দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ মে: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ৩০ মে শনিবার। মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে গত ২৭ মে থেকে ১৫ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্রগ্রামে কতিপয় বিপদগামী সেনা সদস্যের হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নির্মমভাবে নিহত হন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে বিএনপি ‘শাহাদাত বার্ষিকী’ হিসেবে পালন করে থাকে।
কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে দেওয়া জিয়াউর রহমানের ঘোষণা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য অয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।জিয়াউর রহমানের ৩৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধমে পাঠানো এক বাণীতে এ মন্তব্য করেন বিএনপি’র মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।ড. রিপন তার বাণীতে বলেন, শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত। জীবদ্দশায় জাতির চরম ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তাঁর অনন্য কীর্তির কথা আমরা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।বাণীতে তিনি আরো বলেন, ৭১ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা ঠিক সেই মুহুর্তে ২৬ মার্চ মেজর জিয়ার কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে এবং সে প্রেক্ষাপটে দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।স্বাধীনতাত্তোর দমনমূলক শাসন শোষনের যাঁতাকলে মানুষের প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত, দেশের মানুষের একের পর এক মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে।
তিনি বলেন, মু্ক্িতযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয় স্বাধীনতাউত্তর পর্যায়ে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির উত্থানে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা পূণ:প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শাসনামলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংহত হয়। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে তিনি দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করেন।
গনমাধ্যমে পাঠানো বাণীতে তিনি আরো বলেন, এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশী-বিদেশী চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। এই চক্রান্তকারীরাই ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তথাপিও তিনি মানুষের হৃদয় থেকে বিস্মৃত হননি। জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে আছেন তিনি আজও।বাণীতে তিনি আরো বলেন, জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, দলীয় গণতন্ত্র এবং জনগণের ক্ষমতায়নে প্রয়োজন আজ ইস্পাতকঠিন গণঐক্য। রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার সূচিত কর্মসূচি ও রাজনৈতিক দর্শন লালন করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদতবার্ষিকী সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি উদ্বাত্ত আহবান জানাচ্ছি। এদিকে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বেলা ১১ টায় শেরেবাংলা নগরস্থ জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আগামীকাল শনিবার জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৩৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৬ টায় নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনিমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। একইভাবে সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করা হবে।জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে মাজারে কোরানখানী ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বেলা ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড্যাব এর উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষধ বিতরণ করা হবে। বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা মহানগর বিএনপি’র উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন বেগম খালেদা জিয়া।