দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ জুন: দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে জনসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মঙ্গলবার রাজধানীতে বিসিএস ৯২ ও ৯৩তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।রুটিন কাজের বাইরে প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেশের উন্নতির জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তাও করতে হবে এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন দেশের নাগরিকদের আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে হবে।প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে হলে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই এসময় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জনগণের সেবায় কাজ করার আহ্বান জানান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের গৃহিত সব পদক্ষেপ জনকল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে সীমিত সম্পদ দিয়েও বৃহৎ অর্জন সম্ভব।সমুদ্রসীমা অর্জন, স্থলসীমান্ত চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমস্যার সমাধান এটাই তার রাজনীতি।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির ৯২ ও ৯৩তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ৭৯জন প্রশিক্ষণার্থীর হাতে সদন তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের শুধু নিয়মের মধ্যে না থেকে দেশের উন্নয়নে উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে কাজ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে যাবেন। আপনাদের উদ্ভাবনী চিন্তা থাকতে হবে। শুধু রুটিন কাজ নয়, কিভাবে কাজ করে দেশের উন্নয়ন করা যায়- সেভাবে কাজ করতে হবে।নবীন কর্মকর্তাদের দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে পারলেই অর্থনৈতিক সাবলম্বিতা অর্জন করব।
প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে সব ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবং বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর সোহরাব হোসেন নতুন ক্যাম্পাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জায়গা চান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও মনে করি, একটা ভালো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরাও দেখব, কোথায় ভালো হয়।জনগণকে কীভাবে সুন্দর জীবন দেব- সে লক্ষ্যেই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এ পর্যায়ে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯২ জনকে সচিব, অতিরিক্ত সচিব পদে ২০৩ জন, যুগ্ম-সচিব পদে ১ হাজার ১১৩ জন এবং উপ-সচিব পদে ১ হাজার ৮২ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি এবং গত এপ্রিলে ২২৭ জনকে অতিরিক্ত সচিব পদে, ২৮৮ জনকে যুগ্ম-সচিব পদে এবং ৩২১ জনকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।যারা পদোন্নতি পাননি, তাদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি দেওয়ার কথাও বলেন সরকার প্রধান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাতে সময় খুব কম। আমরা নির্বাচিত হয়ে আসি পাঁচ বছরের জন্য। এখন হাতে তিন বছর সাত মাস সময় আছে। যারা প্রশাসনে দায়িত্বে থাকে, তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের জট নিরসনে রোডম্যাপ তৈরি হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি, এ রোড ম্যাপ অনুযায়ী চললে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সব ব্যাকলগ দূর হবে। শুধুশ্রেণিকক্ষ নির্ভর প্রশিক্ষণ নয়, প্রয়োজন দায়িত্ব-নির্ভর প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আইন ও প্রশাসন কোর্সে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সনদ এবং কৃতি প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ক্রেস্ট বিতরণ করেন।অনুষ্ঠানে প্রশাশনের পক্ষে রেক্টর অ্যাওয়ার্ড পাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস এবং আইনের পক্ষে সৈয়দ আশফাকুজ্জামান বক্তব্য রাখেন। জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।