দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ জুন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাগরে উদ্ধার বাংলাদেশিরা স্বেচ্ছায় নয়, জোরপূর্বক পাচারের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক।মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে সাগর পথে বাংলাদেশিদের পাচারের ধরন ব্যাখ্যা করতে ইংরেজি ভাষায় মানবপাচারের ক্ষেত্রে প্রচলিত স্মাগলিং’ ও ‘ট্রাফিকিং শব্দ দুটির ব্যাখ্যা করেন তিনি। এশিয়ার অভিবাসন সঙ্কট নিয়ে শুক্রবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত আন্তঃদেশীয় বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই ব্রিফিং হয়।পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সাধারণভাবে কারও স্বেচ্ছায় পাচার হওয়াকে স্মাগলিং’ বলা হয়। অন্যদিকে ট্রাফিকিং শব্দটির সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অবশ্যই বলপ্রয়োগ, প্রতারণা ও নির্যাতনের উপাদান থাকতে হবে।সাগর পথে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় অমানবিক দেশান্তরের চলমান ঘটনাগুলোর মধ্যে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার হওয়া বাংলাদেশিদের আগামী একমাসের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সমুদ্র পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার হওয়া বাংলাদেশিদের আগামী একমাসের মধ্যে দেশে ফেরত আনা হবে। বিষয়টি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক বৈঠকেও জানানো হয়েছে।পাচার হওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ১২০০ থেকে ১৫০০ হবে বলে জানান তিনি।মো. শহীদুল হক বলেন, অবৈধভাবে সমুদ্র পথে মানবপাচার বন্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে মায়ানমার। এক সঙ্গে কাজ করলে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ সম্ভব হবে।মানবপাচারের সঙ্গে শুধু এ অঞ্চলের নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র জড়িত। যা অস্ট্রেলিয়া থেকে ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত, যোগ করেন তিনি।পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মানবপাচারে জড়িত চক্রটি প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করে থাকে। এরমধ্যে পাচার হওয়াদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় তো আছেই।
ইস্যুটি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাউন্সিলেও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব মিডিয়ারও ফ্রন্ট পেজে ছিল এ অঞ্চলের এ সমস্যাটি।এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মানবপাচারের আসল কারণ অভাব কিংবা দারিদ্র্য নয়, এর পেছনে আরও পারিপার্শ্বিক কারণ রয়েছে।‘লিগ্যাল উপায় যখন বন্ধ হয়ে যায়। তখনই অবৈধভাবে মানবপাচার বেড়ে যায়। যা যা শত শত বছর চলে আসছে,’ বলেন তিনি। মানবপাচার রোধে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় সে দেশের সঙ্গে একটি চুক্তি হবে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। তবে মোদির সফর নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। শহীদুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ব্রিফিং করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’সচিব বলেন, মানবপাচারের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে বিষয়টি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে যোগ করেন তিনি।