Narendra Modi guarded by Black Cat commandos-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩১ মে : আগামী ৬-৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে সে দেশের ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো ও স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) সদস্যরা। আগামী ১ জুন ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো ও এসপিজি সদস্যরা নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় আসছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির জন্য। মোদির নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য ব্ল্যাকক্যাট ও এসপিজি’র সাথে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর সদস্যদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আগামী ৩ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত হোটেল সোনারগাঁও অন্য কোন অতিথিদের জন্য বুকিং থাকবে না। তবে মোদী সোনারগাঁও হোটেল ছাড়াও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় থাকতে পারেন এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পর্যবেক্ষক মহল। কিন্তু মোদী ঢাকায় অবস্থানকালে কোথায় থাকবেন পরিস্থিতি বিবেচনায় তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ব্লাকক্যাট কম্যান্ডোরা। ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ এলিট (অভিজাত) বাহিনী। এরা ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) সদস্য। সন্ত্রাসী হামলা দমন ও দেশকে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করাই এদের দায়িত্ব। ভারতীয় সেনাবাহিনী, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরকে নিয়ে ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো গঠিত।

নিরাপত্তার দায়িত্বে ব্ল্যাকক্যাট কমান্ডো ও স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ

বাংলাদেশের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)ও একই ধারনায় গঠিত। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী থেকে বাছাইকৃত ‘শার্প শ্যুটার’ (দ্রুত গুলি করতে সক্ষম) সদস্যদের নিয়ে এসএসএফ গঠিত। দ্রুত গুলি করতে সক্ষম এমন সদস্যদেরকে নেয়া উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন সন্ত্রাসী ভিভিআইপিদেরকে গুলি করতে উদ্যত হচ্ছে বুঝতে পারলে তাকেই এসএসএফ আগে গুলি করে হত্যা করবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন স্পেশাল প্রটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) ১৯৮৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের আইন দ্বারা গঠিত বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের নিকটতম পরিবারকে (পিতা-মাতা ও সন্তান) নিরাপত্তা প্রদানের জন্য এটি গঠিত হয়। এর প্রধানকে পরিচালক বলা হয়। শুরু থেকেই এ পদটিতে পুলিশ কর্মকর্তরা রয়েছেন।

সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে নিয়ে এসপিজি গঠিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ও সন্তান হিসেবে সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল ও প্রিয়ংকা গান্ধী এসপিজির নিরাপত্তা পাচ্ছেন। তবে কেউ চাইলে এ নিরাপত্তা নাও নিতে পারেন।

নরেন্দ্র মোদির জন্য ঢাকায় নিরামিষের শত পদ

বাংলাদেশ সফরকালে মাছ খাবেন না। ঢাকার বিখ্যাত কাচ্চি বিরিয়ানি তাও খাবেন না। মাংসের নানা কিসিমের পদও খাবেন না! ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একে স্বল্পাহারী, তাও আবার শাকাহারী৷ মাছ-মাংস মোটে ছুঁয়েও দেখেন না৷ তারপরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে নরেন্দ্র মোদির খাবারের জন্য চলছে এলাহি আয়োজন। একশো রকমের নিরামিষ পদ রেঁধে সাজিয়ে দেওয়া হবে প্রিয় অতিথি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে৷

তালিকার মূল খাবারের নামটি হচ্ছে ‘ভাঘারেলি খিচুড়ি’৷ মসুর ডাল ও নানা ধরনের সবজি হচ্ছে এর উপকরণ৷ একে বাংলাদেশে ‘মশালা খিচুড়ি’ও বলে৷ সঙ্গে থাকবে নানা ধরনের এবং স্বাদের ডালনা, সর্ষে দিয়ে সজনে ডাঁটা, আমের চাটনি, সেও নানা স্বাদের৷ থাকবে মোদির নিজস্ব পছন্দ ‘ভিন্ডি কড়ি’, ভিন্ডি অর্থাৎ ঢ্যাঁড়শ আর দুধ দিয়ে তৈরি৷ মোদির পছন্দের গুজরাটি খাবার ‘সাদা খাট্টা ধোকলা’ও থাকবে৷ এসবের সঙ্গে থাকবে তাজা ফল, আর অবশ্যই বাংলাদেশের বিখ্যাত পিঠেপুলি, পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ৷

নেপালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময়ই ভারতের নিরামিষভোজী প্রধানমন্ত্রীর অন্য ধরনের খাদ্যাভ্যাস সংবাদমাধ্যমের নজরে আসে৷ সাংবাদিকরা রীতিমত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান, কী কী খেতে পছন্দ করেন তিনি৷ তখনই মোদি বলেছিলেন, তিনি খিচুড়ি খেতে ভালবাসেন৷ এ ছাড়া যে কোনও সবজি৷ খাওয়া নিয়ে কোনও বিলাসিতা নেই তাঁর৷ তিনি চান না যে তাঁর খাওয়া দাওয়া নিয়ে তার মেজবানের অসুবিধা হোক। তিনি স্রেফ সুস্থ, সবল থাকতে চান৷ যদিও মোদিকে আপ্যায়ন করতে গিয়ে অসুবিধে যে হয় না, তা নয়৷ গত সেপ্টেম্বরে মোদি যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যান, তখন নবরাত্রি পালিত হচ্ছিল ভারতে৷ দিনক্ষণ মেনে নবরাত্রির উপবাস করছিলেন মোদি৷ যে কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার দেওয়া নৈশভোজে খাবার খাওয়া দূরে থাক, এক চুমুক পানিও পান করেননি তিনি৷ এবার বাংলাদেশ সফরের দিন ঠিক হতেই খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তর থেকে নরেন্দ্র মোদির পছন্দের খাদ্যতালিকা জানতে চাওয়া হয়৷ তিনি কী কী খান না, সেটাও জেনে নেওয়া হয়৷ দিল্লি এবং ঢাকার হাইকমিশনের মাধ্যমে এই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য বিনিময় চলছে বলে জানা গেছে৷