দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ মে: চলন্ত মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গারো তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার আশরাফ ওরফে তুষার ও মাইক্রোবাস চালক লাভলুর ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত৷বৃহস্পতিবার সকালে ভাটারা থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) সাজ্জাদ হোসেন আদালতে আসামিদের হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান৷শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম অমিত কুমারদের আদালত তাদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷গত ২১ মে রাতে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গারো ওই তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়৷ ওই তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কের একটি শো-রুমে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন৷ এ ঘটনার পর শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন ওই তরুণী৷ মঙ্গলবার রাতে রাজধানী ঢাকা ও পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা থেকে তুষার ও লাভলুকে গ্রেফতার করে র্যাব৷
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব দাবি করে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুইজন তরুণীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে৷ ধর্ষক ৫ জন নয়, ২ জনই ছিল বলে জানায় র্যাব৷ তবে র্যাব বলে, তদন্তে সাপেক্ষে আরো বিস্তারিত জানা যাবে৷র্যাব জানায়, ধর্ষণের ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত৷ অনেক আগে থেকেই ধর্ষকরা ওই তরুণীকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে৷ ঘটনার দিন রাতে ওই গারো তরুণীকে উত্তরাতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসে তোলে৷ পরে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে৷ ধর্ষণের পর তাকে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে ফেলে রেখে যায়৷ ধর্ষণ করার সময় কুড়িল বিশ্বরোডের উপর দিয়ে কয়েকবার মাইক্রোবাসটি ঘোরানো হয় বলে জানায় র্যাব৷
ভাটারা থানার ওসি নূরুল মোত্তাকিন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়৷ বাদীপক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য নারী অধিকার সংগঠন নারীপক্ষ, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ওকালতনামা দাখিল করা হয়৷ তবে এসব সংগঠনের পক্ষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী আব্দুর রশিদ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন৷অন্যদিকে ওকালতনামা না দিলেও আদালতের অনুমতি নিয়ে দুই আসামির পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করেন আইনজীবী মো. শহীদুল ইসলাম ও ফারুক আহমেদ৷
তারা যুক্তি দেন, আসামিরা যেহেতু গ্রেপ্তার হওয়ার পর সব স্বীকার করেছে, আলামতও যেহেতু পাওয়া গেছে, সেহেতু তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আর যৌক্তিকতা নেই৷শুনানি শেষে বিচারক পুলিশের আবেদন অনুযায়ী দশ দিন রিমান্ডই মঞ্জুর করেন৷ যমুনা ফিউচার পার্কের এক বিক্রয়কর্মীকে গত ২১ মে রাতে ধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে তুষার ও লাভলুকে ঢাকা ও পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব৷ পরদিন তাদের সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তুষার ও লাভলু দুজনেই একটি বায়িং হাউজে গাড়িচালকের কাজ করেন৷ পরিকল্পনা এঁটে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন৷
ওই দুইজন র্যাবের কাছে দাবি করেছেন, তারা দুজনই পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত৷ আর কেউ ধর্ষণের সময় গাড়িতে ছিল না৷তবে ধর্ষণের ঘটনার পরদিন ওই তরুণীর পরিবার ভাটারা থানায় যে মামলা করে, তাতে আসামি করা হয় পাঁচজনকে৷মামলার এজাহারে বলা হয়, ২১ বছর বয়সী ওই গারো তরুণীকে কুড়িলে রাস্তা থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দেড় ঘন্টা ধরে ধর্ষণ করে পাঁচজন৷ পরে মেয়েটিকে উত্তরায় নামিয়ে দিয়ে তারা চলে যায়৷ পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া যায়৷আদালতে আসার পর শুনানি শুরুর আগে দুই আসামি সাংবাদিকদের বলেন, তারা র্যাবকে সত্যি কথাই বলেছেন৷ মাইক্রোবাসে তারা দুজনই ছিলেন, আর কেউ নয়৷ধর্ষণকারী আসলে কয়জন ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে কি না-এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেনি র্যাব৷বুধবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন,এটা এখনই বলা সম্ভব নয়৷ পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷