দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ মে: রাজধানীর কাওরান বাজারের পাশে নির্মাণাধীন ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ভবনের খোঁড়া গর্তের পাশের সড়ক ও হোটেল সুন্দরবনের সীমানাপ্রাচীরের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে হোটেল সুন্দরবন ও পাশের সি আর দত্ত সড়ক।এ ঘটনায় ওই এলাকার আশপাশের আরো বেশ কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান। মেয়র বলেন, হোটেল সুন্দরবনসহ আশপাশের সড়ক ও ফুটপাত ঝুঁকিতে রয়েছে। বৃষ্টি হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই আমরা সহযোগিতা চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছি।গত দুই দিনে ওই ধসের স্থানে যথেষ্ট পরিমাণ বালু ফেলা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বুধবার সকালে বৃষ্টির মধ্যে বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক লাগোয়া হোটেল সুন্দরবন এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের নির্মাণাধীন টুইন টাওয়ারের মাঝের ১৫ ফুট প্রশস্ত সড়কটি ধসে পাশের পাইলিংয়ের গর্তে চলে যায়।মাটি আলগা হয়ে বেইজমেন্টের একটি অংশের দেওয়াল গর্তে চলে যাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে ছয়তলা সুন্দরবন হোটেল। ওই গলির সামনের অংশে বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কেও ফাটল তৈরি হয়।প্রাথমিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত ১২ সদস্যের কমিটির সিদ্ধান্তে বুধবার রাত ১০টার পর থেকে ধসের স্থানে প্রায় ৫০০ ট্রাক বালু ফেলা হয়।বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে এসে ওই ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা এম এস কনস্ট্রাকশনস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রকল্প পরিচালক আখতারুল আলমের সঙ্গে কথা বলেন আনিসুল।এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মোটামুটিভাবে আমরা একটা সেইফ জোনে এসেছি। সারাদিন বালু ফেলতে পারলে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে যাব।কিন্তু বিকাল ৩টার দিকে বৃষ্টির লক্ষণ দেখা দিলে আবারও আখতারুল আলমের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র।
এ সময় তাকে ক্ষোভের সঙ্গে বলতে শোনা যায়, আপনারা যেভাবে কমিটমেন্ট দিয়েছেন, সেভাবে করতে পারেননি। এখন পর্যন্ত এক ট্রাক বালুও আসেনি।পরে এম এস কন্সট্রাকশন্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের মালিক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে ফোন করেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন আনিসুল।তিনি বলেন, যে পরিমাণ বালু ফেলার কথা ছিল, সেটা আপনারা ফেলেননি। এখন বৃষ্টিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়দায়িত্ব আমি নিতে পারব না, আপনাকেই নিতে হবে। সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের আনিসুল বলেন, আমি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাইব। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অলরেডি চিঠি পাস হয়েছে। আমি তাদেরকে এখানে ইনভলব করব।পরে প্রকল্প পরিচালক আখতার সকালে বালু না ফেলার কারণ ব্যাখ্যা করেন সাংবাদিকদের।
তিনি বলেন, সারারাত প্রায় ৪০০ ট্রাক বালু ফেলা হয়েছে। সকালে ১৫০ ট্রাক বালু ফেলার কথা থাকলেও তা করা যায়নি। রাতে যেসব শ্রমিক বালু ফেলেছেন তারা বিশ্রামে থাকায় এবং দিনে যানজটের কারণে বালু ফেলা সম্ভব হয়নি।ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার আগে আনিসুল সাংবাদিকদের বলেন, এটি বড় দুর্ঘটনা হতে পারত। এখনও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিশেষ করে হাতের বাঁ পাশে (কারওয়ান বাজার মোড় সংলগ্ন এলাকা) প্রেসার অনেক বেশি রয়েছে। এ কারণে সেখান থেকে বিল বোর্ড সরিয়ে দিচ্ছি।রাজউকের দায়িত্বহীনতার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে কি-না, জানতে চাইলে মেয়র বলেন, “আমি এই মুহূর্তে কাউকে দোষ দিতে চাচ্ছি না। রাজউক একটি কমিটি গঠন করেছে। আমরাও আজকে একটি কমিটি গঠন করব। কেন এ ঘটনা ঘটেছে- তা রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে।বৃষ্টি হলে কী ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমার মনে হয়, এখানে তিন লাখ সিএফটি বালু ফেলতে পারলে ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।