দৈনিকবার্তা-মিরসরাই, ২৭ মে: মিরসরাইয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কেঁচো সারের ব্যবহার। প্রশিক্ষণ,প্রযুক্তিও আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করে বসতবাড়ীর পাশে এই সার উৎপাদন করে অনেকেই ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। সার ব্যবহারের পর আশানুরুপ ফলন পাওয়ায় মিরসরাইয়ের অনেক গ্রামেই শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সারের উৎপাদন। মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দেওয়ানপুর গ্রামের বিজলা রানী নাথ স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা অপকা থেকে প্রশিক্ষণ ২০০০ কেঁচো এবং ৪টি রিং অনুদান হিসেবে পেয়ে শুরু করেন কেঁচো সারের উৎপাদন। নিজের সব্জী ক্ষেতে এই সার ব্যবহার করে তিনি ভালো ফল পেয়েছেন। এছাড়া তিনি প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে ১৫০ কেজি সার বিক্রি করেছেন। বিজলার মতো আরো অনেক নারী তাদের নিজেদের বাড়ির আঙ্গিনায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন কেঁচো সারের উৎপাদন।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের হাজীশ্বরাই গ্রামের বেলা রানী নাথ, বকুল বেগম, মিনতি রানী পাল, লক্ষী রানী পাল, ননী বালা পালসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৩০ জন নারী তাদের বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করে যাচ্ছেন। আর এই কাজে তাদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে অর্গানাইজেশন ফর দ্যা পুয়র কমিউনিটি এডভান্সমেন্ট অপকা নামের স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা। অপকার টেকনিক্যাল অফিসার (কৃষি) সাবাব ফারহান জানান, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ’র অর্থায়নে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কেঁচো সার উৎপাদন এবং এর ব্যবহার নিশ্চিতকরণকল্পে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছি। গ্রামীণ নারীদের এই কাজে উদ্ভুদ্ধ করে তাদের প্রশিক্ষণ এবং উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষিত নারীরা তাদের বাড়ীর আঙ্গিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেরা ব্যবহার করে তা অন্যত্র বিক্রিও শুরু করেছেন।
অপকার টেকনিক্যাল অফিসার (মৎস্য) গৌতম বিশ্বাস এবং টেকনিক্যাল অফিসার (প্রাণী সম্পদ) ডা. প্লাবন পাল বলেন, কেঁচো সার উৎপাদন করতে হলে ৪ টি রিং এ আধা শুকনা গোবর এবং ২০০০ কেঁচো দেওয়া হয়। দিনেরবেলায় রিংয়ের মুখ ঢেকে দিয়ে রাতে খুলে দেওয়া হয়। প্রথমবার কেঁচো সার উৎপাদন হতে ২৫-৩০ দিন সময় লাগে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। কেঁচো সার উৎপাদন শেষে রিং থেকে সার চালুনী দিয়ে চালা হয়। সার থেকে কেঁচো আলাদা হয়ে গেলে সেই কেঁচো পুণরায় গোবর দিয়ে উৎপাদন হয়। কেঁচো পর্যায়ক্রমে বংশবিস্তার করে। সার রোদে শুকিয়ে বস্তাবন্দী করে সংরক্ষণ করা হয়। ৩ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ থাকে এই সার। কেঁচো সার ব্যবহার হয় সব্জী, মাঠ ফসল চাষে। পুকুরে মাছের খাবার হিসেবে ও এই সার কাজে ব্যবহার করা যায়।
কেঁচো সার উৎপাদনকারী বিজলা রানী নাথ বলেন, আমরা অপকা থেকে প্রশিক্ষণ এবং উপকরণ নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে গ্রামের বিভিন্ন চাষীদের কাছেও এই সার বিক্রি করা হচ্ছে। এই সার ব্যবহারে ফলন বাজারের অন্যান্য সারের চেয়ে বেশি হয়।
অপকার নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, দাতা সংস্থা পিকেএসএফ’র সহযোগীতা নিয়ে অপকা কৃষি এবং প্রাণী সম্পদ ইউনিটের মাধ্যমে নানামুখী কার্য্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। কেঁচো সার উৎপাদনের ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রামীণ জনগণ এই সার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধন করতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো জানান, ২০১৪ সালে ২০ জন নারী প্রায় ১২০০ কেজি সার উৎপাদন করে। চলতি বছরে সোনাপাহাড়, ধূম, দেওয়ানপুর, মোবারকঘোনা, হাজীশ্বরাই, দক্ষিন সোনাপাহাড়, দূর্গাপুরসহ মোট ১০টি গ্রামের ৩০ জন নারী সদস্য সার উৎপাদন করছে। চলতি বছরে এই পর্যন্ত প্রায় ২০০০ কেজি সার উৎপাদন হয়। পুরো বছরে ৬০০০ কেজি সার উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, কেঁচো সারে জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন ও অন্যান্য উপযোগী উপাদান বেশী পরিমাণে থাকে। অন্যান্য সারের চেয়ে কেঁচো সার ২৫ শতাংশ কম ব্যবহার করে একই ফলন পাওয়া যায়। কেঁচো সার উৎপাদনে অপকার কারিগরীও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান মিরসরাইয়ের কৃষি খাতে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে মনে করেন। প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে সরকারীভাবেও কেঁচো সার উৎপাদন এবং কৃষি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।