দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ মে: হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তির সাত মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে জামিন দিয়ে মামলার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দিয়েছে হাই কোর্ট।মঙ্গলবার সাতটি আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি মো. নিজামুল হক ও বিচারপতি মো. ফরিদ আহমদ শিবলীর বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেয়।তবে একই অভিযোগে ঢাকা ও গাইবান্ধার দুটি এবং চট্টগ্রামের দুটি মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা লতিফ।
আদালতে লতিফের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।আদেশের পর জ্যোতির্ময় জানান, চলতি মাসের শুরুতে মামলা বাতিল ও জামিন চেয়ে আলাদাভাবে এসব আবেদন করা হয়েছিল।আদালত শুনানি করে ঢাকার ছয়টি ও নারায়ণগঞ্জের একটি মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর জামিন মঞ্জুর করে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।
মামলাগুলো কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও দিয়েছে আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।এর আগে ঢাকার হাকিম আদালত ও জজ আদালত এসব মামলায় লতিফের জামিন নাকচ করেছিল।এর মধ্যে ছয়টি মামলা ঢাকার সিএমএম ও একটি মামলা নারায়ণগঞ্জের আদালতে দায়ের করা হয়েছিল। গত রোববার (২৪ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা ঢাকার সাত মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করলে হাইকোর্টে আসেন লতিফ সিদ্দিকীর আইনজীবীরা। ওই সাতটির মধ্যে ছয়টিতে এবং নারায়ণগঞ্জের এক মামলায় জামিন পেলেন তিনি।
২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে টাঙ্গাইল সমিতির এক মতবিনিময় সভায় লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরবিরোধী। হজে যে কতো ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গেছে। তাদের কোনো কাম নাই। তাদের কোনো প্রোডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন করতেছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা নিয়ে ওখানে দিয়ে আসছে। অ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের ৫ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে তিনি বলেন, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করল, এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করল যে, তার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে একটা আয়ের ব্যবস্থা হবে।
লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও কটূক্তি করেন। তার এ বক্তব্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় ঢাকার সিএমএম আদালতে বিভিন্ন ব্যক্তি মোট সাতটি মামলা দায়ের করেন।তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়।
২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ভারত থেকে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। দেশে ফেরার পর পরই ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল তার গ্রেফতার দাবি জানায়। ২৬ নভেম্বর ধানমণ্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করার পর লতিফ সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠানো হয়।হাই কোর্টের শুনানিতে লতিফের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী দেশের বাইরে করা অপরাধে দেশে মামলা করতে হলে আগে সরকারের অনুমোদন লাগে। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। যেভাবে মামলা দাখিল করা হয়েছে তাও আইনসম্মত হয়নি।তাছাড়া মামলা করতে হলে সুস্পষ্ট অভিযোগ আনার নিয়ম থাকলেও এসব মামলায় তা হয়নি বলে শুনানিতে যুক্তি দেন আইনজীবীরা। তারা বলেন, সংবিধানের ৩৫ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে একই অভিযোগে একাধিক মামলাও চলতে পারে না।গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে মন্তব্য করেন তখনকার টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী লতিফ। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়।বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের আন্দোলনের হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে লতিফকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ থেকে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়।