দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ মে: পুরো বিশ্বের না হোক অন্ততপক্ষে এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় যা যা করা দরকার তার সবটুকু বাংলাদেশ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শনিবার ঢাকায় ‘দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি ২০১২ সালে বিশ্বের সব দেশের সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি (১.৭৬ ট্রিলিয়ন) ডলার উলে¬খ করে একথা বলেন তিনি।একইসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূর করতে প্রতি বছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্য অপচয় পরিহারে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর পৃথিবীতে সমরাস্ত্রে যে ব্যয় হয় তা দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব খাদ্য নিরাপত্তা শুধু খাদ্য উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে না সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহও এক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে তার সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ এ কথা জানিয়ে আরো বলেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য যেন দেশে হিংসাত্মক পরিণতি ডেকে না আনে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান।সব দেশের সামরিক ব্যয় কমানোর মাধ্যমে বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য সমূলে উৎপাটন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সমরসজ্জার পেছনে যে ব্যয় হয়, তার একটু অংশ যদি দারিদ্র্য দূর করার জন্যে ব্যয় হত, তাহলে আর বিশ্বে দারিদ্র্য থাকত না।সামরিক ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ৮ দিনের ব্যয় ৩০ বিলিয়ন ডলার।২০১২ সালে গোটা বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয় বিশ্বের মোট জিডিপির ২.৫ শতাংশ। মাথাপিছু ব্যয় হয়েছে ২৪৯ ডলার।এর বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষের চাহিদা অনুযায়ী খাবার না পাওয়ার কথা আসে শেখ হাসিনার কথায়।খাদ্য নিরাপত্তা শুধু খাদ্য উৎপাদনের উপর নির্ভর করে না। আমাদের এ বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, তা সব মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট।প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করাকে জটিল উলে¬খ করে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য, ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বণ্টন ব্যবস্থা, সংঘাত, অধিক জনসংখ্যা, খাদ্য ও কৃষি নীতিমালা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয় খাদ্য প্রাপ্যতাকে প্রভাবিত করে।
সভ্যতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হলেও আজও এ বিশ্বের সকল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখানে যখন কথা বলছি, তখনও বিশ্বের নানাপ্রান্তে কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে আছেন।কিন্তু এ বিশ্বের একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে কেন? কেন তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে?বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি ৫০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। প্রতি নয়জনে একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন।খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথ উদ্যোগের কথা উলে¬খ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই বিশ্বের একটি মানুষও যেন অনাহারে না থাকে; অপুষ্টিতে না ভোগে। আমরা প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে চাই।
সার্ক ফুড ব্যাংক দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃবৃন্দের কাছে আমার অনুরোধ, আসুন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সার্ক খাদ্য ব্যাংক প্রকল্পটি যথাসম্ভব দ্রুত ও কার্যকরভাবে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে প্রতিষ্ঠিত করি।দক্ষিণ এশিয়ার একজন বিপন্ন মানুষকেও যেন খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারাতে না হয়, সেজন্য সার্ক খাদ্য ব্যাংক হোক বিপদের বন্ধু।দক্ষিণ এশিয়ার কৃষকদের হাতে যেন নিজেদের শস্যবীজের অধিকার সংরক্ষিত থাকার ওপর গুরুত্বারোপও করেন প্রধানমন্ত্রী।দারিদ্র্য বিমোচনে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও শেখ হাসিনা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।হিংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশেই, সকল প্রান্তেই মতনৈক্য এবং মতভিন্নতা থাকবে। রাজনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির নানা ইস্যুতে থাকবে মতভিন্নতা।শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখনই দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলি, তখনই বলি খাদ্য অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তায় এক হয়ে কাজ করার কথা। কারণ এ নিয়ে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে।তিনি বলেন, বিশ্বে সামরিক খাতে যে ব্যয় হয় তার একটি অংশ যদি প্রতিনিয়ত খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যয় হতো তবে এ বিশ্বে কোনো খাদ্য হাহাকার থাকতো না। একজন মানুষও অপুষ্টিতে থাকতো না।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা- এ মৌলিক অধিকারগুলো উলে¬খ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের এ ৫টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের স্থান সর্বাগ্রে। সভ্যতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হলেও আজও এ বিশ্বের সব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।প্রধানমন্ত্রী পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ৭.৩ বিলিয়ন মানুষের এ বিশ্বে এখনও প্রায় ৮০৫ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। অর্থাৎ প্রতি নয় জনে একজন অপুষ্টিতে রয়েছেন। আবার এর মধ্যে ৭৯১ মিলিয়ন মানুষের বাস উন্নয়নশীল দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২৭৬.৪ মিলিয়ন মানুষ এ দলভুক্ত।খাদ্য নিরাপত্তা শুধু খাদ্য উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে না। আমাদের এ বিশ্বে যে পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, তা সব মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের চাহিদা অনুযায়ী খাবার পান না -বলেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য শান্তিতে গত বছর নোবেল পুরস্কার জয়ী কৈলাস সত্যার্থীকে অভিনন্দন জানান।