Rajshahi City Development News 25-5-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ২৫ মে: রাজশাহী মহানগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাসত্মবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে৷ সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে এ প্রকল্পগুলো গ্রহন করা হয়েছিল৷ রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) প্রশাসনে অচলাবস্থার কারণে থেমে গেছে ওই প্রকল্পগুলো বাসত্মবায়নের প্রক্রিয়া৷ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র হওয়ার পর তার রাজনীতিতে বেশী মনোযোগি হওয়া, গত প্রায় ৫ মাস থেকে আত্মগোপনে থাকা এবং বরখাসত্ম হওয়ার কারণে রাসিকে অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় অনুমোদন পাওয়া মেগা প্রকল্পগুলো বাসত্মবায়নে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে৷

রাসিক সূত্র মতে, একনেকে অনুমোদন হওয়া ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায় সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আমলেই৷ আর সাবেক মেয়রের গ্রহন করা অপর প্রায় ২০০ কোটি টাকার অনুমোদন পায় বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের আমলে৷ সর্বশেষ গত ১৯ মে একনেকে অনুমোদন পায় ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর তালাইমারী থেকে কল্পনা সিনেমা হল পর্যনত্ম সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি৷ ১২ সালে এ প্রকল্পটি গ্রহন করেছিলেন সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন৷এছাড়াও প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে কোর্ট হয়ে লিলি সিনেমা হল মোড় পর্যনত্ম সড়কটি অনুমোদনের এক বছরেও বাসত্মবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি৷ অনুমোদন হয়েও বাসত্মবায়ন প্রক্রিয়া আলোর মূখ দেখেনি নওদাপাড়া থেকে বুধপাড়া হয়ে নাটোর রোড পর্যনত্ম সড়ক, রাবি ও রুয়েটের মধ্য দিয়ে খড়খড়ি পর্যনত্ম সড়ক নির্মাণ কাজ৷ এসব সড়কটি নির্মাণে কোনো বাধা না থাকলেও এখন পর্যনত্ম ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করতে পারেনি রাজশাহী সিটি করপোরেশন৷

সূত্রমতে, নগরীর উপশহর মোড় থেকে সোনাদীঘির মোড় এবং মালোপাড়া হয়ে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যনত্ম সড়ক প্রশসত্মকরণ প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়৷ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি ১৬ লাখ টাকা৷ একনেকের অনুমোদনের পর ২০১৩ সালে এ প্রকল্পটি বাসত্মবায়নে ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সরকার৷ এ প্রকল্পটি বাসত্মবায়নে জমি অধিগ্রহনের জন্য সিটি করপোরেশন জেলা প্রশাসনকে ৬৩ কোটি টাকা দেয়৷ কিন্তু তদারকির অভাবে এ প্রকল্প বাসত্মবায়নে কোন অগ্রগতি নেই৷আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক থেকে মোহনপুর হয়ে রাজশাহী-নাটোর সংযোগ সড়কটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর৷ এ প্রকল্পটি বাসত্মবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২২ কোটি ৯১ লাখ টাকা৷ ওই প্রকল্পটি বাসত্মবায়নে প্রথম পর্যায়ে সরকার সাড়ে ৩২ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে৷ কিন্তু এখনো আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি বাসত্মবায়নের প্রক্রিয়া৷ ফলে সময়মত বাসত্মবায়ন করতে না পারায় প্রকল্পগুলোর ব্যয় বাড়ছে৷ যা প্রকল্পগুলো বাসত্মবায়নে নতুন করে জটিলতা দেখা দিতে পারে৷

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ২০১১ সালের হিসাবে প্রকল্পগুলোর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু এখন পর্যনত্ম কাজ শুরু করতে না পারায় ব্যয় বাড়ছে৷ প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করতে আরও দেরি হলে ব্যয় আরও বাড়বে৷ সব প্রক্রিয়া শেষ করে দরপত্র আহ্বান করতে যে সময় প্রয়োজন, তাতে প্রতিটি প্রকল্পে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হতে পারে৷রাসিক সূত্রমতে, সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তার আমলের পাঁচ বছরে রাজশাহী মহানগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা প্রকল্প গ্রহন করেন৷ এর মধ্যে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়৷ একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বাসত্মবায়ন করেন৷ বাকি প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে সাবেক মেয়রের আমলে অনুমোদন পাওয়া ১৩৭ কোটি টাকার ড্রানেজ প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করেন বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল৷ সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়াদকালের শেষ দিকে ২০১২ সালের শেষে এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল৷ সিটি নির্বাচনের কয়েক মাস আগে প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় বাসত্মবায়ন কাজ শুরু করতে পারেননি সাবেক মেয়র৷

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের রাজনীতি করে৷ তাই গত সাড়ে ছয় বছরে আওয়ামী লীগ সরকার রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়নে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে৷ যা সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের চেষ্টায় সম্ভব হয়েছে৷তিনি বলেন, উন্নয়নকাজ করতে জনপ্রতিনিধিদের আগ্রহ প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু রাসিকের বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নগরীর উন্নয়নে কোন আগ্রহ আছে বলে গত দুই বছরেও মনে হয়নি৷ সে কারণেই অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো বাসত্মবায়নে অনিশ্চয়তায় পড়েছে৷রাসিকের অনুমোদন হওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে জানতে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে যাওয়া যায়নি৷ যদিও ৭ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র বুলবুলকে সাময়িকভাবে বরখাসত্ম করে৷ তবে এর আগে গত জানুয়ারি থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন৷ বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের মধ্যে নাশকতার ১৭টি মামলায় মেয়র বুলবুল আসামী রয়েছেন৷ এর মধ্যে আদালতে দাখিল করা পুলিশের চারটি মামলার চার্জসীটেও আসামী রয়েছেন তিনি৷