DoinikBarta_দৈনিকবার্তা_29-05-15-PM_Sohorawardi Uddan-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ মে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতি বিজয়ীর দল। কিন্তু এই জাতির গৌরব ভূলুণ্ঠিত করেছিল পঁচাত্তুরে। আবার তা ফিরিয়ে এনেছি। এত আত্মত্যাগ এতো বৃথা যেতে পারে না। কোনো জাতির ভিশন না থাকলে সে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। সে লক্ষ্যে আমরা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। তা বাস্তবায়ন করব।শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া গণসংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সবাইকে। বাংলার মানুষের প্রতি। যেদিন বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলাম, আমার মা বাবা প্রিয় রাসেলকে ফিরে পাই না। কিন্তু বাংলার মাটিতে ফিরে পেয়েছিলাম হারানো মায়ের চিহ্ন, হারানো বাবার চিহ্ন।তিনি বলেন, তখন আমার পিতার সোনার বাংলা গঠন করতে যা কিছু করা দরকার, যত আত্মত্যাগের দরকার তার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের সংবর্ধনা আপনারা দিয়েছেন তা আমার প্রাপ্য না। এটা প্রাপ্য জনগণের। তাই আমি জনগণের জন্য এই সংবর্ধনা উৎসর্গ করলাম।তিনি বলেন, ভারতকে ধন্যবাদ জানাই স্থল সীমানা চুক্তির জন্য। আমরা ভারত-বাংলাদেশের সেই বন্ধুত্ব পেয়েছি। তারা এর জন্য লোকসভায় তাদের সংবিধান পরিবর্তন করেছেন।

তিনি বলেন, কোনো দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা যায়। আমাদের তৃতীয় পক্ষ লাগে নি। এটা আমাদের কূটনীতিক সাফল্য শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছে। এই দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিল। এখন সেই বাস্কেট উন্নয়নে ভরপুর।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করায় আমাকে যে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে এর প্রাপ্য কেবল আমার নয়, বাংলার মানুষের। তারা আমাকে বারবার সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা ধূলিস্মাৎ করে বাঙালিকে পরাজিত করতে চেয়েছিল তারা। আমি সেই মর্যাদা ফেরাতে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বাবা মন প্রাণ দিয়ে বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। তার দেখানো পথে আমি দেশ গঠনে নেমে পড়ি।তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি। এরপর ২০০৯ সালে আবারও সরকার গঠন করি। দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করি। আমি বাংলার মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই এ সংবর্ধনা আমার প্রাপ্য নয়, এ সংবর্ধনা বাংলার মানুষের প্রাপ্য।ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য শেখ হাসিনাকে এ সংবর্ধনা দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। নাগরিক কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশরতœ উপাধি দেন ।

প্রধানমন্ত্রীর এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুপুরের পর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন সামাজিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। এরমধ্যে বৃষ্টির বাগড়াও নেতাকর্মীদের স্রোতে ভাটা ফেলতে পারেনি। ভারতীয় পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল পাশে দীর্ঘকাল ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের বাধা কাটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দলে দলে মিছিল নিয়ে এই নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দিতে এসেছেন।সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন নাগরিক কমিটির সভাপতি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ৩টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সৈয়দ শামসুল হক তাকে স্বাগত জানান। তবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাদ্য বাজিয়ে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সংবর্ধনাস্থলে আসতে থাকেন দুপুর থেকেই।বিকাল ৪টার পরে জাতীয় সংগীত ও ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সৈয়দ শামসুল হক সূচনা বক্তব্য দেন।সূচনা বক্তব্যের পরসৈয়দ শামসুল হকের রচিত মর্ম সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশিত হয়। নৃত্যাঞ্চলের সদস্যরা দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অভিজ্ঞানপত্র পাঠ করেন। এর আগে, শেখ হাসিনার হাতে নৌকার প্রতিকৃতির স্মারক তুলে দেন নাগরিক কমিটিরসভাপতি সৈয়দ শামসুল হক। আর অভিজ্ঞানপত্র পাঠের পর কাঠের ওপর শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি সম্বলিত একটি স্মারক আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হাতে তুলে দেন আনিসুজ্জামান।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শিক্ষাবিদ অনুপম সেন, অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান, ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন।তাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে সংগীত পরিবেশনা। মিতা হক ও মহিউজ্জামান চৌধুরী গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি, তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী! মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, ঢাকার দুই মেয়র,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য,জাতীয় প্রেসক্লাবের নতুন কমিটির সভাপতি শফিকুর রহমান, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী নেতা, আইনজীবী, পেশাজীবীসহ ঢাকা এবং আশেপাশের জেলাগুলোর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।