দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ মে: ঘোষিত জাতীয় প্রেসক্লাবের কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির পক্ষে সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।বৃহস্পতিবার নির্বাচন ছাড়াই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের একটি অংশ নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেছে। হঠাৎ করে ডাকা দ্বি বার্ষিক সভা থেকে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে শফিকুর রহমানকে সভাপতি ও কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের প্রাধান্য রেখে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছেন। তবে এই সাধারণ সভায় একশ’র কম সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকালে ঘোষিত এ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ ৬০ বছরের ঐতিহ্যলালিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকান্তিক আগ্রহ, আন্তরিকতা এবং অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর হয়নি। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবলমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই এক কমিটির কাছ থেকে আরেক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রথা রয়েছে। এর কোন রূপ ব্যত্যয় এবং লংঘন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং দেশের সাংবাদিক সমাজ কোন ভাবেই মেনে নেবে না। প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির গত ২৫ ও ২৬শে মে ২০১৫ অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ২৭ জুন ২০১৫ অতিরিক্ত সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভার আলোচ্য বিষয় দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্লাবের স্বত্বাধিকারী বা মালিক যেহেতু স্থায়ী সদস্যবৃন্দ, সুতরাং তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা এবং সংকট নিরসনের আন্তরিক প্রয়াসের উপর ব্যবস্থাপনা কমিটি সব সময়ই আস্থাশীল। আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠেয় অতিরিক্ত সাধারণ সভাতেই সংকট নিরসনের পন্থা বের করা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই অর্šÍবর্তীকালীন সময়ে অন্য কারো পক্ষে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা করার নৈতিক ও আইনগত কোনো এখতিয়ার বা বৈধতা নেই।
জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি সুষ্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, ২৮ শে মে ২০১৫ তারিখে কোনো দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারিত ছিল না। ইতিপূর্বে আহুত সভাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বাতিল করা হয়েছে এবং সাধারণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা সদস্যদের এর মধ্যেই অবহিত করা হয়েছে। কাজেই দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার নামে যারা তথাকথিত একটি সভা করেছেন তা গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লংঘন এবং ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। একই সঙ্গে তা জাতীয় গণতন্ত্র এবং প্রেস ক্লাবের স্বার্থ ও ঐক্য বিরোধী। এটা ক্লাবের অখ-তা এবং সাংবাদিক সমাজের বৃহত্তর ঐক্য বিনষ্ট করবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ক্লাব পরিচালনা করে ক্লাবের বৈধ কমিটি। ২৭ জুন ২০১৫ এর অতিরিক্ত সাধারন সভাই ক্লাবের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। তাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সকল স্থায়ী সদস্যের প্রতি আমাদের আবেদন ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও অখন্ডতা রক্ষার ব্যাপারে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করুন।
নির্বাচন নিয়ে জটিলতার মধ্যে আকস্মিকভাবে ডাকা এক সভায় ভোট ছাড়াই একটি কমিটি হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবে, তবে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা এই সভায় ছিলেন না।জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার এই সাধারণ সভায় ক্লাবের প্রায় এক হাজার সদস্যদের মধ্যে একশ জনও উপস্থিত ছিলেন না। তবে সভায় অনেকে ছিলেন, যারা প্রেস ক্লাবের সদস্য নন।নতুন কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাংবাদিক ইউনিয়নের উভয় অংশের এক দল নেতা রয়েছেন। সভায়ও দুই পক্ষের একাংশের উপস্থিতি ছিল।সভায় গঠিত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বিএনপি সমর্থক কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে।১৭ সদস্যের এই কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করা হয়েছে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলকে, সহসভাপতি হয়েছেন আমিরুল ইসলাম কাগজী, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলী ও ইলিয়াস খান।
কার্যনির্বাহী সদস্য করা হয়েছে- আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, সাইফুল আলম, শ্যামল দত্ত, শামসুদ্দিন আহমেদ চারু, মোল্লা জালাল, সর্দার ফরিদ আহমেদ, হাসান আরেফীন ও শামসুল হক দুররানী।দুপুরে প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সভায় নতুন এই কমিটি ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু।সভায় উপস্থিত ছিলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আমানুল্লাহ কবীর, গোলাম সারওয়ার, হাসান শাহরিয়ার, খন্দকার মনিরুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আলতাফ মাহমুদ, কাজী সিরাজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, কুদ্দুস আফ্রাদ।সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এই সাধারণ সভার কথা জানতেন না বলে অনেক সদস্য অভিযোগ করেছেন।বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের কেউ সভায় ছিলেন না। প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদও ছিলেন না সভায়।