতভর চলবে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল ও অন্যান্য এবাদত-বন্দেগী।মুসলমানদের বিশ্বাস, মহিমান্বিত এই রাতে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের ভাগ্য অর্থাৎ তার নতুন বছরের ‘রিজিক’ নির্ধারণ করে থাকেন।

রাতব্যাপী এবাদত, বন্দেগী, জিকির ছাড়াও এই পবিত্র রাতে মুসলমানরা মৃত পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনসহ প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করে থাকেন। তাই এ রাতে কবরস্থানগুলোতেও মুসল্লীদের উপচেপড়া ভীড় দেখা যাবে।মহিমান্বিত এ রজনী ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালনের লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছেÑওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, হামদ্, না’ত, নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ এবং আখেরী মোনাজাত।পবিত্র এ রাতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররকসহ দেশের সকল মসজিদ রাতভর খোলা থাকবে।এ রাতের বিশেষ অনুষঙ্গ কবর জিয়ারতের পাশাপাশি মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মসজিদে মসজিদে এশার নামাজের পর থেকেই দফায় দফায় ওয়াজ মাহফিল, জিকির ও মিলাদের পর বাদ ফজর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার জন্য আল্ল¬¬াহর রহমত কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র লাইলাতুল বরাতের সমাপ্তি হবে।বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। এদিকে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হবে।পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে আগামী বুধবার সরকারি ছুটি থাকবে।

মানুষ আল্লাহকে ভয় করে, জাহান্নামকে ভয় করে, কবরের আজাবকে ভয় করে। জান্নাতের কামনা করে। এ প্রেরণা থেকেই মানুষ শবেবরাতকে মূল্যায়ন করে। আল্লাহর রহমতের বিশাল সাগরের দিকে তাকিয়ে মাগফিরাতের আশা নিয়ে মানুষ আল্লাহর ঘর মসজিদে আসে। শবেবরাতকে কেন্দ্র করে সূর্যাস্তের পর থেকেই মানুষ মসজিদে আশা শুরু করে। রাত যত বাড়তে থাকে মানুষের এ সমাগম ততোই বাড়তেই থাকে। আমাদের মা-বোনেরাও পিছিয়ে নেই। বাড়ির ভিতরে তারাও জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই ইবাদতের মাধ্যমে এ রাত জাগার চেষ্টা করে। যারা বছরের অন্য দিনগুলো মসজিদে আসে না, যারা বছরের প্রতিটি রাত বিভিন্ন গুনাহের কাজে কাটিয়ে দেয়- তারাও এ রাতে মসজিদে আসে। গুনাহের অনুতাপে দগ্ধ হয়ে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিতে আসে। তারা মসজিদে এসে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহকে ডাকে। আল্লাহর কাছে অতীত কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায়। মসজিদে মসজিদে দ্বীনী আলোচনা হয়। আল্লাহর বড়ত্বের আলোচনা হয়। জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা হয়। মানুষ আলোচনা শুনে। অনেকেই এমন আছে যারা কখনোই কোনো দ্বীনী আলোচনা শোনার সুযোগ পায় না। তারা বছরের একবারের জন্য হলেও এ রাতের ওসিলায় দ্বীনী আলোচনা শোনার সুযোগ পায়। তারা প্রাণভরে আলোচনা শোনে।

দ্বীনী অবক্ষয়ের এ যুগে এ যেন প্রদীপের শেষ সলতের মতো জ্বলতে থাকে। তবে আল্লাহ যেন শেষ না করেন। বরং পতনের বেলাভূমি থেকে ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের শুভ সূচনা করেন। সারারাত ইবাদতে কাটানোর পর বহু মানুষকে দেখা যায় পরেরদিন তারা রোজা রাখে। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সরাদিন সংযম সাধনা পালন করেন।অনেক মানুষকে এ রাতে কবরস্থানেও যেতে দেখা যায়। অনেকের শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত। অনেকের প্রিয়তমা স্ত্রী সেখানে, আছে অনেকের স্নেহের সন্তানও। কারো শোয়ে আছে প্রিয় ভাই, বন্ধু কিংবা অন্য স্বজন। সেই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে প্রিয়জনের কথা মনে করে মানুষ কাঁদে। স্বজনদের মাগফিরাতের জন্য, কবরের আজাব মাফের জন্য আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাতে আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন। বনু কালব গোত্রের ছাগল পালের পশমের সংখ্যার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোককে তিনি ক্ষমা করেন। -তিরমিজি অন্য আরেক হাদিসে আছে, এক রাতে আল্লাহর নবী (সা.) উম্মত জননী হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান আজ কোন রাত? আজ মধ্য শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহতায়লা স্বীয় বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়ার দৃষ্টি দেন। ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন। রহমতপ্রার্থীদের রহমত করেন।