দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ মে: বিশ্বে স্কুলে পড়াশোনার মান নির্ণয়ের সবচেয়ে বড় তালিকায় এশিয়ার দেশগুলো প্রথম পাঁচটি স্থানে এসেছে। আর আফ্রিকার দেশগুলো এসেছে সবচেয়ে নিচে। সিঙ্গাপুর তালিকার শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে হংকং এবং তালিকার শেষে আছে ঘানা। খবর বিবিসির। ইউরোপের যেসব দেশের স্কুলগুলো সবচেয়ে ভাল ফল করছে তাদের মধ্যে অন্যতম ব্রিটেন তালিকার ২০তম স্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এসেছে ২৮তম স্থানে। ইউরোপে সহযোগিতা এবং উন্নয়ন সংস্থা ওইসিডি বলছে, ৭৬ টি দেশের স্কুলের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই তালিকা শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র প্রমাণ করেছে। ওইসিডির শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক অ্যান্ডেয়াস স্লাইশার বলেন, এই প্রথমবার আমরা প্রকৃত অর্থে বিশ্ব শিক্ষার গুণগত মানের একটি তালিকা তৈরি করেছি। তিনি বলেন, তালিকার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষায় এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সাথে ধনী-গরিব সব দেশ যাতে নিজেদের তুলনা করতে পারে, যাতে তারা নিজেদের সামর্থ্য এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে আরো সচেতন হয়। এর ফলে তারা দেখতে পারবে স্কুল শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি তাদের জন্য কী ধরনের অর্থনৈতিক ফল দিতে পারে, বলেন স্লাইশার।
তিনি জানান, তালিকার শীর্ষে থাকা সিঙ্গাপুরে নিরক্ষরতা ১৯৬০-এর দশকেও অনেক উঁচু ছিল। এতেই বোঝা যায়, কত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। এই গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটেনে প্রতি পাঁচজন স্কুলছাত্রের মধ্যে একজন মৌলিক শিক্ষা অর্জন না করেই স্কুল শেষ করে। ওইসিডির মতে, ব্রিটেনের শিক্ষার মান বৃদ্ধি করলে অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। ওইসিডির এই তালিকায় গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ওইসিডির তালিকা শুধু উন্নত দেশগুলা নিয়ে তৈরি করা হতো। এবার বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও এই তালিকায় আনা হয়েছে। বিশ্ব শিক্ষার মানের এই লিগ তালিকা পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ দেশ নিয়ে করা হয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে ইরান, দক্ষিণ আফ্রিকা, পেরু এবং থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক মানের কোন পর্যায়ে রয়েছে। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনামূলক খারাপ ফলাফলের প্রতিফলন ঘটেছে। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে অনেক ইউরোপীয় দেশের নিচে চলে গেছে, তাই নয়, ভিয়েতনামের অবস্থান এখন আমেরিকার ওপরে। ওইসিডির তালিকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল একত্র করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে একই মাপকাঠিতে বিচার করা হয়েছে। তালিকার প্রথম পাঁচটি স্থানে আছে এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং জাপান।
তালিকায় ৭৬টি দেশের মধ্যে শেষের পাঁচটি স্থানে আছে ওবামা, মরক্কো, হন্ডুরাস, দক্ষিণ আফ্রিকা আর ঘানা। সকল ১৫ বছর বয়স্কদের জন্য মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করলে ঘানার অর্থনীত ৩৮ গুন বৃদ্ধি পেতে পারে। স্লাইশার বলেন, এশিয়ার যে কোনো ক্লাসরুমে দেখবেন, শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের কাছ থেকে ভালো ফল প্রত্যাশা করে। এশিয়ার দেশগুলো অত্যন্ত দক্ষ শিক্ষকদের ক্লাসরুমে কাজ করতে উত্সাহিত করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে সকল ছাত্র ভালো শিক্ষক পাচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোনো দেশের শিক্ষার গুণগত মানই বলে দেবে সে দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে কতটুকু সফল হবে। স্লাইশারের মতে, দুর্বল শিক্ষানীতি এবং ব্যবস্থার ফলে অনেক দেশের অর্থনীত এক ধরনের স্থায়ী মন্দার মধ্যে আটকে থাকে। তিনি বলে, শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করলে অসাধারণ দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সাফল্য আসবে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, যদি ঘানা তার সকল ১৫ বছর বয়স্কদের মৌলিক শিক্ষা দিতে পারে, তাহলে দেশের অর্থনীতি ৩৮ গুণ বৃদ্ধি পাবে।