দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ মে: মানবপাচার প্রতিরোধে ও পাচারকারী দমনে দেশের সাত বিভাগে সাতটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, মানব পাচার অপরাধ দমন নামের এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ইতিমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।বুধবার সচিবালয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী এসব কথা বলেন।সাগরে পথে মানব পাচার হয়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় কয়েকশ গণকবরে বাংলাদেশির লাশ পাওয়ার খবরের পরই সরকারের পক্ষ থেকে মানবপাচার ও দমন প্রতিরোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হলো।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আইনমন্ত্রী কথা বলার আগে তাঁর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেল। আনিসুল হক বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত আপাতত এ সংক্রান্ত মামলাগুলো জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে। বর্তমানে মানব পাচার নিয়ে ৫৫৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৭টি মামলার অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়েছে। ১২টি মামলার রায় হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মানবপাচার ও দমন প্রতিরোধে দেশের সাত বিভাগে সাতটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।বুধবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনে আমরা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠিয়েছি।মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মানবপাচার প্রতিরোধে সাত বিভাগে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুযায়ী বিশেষ এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে বলে আনিসুল হক জানান।
তিনি বলেন, সাত বিভাগে একটি করে ট্রাইব্যুনাল হবে। জেলায় জেলায় না হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মানবপাচারের মামলাগুলোর বিচার হলে ভিকটিকমদের বিচার পাওয়া সহজ হবে। যে জেলায়, যে গ্রামে, যে জায়গায় এসব অপরাধ হয় সেই জায়গায় বিচার হলে ভিকটিমরা সঠিক বিচার নাও পেতে পারে, আমি এর কারণটা এখন বলছি না।মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল চালানোর জন্য কোনো বিধি প্রণয়নের প্রয়োজন হলে তাও করা হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।মানবপাচার আইনে সংঘবদ্ধভাবে মানবপাচারের অপরাধে সর্বনিম্ন সাত বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মানবপাচার মামলার বিচারে এ আইনে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারককে নিয়ে যে কোনো জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথাও বলা আছে।তবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে আপাতত এ সংক্রান্ত মামলা সংশ্লিষ্ট জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হচ্ছে।আইনমন্ত্রী জানান, মানবপাচার নিয়ে বর্তমানে ৫৫৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৭টি মামলায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, বিচার হয়েছে ১২টি মামলার।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা আগে ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেলের সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। মৃত্যুদণ্ডের বিধান রদ করতে সুইডেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আহ্বানের বিষয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাইরে যেসব মামলার বিচার হচ্ছে, প্রয়োজন ছাড়া সেসব মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা’ না দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে সুইডেনের রাষ্ট্রদূতকে তিনি অবহিত করেছেন।একই সঙ্গে রাষ্ট্রদূতকে মন্ত্রী জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে রায় পেলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনেক আগেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তা মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের বলেছি। দেরি হওয়ার পেছনে কোনো কারণ নেই। মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে সবার মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে বলেও সুইডিশ রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন আনিসুল।বর্তমানে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ হলেও তা কমিয়ে ১৬ করার একটি পরিকল্পনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে।