দৈনিকবার্তা-ঢাকা,২৬মে : আগামী ৬ জুন দু‘দিনের সরকারি সফরে ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ৬ ও ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে সফর করবেন বলে মঙ্গলবার প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।এর আগে বিভিন্ন সূত্রে তার সফরের তারিখ সম্পর্কে জানা গেলেও এই প্রথম সরকারিভাবে মোদির সফরের তারিখ ঘোষণা করা হল। বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর।সফরকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর বক্তৃতা দেবেন নরেন্দ্র মোদি।এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করবেন তিনি।
এদিকে,খুব দ্রুতই আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে জানালেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রভাবশালী বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং।পাশাপাশি চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতীয় অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সহযোগিতা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।মঙ্গলবার দুপুরে রাজনাথ সিংয়ের বরাত দিয়ে এমন সংবাদ পরিবেশন করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আইবিএন।উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে টানাপড়েন চলে আসছে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন নরেন্দ্র মোদী।
ইতোমধ্যেই চুক্তি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে একমত হতে দুই দেশই অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে বলে সরকারের উচ্চস্তরের সূত্রগুলো জানিয়েছে ।জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা।তবে তিস্তা চুক্তির প্রধান বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মূলত তার প্রবল বাধাতেই আলোর মুখ দেখছে না তিস্তা চুক্তি।এ পরিস্থিতিতে রাজনাথ সিংয়ের মঙ্গলবারের ঘোষণা তিস্তা চুক্তি হওয়ার ব্যাপারে ভারতের তরফে ইতিবাচক বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।উল্লেখ্য, গত বছর নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রহ প্রকাশের পর থেকেই তার সফর আয়োজনের ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক মাস আগে মোদির ঢাকা সফরের ব্যাপারে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয় নয়াদিল্লি। সে সময় দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও জুন মাসেই এই সফর আয়োজনের ব্যাপারে সম্মত হয় উভয় পক্ষ।মূলত ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়ার প্রেক্ষিতে দ্বার খুলে যায় মোদির সফরের।বর্তমানে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই প্রেক্ষিতে মোদির ঢাকা সফর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।বিশেষ করে মোদির সফরেই তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে একটা ফয়সালা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে ভারতের সরকারি তরফে।খুব শিগগিরই তিস্তা চুক্তি হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা রাজনাথ সিং। তার উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম।এছাড়া মোদির সফরেই দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ প্রটোকল নবায়ন, সামুদ্রিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, দুই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হবে।পাশাপাশি বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৬ ও ৭ জুন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে সরকার আশা করছে। গত বছর মে মাসে ভারতের ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে উদ্যোগী হওয়া মোদী কয়েকবার বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন।গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের অধিবেশনে এবং নেপালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান।
এই এক বছরে প্রতিবেশী দেশ ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া; দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল; উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা; ইউরোপের দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়া সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।কিন্তু বহু আলোচিত স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ঝুলে থাকা চুক্তির মতো অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা না হওয়ায় মোদীর আর বাংলাদেশে আসা হচ্ছিল না।
গত ৬ ও ৭ মে ভারতীয় রাজ্যসভা ও লোকসভায় সংবিধানের সংশোধনীর মধ্য দিয়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের বাধা কাটে।আর আটকে থাকা তিস্তা চুক্তির আলোচনাতেও যে গতি এসেছে, গত কয়েক দিনে তা স্পষ্টই জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোদী এই সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গেও তার সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর বক্তৃতা দিতে পারেন এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ করতে পারেন বলেও আলোচনা রয়েছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই গণমাধ্যমে আলোচনা চলছে।
গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহুপক্ষীয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব সুজাতা মেহতাও বলেছিলেন, মোদীর সফরে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে।সুজাতা মেহতা ওই সময়ই দ্বিতীয় মেয়াদে সহজ শর্তে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দিয়ে যান। এর ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের একটি খসড়াও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে।ওই ঋণচুক্তি চূড়ান্ত হওয়া ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি ও নৌ প্রটোকল নবায়নসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় মোদীর সফরে আলোচনার টেবিলে থাকতে পারে।