দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ মে: প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে অধিকতর শক্তিশালী ও আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের প্রয়াসের কথা উল্লেখ করে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, বাংলাদেশ আগামীতে যুদ্ধবিমান (ফাইটার প্লেন) তৈরি করবে।প্রধানমন্ত্রী বুধবার তেজগাঁওয়ে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার-এ এল-৪১০ পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমানের অন্তর্ভূক্তি অনুষ্ঠানে বলেন, আমি আশা করি, আমরা আগামীতে নিজেদের উদ্যোগে যুদ্ধবিমান তৈরি করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।তিনি বলেন, শিগগিরই রাশিয়া থেকে লোন প্রোটোকলের আওতায় ওয়াই এ কে-১৩০ অ্যাডভান্সড জেট ট্রেইনার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্র্ভূক্ত হতে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে রাশিয়া থেকে তিনটি এমআই-১৭১ এস এইচ হেলিকপ্টার ক্রয় করা হয়েছে।একই প্রোটোকলের আওতায় সম্প্রতি আরো ৫টি এমআই-১৭১ এস এইচ হেলিকপ্টারের মধ্যে ৪টি অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই আরেকটি অন্তর্ভূক্ত হবে। এছাড়া ১টি এমআই-১৭১-ই হেলিকপ্টার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন হয়েছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কর্মকান্ড গতিশীল করতে বিমান বাহিনীতে দুটি আগাস্তা ওয়েস্ট ল্যান্ড হেলিকপ্টার সংযোজিত হতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণ ও এই বাহিনীর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৌশলগত দিক থেকে একটি সুদৃঢ়, শক্তিশালী ও কার্যকর বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী অনুস্নস্থল পৌঁছলে বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে গার্ড-অব-অনার প্রদান করে।তিনি অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং উইং কমান্ডার রাশেদ আহমেদ সিদ্দিকের হাতে অন্তর্ভূক্তি অর্ডারের আদেশ তুলে দেন।
পরে তিনি চেক প্রজাতন্ত্রের তৈরি ৩টি নতুন এল-৪১০ পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমানের অন্তর্ভূক্তি উপলক্ষে কেক কাটেন এবং একটিতে আরোহণ করে এর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া,নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মুহাম্মাদ ইনামুল বারী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান এমপি এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মুহাম্মাদ ইনামুল বারী ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার-এর এয়ার অফিসার্স কমান্ডিং এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কক্সবাাজারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমান ঘাঁটি ও বিমান প্রতিরক্ষা রাডার প্রতিষ্ঠা করেছে। এক্সক্লোসিভ ইকোনোমিক জোনের আকাশসীমা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে এটি স্থাপন করা প্রয়োজন ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, পাহাড়কাঞ্চনপুরে বিমান ঘাঁটিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার স্থাপন করা হয়েছে এবং সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ককপিটসহ বিভিন্ন ট্রেনিং এয়ারক্রাফ্ট ক্রয় করা হচ্ছে।তিনি বলেন, এর আগে আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য পিটি-৬ প্রাথমিক প্রশিক্ষণ বিমান এবং কেএইটডব্লিউ জেট প্রশিক্ষণ বিমান ক্রয় করেছি।প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদেরকে দেশের আকাশসীমার অতন্দ্র প্রহরী এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও শৃঙ্খলার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এয়ার ফোর্সের মতো বাহিনীতে পরিশ্রম, পেশাগত দক্ষতা ও সততার কোন বিকল্প নেই।প্রধানমন্ত্রী বলেন,মনে রাখবেন সুপ্রশিক্ষিত, পেশাদার ও দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত সাহসী বৈমানিক হিসেবে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কোন আকাশসীমায় আপনাদের সুদৃপ্ত বিচরণ আমাদের জাতিগত উৎকর্ষেরই পরিচয় বহন করে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকসহ অসংখ্য বীরের ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। তাদের অনুগামী হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করবে।প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, আজ নতুন তিনটি এয়ারক্রাফ্ট অন্তর্ভুক্তির ফলে বিমান বাহিনীর উদ্ধার অভিযান, আকাশ পথে টহল ও জরিপ এবং প্যারাট্রুপিংসহ বিমান বাহিনীর সার্বিক পরিবহন ক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছবে।
প্রধানমন্ত্রী এল-৪১০বিমান উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিমান বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে আশা প্রকাশ করে বলেন, মনে রাখতে হবে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এই বিমান কেনা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মেয়াদকালে তাঁর সরকার বিমান বাহিনীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছে। তিনি বলেন, ২০০০ সালে বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের সর্বাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান, মি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর একটি শক্তিশালী, দক্ষ ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে বিমান বাহিনীকে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়।তিনি বলেন, এফ-৭ বিজি-১ যুদ্ধবিমান ইতোমধ্যেই আন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এই প্রথমবারের মতো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এফ-৭ যুদ্ধবিমানসহ সব ধরনের বিমান, রাডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহোলিং-এর লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। ইতোমধ্যেই মেইনটেনেন্স, রিপেয়ারিং এন্ড ওভারহোলিং (এমআরও)প্ল্যান্টে এফ-৭ যুদ্ধবিমানের ওভারহোলিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এমআই সিরিজ হেলিকপ্টার ওভারহোলিং-এর জন্য এমআরও ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ সকল স্থাপনা বিমানবাহিনীর স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমরা বিদেশী বিমানবাহিনীর বিমান ও হেলিকপ্টারের ওভারহোলিংয়ের কাজও সম্পন্ন করতে পারবো। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি নতুন খাত সৃষ্টি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনী এখন দেশবাসীর আস্থার একটি প্রতীক হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কন্টিনজেন্ট এখন কঙ্গো ও মালিতে জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করছে। ১১০ সদস্যের অপর একটি কন্টিনজেন্ট এবং তিনটি হেলিকপ্টার জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করতে হাইতিতে যাচ্ছে।এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর আরো অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে খুবই সক্রিয় রয়েছে।দুর্যোগ মোকাবেলায় বিমানবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তারা উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে যত দ্রুত সম্ভব ছুটে গিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।