দৈনিকবার্তা-বগুড়া ২৭ মে: বগুড়ায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কটি এখন পরিণত হয়েছে ধান শুকানোর চাতালে৷ ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই মহাসড়কে দূরপালস্নার কোনো যানবাহন চলাচল না করায় গত ৫ মাস ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে৷ মহাসড়কের আশপাশের বসবাসকারী বোরো মওসুমে ধান আর খড় শুকানোর কাজে ব্যবহার করছে সড়কটি৷
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশ ওই সড়ক দিয়ে দূরপালস্নার যানবাহন চলতে বাধা দেয়৷ তবে পুলিশের দাবি, দ্বিতীয় বাইবাস মহাসড়কে দূরপালস্নার যানবাহন চলতে পুলিশের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই৷ দেশের মধ্যে বগুড়া জেলা শহরই একমাত্র শহরে যেখানে বাইপাস সড়ক রয়েছে দুটি৷সূত্রমতে, ২০০০ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের আওতায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়৷ তবে ২০০৫ সালে প্রকল্পটির ব্যয় ৪৭ কোটি টাকায় উন্নীত করে অনুমোদন দেয়া হয়৷ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৯ সালে৷ কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থ শেষ হওয়ায় কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়৷ পরে আরো ৩ কোটি ২২ লাখ টাকায় নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে প্রায় চার বছরের মাথায় প্রকল্পের কাজ শেষ হয়৷ এর পরপরই সড়কটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷ শহরের দুইপাশ দিয়ে ১৪ ও ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি বাইপাস শহরের ব্যাসার্ধকেও করেছে দীর্ঘ৷
প্রথম বাইপাস মহাসড়কের পাশে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বেশ কয়েকটি বাস স্টপেজ থাকায় দূরপালস্নার বাসগুলো দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক দিয়ে যেতে চায় না৷ এ কারণে প্রথম বাইপাস মহাসড়কে ১৪ কিলোমিটার জুড়ে যানজট মোকাবেল করতে ট্রাফিক পুলিশ এবং পরিবহন শ্রমিকদের হিমশিম খেতে হতো৷ পরে প্রশাসন ও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বৈঠকের সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী মালবাহী ট্রাক ও উত্তরবঙ্গের আট জেলা থেকে ছেড়ে আসা কোচগুলো দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে৷ এতে প্রথম বাইপাস মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে যায়৷চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল অবরোধ শুরু হলে যানব্হানের সংখ্যা কমে যায়৷ এ কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়৷
গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে হরতাল অবরোধ না থাকায় শুরু হয়েছে যানবাহন চলাচল৷ তবে এরপরেও পুলিশ দ্বিতীয় বাইপাস দিয়ে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিবহন শ্রমিকদের৷ এ কারণে ১৬ কিলোমিটার মহাসড়কটি ফাঁকাই পড়ে থাকে৷ আর এ সুযোগে আশেপাশের মানুষ ধান ও খড় শুকানোর কাজে ব্যবহার করছে মহাসড়ক৷ আর সব ধরনের যানবাহন প্রথম বাইপাস দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মহাসড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে৷বগুড়া মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, ‘হরতাল অবরোধ নেই তারপরেও নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে যান চলাচল করতে দেয় না৷ মালবাহী ট্রাকগুলো দ্বিতীয় বাইপাস দিয়ে চলাচল করলে যানজট কমে যেতো৷ একই ধরনের অভিযোগ মহাসড়কে চালাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের৷’
বগুড়া জেলা পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ সঠিক নয় উলেস্নখ করে বলেন, ‘এখন দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক উন্মুক্ত৷ পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই দাবি করে বলেন, এরপরেও যান চলাচল না করা পরিবহন শ্রমিকদের বিষয়৷’বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়ক সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য অনেক আগে থেকেই উন্মুক্ত৷ তারপরেও যানবাহন চলাচল না করলে সড়ক বিভাগের কিছু করার নেই৷’